সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৭ সালের ২১ অক্টোবর দেশের ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং দরিদ্র লোকজনের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে জেলা সদরের গোলড়া এলাকায় ১০ দশমিক ৪০ একর জমিতে মানিকগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই শিল্পনগরীতে শিল্পকারখানার জন্য ৭৯ প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়।
বর্তমানে ২৪টি শিল্পকারখানার মধ্যে মেসার্স সুপার সাইন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মেসার্স চিশতি পিভিসি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মেসার্স জে অ্যান্ড জে এসেনশিয়াল প্রোডাক্টস লিমিটেড, মেসার্স পারলি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচারাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডসহ ১৩টি কারখানা চালু রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান পুরোদমে এবং ৩টি আংশিক চালু রয়েছে। বন্ধ আছে নয়টি কারখানা। এগুলো হলো বাংলাদেশ অ্যাপারেল অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড, মেসার্স আলবাট্রস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মেসার্স রিলায়েবল মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, নাহার গার্ডেন, ঢাকা ফুড প্রোডাক্টস, ইয়ার্ন কনসার্ন লিমিটডে, মেসার্স ফ্যামিলি প্রোডাক্টস কোম্পানি লিমিটেড, মেসার্স রিফ্লেক্স প্রাইভেট লিমিটেড ও অ্যালুমিনা প্রাইভেট লিমিটেড।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, বন্ধ হওয়া শিল্পকারখানাগুলোর মূল ফটকে তালা ঝুলছে। কোনো কোনো কারখানা বেশ আগে বন্ধ হওয়ায় লতা-পাতা ও ময়লা-আবর্জনায় আচ্ছাদিত হয়ে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে ভবনগুলো।
বিসিক শিল্পনগরীর মেসার্স সুপার সাইন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের একটি কেব্ল তৈরির কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থাপক উত্তম ভৌমিক বলেন, কয়েক বছর ধরে গ্যাসের সংকট চলছে। রাতের বেলায় সামান্য গ্যাস পাওয়া গেলেও দিনের বেলায় থাকে না। এ ছাড়া কাঁচামাল-সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বিসিক সূত্রে জানা গেছে, ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মালিক প্লটের বিপরীতে শিল্পকারখানা স্থাপনের জন্য বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বিপুল অর্থ ঋণ নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন। কেউ কেউ শিল্পপ্রতিষ্ঠান তৈরি না করে সেই অর্থ দিয়ে অন্য স্থানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়েছেন। ঋণ পরিশোধ না করায় বিসিকের ছয়টি শিল্প ইউনিটের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।
মেসার্স রিফ্লেক্স প্রাইভেট লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপির দায়ে বন্ধ রয়েছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি বিসিক থেকে ২৭ হাজার বর্গফুট জমি বরাদ্দ নিয়ে রূপালী ব্যাংকের ঢাকার একটি শাখা থেকে ১৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাপারেল অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান ব্যাংকঋণে দেউলিয়া হয়েছে। ৪ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ না করায় বেসিক ব্যাংক লিমিটেড গুলশান শাখা নিজেদের কবজায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানের ৯ হাজার ৯০০ বর্গফুট জমি নিলাম করেছে। এলবাট্রোস ফেব্রিক্স প্রাইভেট লিমিটেড ব্যাংকে ৬ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ না করে লাপাত্তা।
আর বিসিক নগরীর ইয়ার্ন কনসার্ন লিমিটেড সোনালী ব্যাংক থেকে ৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করায় সেটিও দেউলিয়া হয়েছে। এ ছাড়া নাহার গার্ডেন প্রাইভেট লিমিটেড বিসিক থেকে ৪৫ হাজার বর্গফুট জমি বরাদ্দ নেয়। তার মধ্যে ৩১ হাজার ৫০ বর্গফুটের বিপরীতে বেসিক ব্যাংকের ঢাকার একটি শাখা থেকে ৩৫ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। অথচ প্রতিষ্ঠানটির স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ মিলিয়ে ১০ ভাগও হবে না।
এসব বিষয়ে চেষ্টা করেও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষের কারও সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
বিসিক সূত্রে জানা যায়, শিল্পনগরীতে জনবল–সংকটও রয়েছে। পাঁচজন কর্মকর্তা পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন মাত্র দুটি পদে। এর মধ্যে উপব্যবস্থাপক ও প্রমোশন কর্মকর্তা পদে কর্মকর্তা থাকলেও শিল্পনগরী কর্মকর্তা, সম্প্রসারণ কর্মকর্তা পদে দুজন ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার পদ শূন্য রয়েছে।
এ বিষয়ে বিসিক শিল্পনগরীর উপব্যবস্থাপক মো. মাহবুবুল ইসলাম বলেন, বন্ধ শিল্প ইউনিট চালু করতে ব্যাংকের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও বিসিকের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদারকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply