1. coxsbazarekattorbd@gmail.com : Cox's Bazar Ekattor : Cox's Bazar Ekattor
  2. coxsekttornews@gmail.com : Balal Uddin : Balal Uddin
জলদস্যুতা জলে,টাকা আদায় স্থলে: ফের শুরু হয়েছে গভীর সমুদ্রে ফিশিং বোটে, জলদস্যুদের হামলা আতংকে জেলেরা - Cox's Bazar Ekattor | দৈনিক কক্সবাজার একাত্তর
শুক্রবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:১০ পূর্বাহ্ন

জলদস্যুতা জলে,টাকা আদায় স্থলে: ফের শুরু হয়েছে গভীর সমুদ্রে ফিশিং বোটে, জলদস্যুদের হামলা আতংকে জেলেরা

  • আপলোড সময় : বুধবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২২
  • ১০০ জন দেখেছেন
জাফর আলম রানা:

কক্সবাজার বঙ্গোপসাগরে আবারও শুরু হয়েছে গভীর সমুদ্রে ফিশিং বোটে জলদস্যুদের হামলা ও দস্যুতা। মাছ ধরার মৌসুম শুরু হলেই বাড়ে এই তৎপরতা। জেলেদের জিম্মি করে লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করে ডাকাতরা। জলদস্যুতাকে পেশা হিসেবে নিয়ে যুগের পর যুগ এমন অপরাধ চলে আসছে বঙ্গোপসাগরের বুকে। সাগরের পশ্চিম অংশে এসবের প্রকোপ বর্তমানে অপেক্ষাকৃত কম থাকলেও বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার জেলার মহেশখালী,কুতুবদিয়া, সন্দ্বীপ, সোনাদিয়া চ্যানেলের গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের ওপর দস্যুদের অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটে এরিমধ্যে বেশ কয়েকবার।দস্যুরা ইলিশ ধরার মৌসুমকেই বেশি টার্গেট করে থাকে মাছ ধরতে যাওয়ার স্থানীয় জেলেরা জানান। তারা জেলেদের জিম্মি করে মাছসহ বোট নিয়ে চলে যায় নিরাপদ স্থানে। সেখান থেকে বোড মালিকদের খবর দিয়ে আদায় করে মোটা অঙ্কের অর্থ। উল্লেখ্য, দেশের সর্ব দক্ষিণে সেন্টমার্টিন থেকে শুরু করে কক্সবাজার, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, হয়ে উপকূল পর্যন্ত এলাকার মাঝিমাল্লারা গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে।এদিকে কোস্টগার্ড জানিয়েছে, তাদের দায়িত্ব কর্ণফুলীর মোহনা থেকে সাঙ্গু হয়ে মহেশখালীর মাতারবাড়ি এবং সন্দ্বীপ সংলগ্ন সাগর এলাকাজুড়ে। অপরদিকে, নৌবাহিনী তাদের নিয়মিত টহল চালায় বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশী জলসীমা অংশে। এরমধ্যে যে গভীর সমুদ্রের বিস্তীর্ণ এলাকা রয়েছে সেখানে মূলত বাংলাদেশী মাঝিমাল্লারা সম্পূর্ণভাবে অরক্ষিত এলাকায় মৎস্য আহরণ করে থাকে। জলদস্যু বাহিনী সুযোগ বুঝে লুটে নেয় আহৃত মৎস্য, অর্থ এমনকি মাঝে মাঝে বোটসহ মাঝিমাল্লাদের অপহরণ করে জিম্মি করে অর্থ আদায় করে থাকে। মাছ ধরার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহেশখালী ও বাঁশখালীতে দু’দফায় জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের ঘটনা রয়েছে। ধারণা করা হয়েছিল। মহেশখালী ও বাঁশখালীসহ দু’দফায় মোট ৭৭ জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবার জন্য সরকার তাদের প্রণোদনাও দিয়েছে। এদিকে, সাগরে জলদস্যু নেই বলে প্রচার হচ্ছে। অথচ তা পুরোপুরি সঠিক নয় জানান মহেশখালী স্থানীয় জেলেরা।