কক্সবাজারের টেকনাফে পৃথক অভিযান চালিয়ে ১ কেজি ২৫৮ গ্রান ক্রিস্টাল মেথ আইস, ২১ হাজার ৯১০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট এবং বার্মিজ ১৫০ বোতল মদ ও ৩৫০ ক্যান বিয়ার ও একটি কাঠের নৌকা জব্দ করা হয়েছে। এসময় একজন মাদক পাচারকারীকে আটক করা হয়।
টেকনাফ ২বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার (বিজিবিএম) গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান,বুধবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, অত্র ব্যাটালিয়নের খারাংখালী/ঝিমংখালী বিওপি’র দায়িত্বপূর্ণ এলাকা দিয়ে মাদকের একটি চালান বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসতে পারে। উক্ত তথ্য প্রাপ্তির সাথে সাথে অত্র ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক অধীনস্থ বিওপিদ্বয়ের চোরাচালান প্রতিরোধ টহলদলকে অধিক সতর্কতার সাথে দায়িত্বপালনের নির্দেশনা প্রদান করেন। পরবর্তীতে খারাংখালী বিওপি’র দায়িত্বপূর্ণ বিআরএম-১৫ হতে আনুমানিক ১০০ গজ উত্তরে সাড়ে চার মাইল নামক এলাকায় অবস্থানরত টহলদল দুইজন ব্যক্তিকে মায়ানমার থেকে একটি কাঠের নৌকাযোগে শূন্যলাইন অতিক্রম করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নাফ নদীর তীরে নামতে দেখে। উক্ত নৌকাটি দেখা মাত্রই পূর্ব থেকেই কৌশলগত অবস্থানে থাকা বিজিবি টহলদল বর্ণিত ব্যক্তিদের চ্যালেঞ্জ করলে উক্ত ব্যক্তিরা নৌকা থেকে লাফিয়ে দ্রুত সাঁতরিয়ে মায়ানমারের অভ্যন্তরে নাফ ফোয়ারা দ্বীপের দিকে পালিয়ে যায়। টহলদল উল্লেখিত স্থানে পৌঁছে উক্ত ব্যক্তিদের ফেলে যাওয়া একটি কাঠের নৌকা জব্দ করতে সক্ষম হয়। টহলদল জব্দকৃত নৌকাটি তল্লাশী করে নৌকার পাটাতনের নিচ হতে পলিথিন দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় একটি প্লাষ্টিকের ব্যাগ উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত ব্যাগের ভিতর থেকে ১ কেজি ২৫৮ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস এবং ২০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট (মালিকবিহীন অবস্থায়) জব্দ করা হয়। এসময় কাঠের নৌকাটিও জব্দ করা হয়। জব্দকৃত ক্রিস্টাল মেথ আইস, ইয়াবা ট্যাবলেট ও কাঠের নৌকার আনুমানিক সিজারমূল্য ৬ কোটি ৮৯লক্ষ ২০ হাজার টাকা। পরবর্তীতে টহলদল কর্তৃক উক্ত এলাকায় সকাল পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করা হলেও কোন চোরাকারবারী কিংবা তাদের সহযোগীকে আটক করা সম্ভব হয়নি। উক্ত স্থানে অন্য কোন অসামরিক ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি বিধায় চোরাকারবারীদের সনাক্ত করাও সম্ভব হয়নি। চোরাকারবারীদের সনাক্ত করার জন্য অত্র ব্যাটালিয়নের গোয়েন্দা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
অপরদিকে টেকনাফ ২বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ সাবরাং বিওপি’র একটি চোরাচালান প্রতিরোধ টহলদল বিআরএম-৫ হতে আনুমানিক ২ কিলোমিটার দক্ষিনে বগলজোড়া নামক এলাকায় নিয়মিত টহল কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। উক্ত সময় টহলদল ৫-৬ জন ব্যক্তিকে নাফনদী পার হয়ে কয়েকটি বস্তা কাঁধে নিয়ে বেড়ীবাঁধের দিকে আসতে দেখে এবং তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় টহলদল তাদেরকে চ্যালেঞ্জ ও ধাওয়া করে। উক্ত ব্যক্তিরা দুর হতে বিজিবি টহলদলের উপস্থিতি অনুধাবন করা মাত্রই তাদের কাঁধে থাকা বস্তাগুলো ফেলে কেওড়া বাগানের ভিতরে পালিয়ে যায়। টহলদল উল্লেখিত স্থানে পৌঁছে তল্লাশী অভিযান পরিচালনা করে উক্ত ব্যক্তিদের ফেলে যাওয়া ৮টি প্লাষ্টিকের বস্তা উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত বস্তার ভিতর থেকে ১৫০ বোতল বার্মিজ মদ এবং ৩৫০ ক্যান বার্মিজ বিয়ার (মালিকবিহীন অবস্থায়) উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। উদ্ধারকৃত বার্মিজ মদ ও বিয়ারের সিজারমূল্য ৩ লক্ষ ১২ হাজার ৫শত টাকা। উক্ত স্থানে অন্য কোন অসামরিক ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি বিধায় চোরাকারবারীদের সনাক্ত করাও সম্ভব হয়নি।
এছাড়াও টেকনাফ ২বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ হোয়াইক্যং বিওপি’র একটি টহলদল হোয়াইক্যং চেকপোস্টে নিয়মিত যানবাহন তল্লাশী কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। এসময় টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামগামী একটি পায়রা পরিবহণ বাস চেকপোস্টে আসলে তা তল্লাশীর জন্য থামানো হয়। পরবর্তীতে উক্ত বাসটি তল্লাশীকালীন একজন যাত্রীর আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় উক্ত যাত্রীকে চেকপোস্টে কর্তব্যরত সৈনিক দ্বারা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তল্লাশী এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তল্লাশীর এক পর্যায়ে উক্ত যাত্রীর সীটের নীচে (চুম্বক দ্বারা) অভিনব পদ্ধতিতে লুকায়িত অবস্থায় ১ হাজার ৯১০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। তাছাড়াও আটককৃত আসামীর নিকট হতে ১টি মোবাইল ফোনও জব্দ করা হয়। জব্দকৃত ইয়াবা ট্যাবলেট এবং মোবাইল ফোনের সর্বমোট সিজারমূল্য ৫লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা।
তিনি আরো জানান,আটককৃত আসামীকে জব্দকৃত ইয়াবা ট্যাবলেট এবং মোবাইল ফোনসহ নিয়মিত মামলার মাধ্যমে টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
Leave a Reply