বরং নীরবে শুরু হয়েছে এই দস্যুতা। জন্ম নিয়েছে নতুন নতুন জলদস্যু বাহিনীর। অপরদিকে, সমুদ্র বিজয়ের পর ভারত এবং মিয়ানমার থেকে যে বিশাল অংশ বাংলাদেশের অনুকূলে এসেছে সেখানকার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। মাঝিমাল্লাদের সূত্রে জানানো হয়েছে, ভারতীয় সীমানা সংলগ্ন নতুন অর্জিত জলসীমায় গেলে সে দেশের জেলেরা হামলে পড়ে। বাংলাদেশী মাঝিমাল্লাদের বোটসহ সে দেশের সীমানা রক্ষায় নিয়োজিত সংস্থার হাতে হস্তান্তর করে। এছাড়া মিয়ানমার থেকে অর্জিত জলসীমায় যাওয়াও যায় না। বাংলাদেশী বোট দেখলেই সে দেশের নৌবাহিনীর সদস্যদের পক্ষ থেকে গুলিবর্ষণও করা হয়। এর ফলে নতুন অর্জিত জলসীমায় এখন পর্যন্ত স্বাধীনভাবে বাংলাদেশী জেলেদের মৎস্য আহরণ অসম্ভব একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন ও কার্তিক মাস হলো বড় আকারের ইলিশের মৌসুম। এই সময় নিষেধাজ্ঞার ফলে প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকে মাছ আহরণ। এরপর যখন সাগরে মাছ ধরা শুরু হয় তখন টার্গেট করে জেলেদের থেকে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয় জলদস্যু বাহিনী। বর্তমানে সমুদ্র সৈকত এলাকায় দস্যুদের রাজত্ব বেশি।মহেশখালী কুতুবদিয়া চ্যালেনে  দস্যুদের বর্তমান আস্তানা বলেন উল্লেখ করেন স্থানীয় জেলেরা। সেখানের অগণিত বাহিনী এখন বঙ্গোপসাগর উপকূল দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের দৌরাত্ম্যে স্থানীয় জেলেরাই আতঙ্কে। গত একসপ্তাহে বেশ কয়েকবার জলদস্যু বাহিনী কবলে পড়েছে  স্থানীয় জেলেরা শাহাবুদ্দিন, রাজ্জাক, হারুন সও,রহিম সওদাগরের মাছ ভর্তি ট্রালার ডাকাতি করে নিয়ে যায় এসব বাহিনী। এসব বাহিনীতে সদস্য রয়েছে ১০ থেকে ২০ জন।। শুধু তাই নয়, এসব বাহিনী ইয়াবার চালান পারাপার করতে বিভিন্ন বোটের মাঝিদেরও বাধ্য করছে। চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ভোলা, বাগেরহাট, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেরা গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে যায়। এসময় ফিশিং বোটগুলোতে থাকে লাখ লাখ টাকার মালামাল। জলদস্যুরা মাছ লুটের পাশাপাশি জ্বালানি তেল, জাল, মুদির বাজার, বরফও লুটে নেয়। পরে কিছু নিজেদের ব্যবহারের জন্য রেখে বাকিসব স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে।একটি ফিশিং বোট কমপেক্ষ ১৫ দিনের জন্য সাগরযাত্রা করে। বোটগুলোতে ১৫ দিনের জন্য ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার খাদ্য ও জ্বালানি মজুদ থাকে। প্রতি বোটে কমপক্ষে ১৫ ব্যারেল তেল থাকে।তবে জলদস্যুরা জেলেদের আহরিত মাছ, বোটের ব্যাটারি, তেল এবং মুদির বাজার লুট করে নিয়ে যায়।কক্সবাজার জেলা ফিশারিঘাট বোঢ মালিক সমিতির একজন সদস্য বলেন, ৬৫ বন্ধের আগে আমার বোটের মাঝিকে গলায় রাম দা ধরে কল দেয় আমাকে। তারা ৫ লাখ টাকা দাবি করে এবং কথা দেয় যে, বোটের কিছু নেবে না। প্রায় পাঁচদফা যোগাযোগ ও দফারফায় দুই লাখ টাকা দিতে হয়েছে এসব টাকা বিকাশ ও নগদ এ্যাপে দিতে হয়। তাও তাদের সময় ও ইচ্ছে অনুযায়ী। তাদের একাধিক সোর্স এসব টাকা গ্রহণ করে। পরে মাঝি কল করে জানায়,বোটের মাছ, ব্যাটারি, তেল নিয়ে গেছে। তারা স্বাভাবিকভাবে মাছ শিকারের অভিনয় করে বোটের কাছে ভিড়ে, পরে লাফ দিয়ে উঠে পড়ে। তাছাড়া তাদের বিষয়ে অভিযোগ করলে একটা বোটও সাগরে রাখবেনা হবে হুমকি দে। মাঝিমাল্লাদের হামলা ও হত্যার পাশাপাশি বোট ডুবিয়ে দেয়ার ঘটনা বেশ পুরনো। এদিকে বোট মাঝিদের পক্ষে জানানো হয়েছে  জলদস্যুরাই বর্তমানে বেশি বেপরোয়া। জলদস্যুরা সূর্যাস্তের পরই হামলে পড়ে। গভীর রাতে কিংবা সকালে তাদের দেখা মেলে না। মহেশখালী ও কুতুবদিয়া গভীর চ্যালেনের জেলেরা বর্তমানে আতঙ্ক। সোনাদিয়ারসহ বিভিন্ন জায়গায় দস্যুরা সক্রিয়। তবে বেশি আতঙ্ক কুতুবদিয়া পর্যন্ত।উপকূল মহেশখালীর স্থানীয় জেলে হারুন জানান তারা লুটপাট করে নিয়ে যায় মালামাল। লুটে বাধা দিলে ডাকাতরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে। এছাড়া বোটে থাকা অন্যান্য জেলেকেও বেদম মারধরও করে দস্যুরা।বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে বোট মালিকদের কাছ থেকে জলদস্যুরা টাকা আদায় করে। এসব টাকা তারা ১০ থেকে সর্বোচ্চ ২০ জনের মাধ্যমে হাত বদল করে নেয়। দিনের বিভিন্ন সময় তারা ভিন্ন ভিন্ন নম্বর দিয়ে টাকা সংগ্রহ করে। এজন্য রয়েছে তাদের আলাদা বাহিনী। জলদস্যুরা বেশিরভাগই বাটন মোবাইল ব্যবহার কওে, তাও বাহিনীর প্রধানের সহযোগী। বাহিনী প্রধান কোন ধরনের মোবাইলে যোগাযোগ করে না। বোট ফিরে পেতে মালিকরা প্রথমে বাহিনীর সর্বশেষ মাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তা দফারফায় নির্ধারিত হলে তারপর সেই মেসেজ ও টাকা একাধিকজন হয়ে পৌঁছায় দলনেতার কাছে। আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে।যদি কেউ অভিযোগ করে তাহলে ওই বোটের মাঝিমাল্লারা ফের আক্রমণের শিকার হয়। তাই ভয়েও কেউ মুখ খুলে না।মহেশখালী কুতুবদিয়া  থেকে গভীর সমুদ্র পর্যন্ত তাদের বিচরণ। জলদস্যুতা জলে, টাকা আদায় স্থলে। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন চলতি মৌসুমে শত শত জেলেরা জানিয়েছেন। স্থানীয় জেলে রাজ্জাক জানান ২৫ বছর এই পেশায় তাই তাদের বিরুদ্ধে বললে কী হবে। জীবন বাঁচাতে ও বোট ফিরে পেতে মালিকরা দস্যুবাহিনীকে প্রতিনিয়ত টাকা দিচ্ছি। নির্যাতনের শিকার হলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেনা। মহেশখালী, সোনাদিয়া, কুতুবদিয়াসহ বঙ্গোপসাগরের গভীর চ্যানেলে বিভিন্ন এলাকা থেকে জড়ো হওয়া জলদস্যুদের হঠাৎ তৎপরতায় সাগরে আবারও আতঙ্ক। টাকা না দিলে ট্রলার ফুটো করে হামলা করছে। ফলে সমুদ্রে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে কক্সবাজার ফিশিং বোটের একাধিক মালিক বলেছেন, বর্তমানে মহেশখালী ও সোনাদিয়ার ৬টি গ্রুপের মাধ্যমে ১২টি উপগ্রুপ আবার সক্রিয় হয়েছে। লোহা, রাম দা, চাপাতি দিয়েই লুট করছে মালামাল। তালিকাভুক্ত জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করলেও নতুন কিছু বাহিনী গঠন হয়েছে তরুণদের। নাম প্রকাশ হলেই সংঘবদ্ধভাবে ডাকাতি হচ্ছে এই ভয়ে বোট মালিকরা মুখ খুলছে না। ফিশিং বোঢ মালিক সমিতির সভাপতি জেলা আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, একসময় জলদস্যুদের আতঙ্কে সাগরে মাছ শিকার কষ্টসাধ্য হতো এখন কমেছে বর্তমান সরকার সদস্যদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে  তবে ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, তারা বংশপরম্পরায় জিইয়ে রেখেছে জলদস্যুতাকে তবে আগের চাইতে ৯০ শতাংশ কমে গেছে দস্যুতা। বর্তমানে দস্যুদের মধ্যে গ্রুপিংয়ের কারণে আবারও তৎপরতা বেড়েছে হয়তো।সাধারণ মানুষ জানমান রক্ষায় বর্তমান সরকার সবসময় সজাগ।

ডিসি৭১/২২-এমইউনয়ন

শেয়ার করতে পারেন খবরটি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো বিভিন্ন খবর দেখুন

Sidebar Ads

© All rights reserved © 2015 Dainik Cox's Bazar Ekattor
Theme Customized By MonsuR
x