ছেলে তৌকিরের বয়স কম দেখিয়ে নাবালক সাজিয়ে আদালতের মাধ্যমে জামিনে মুক্ত করে আনলেও এখনও কারাগারে রয়েছে রাকিব।
গ্রেফতার তরিকুল ইসলাম তৌকির শিবপুর পৌর এলাকার পশ্চিম পাড়া মহল্লার কাজল ভূঁইয়া ও শিবপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তাপসী রাবেয়ার ছেলে। এছাড়াও তৌকির শিবপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি খোকন ভুঁইয়ার ভাতিজা। সে তার মায়ের প্রতিষ্ঠিত হাজী আফছার উদ্দিন ভূইয়া সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের একাদশ শ্রেণির ছাত্র।
এছাড়া গ্রেফতার মো. রাকিবুল ইসলাম একই মহল্লার (তাপসী রাবেয়ার বাড়ির সামনের বাড়ি) রুহুল আমিনের ছেলে।
এলাকাবাসী ও বাকলিয়া থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শিবপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তাপসী রাবেয়ার ছেলে তৌকির দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। সে একজন চিহ্নিত মাদক কারবারি। কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান এনে শিবপুরের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে থাকেন সে। এ জন্য প্রায় সময় কক্সবাজার আসা যাওয়া করে তৌকির।
বরাবরের মতো গত ১৬ জানুয়ারি ইয়াবার একটি চালান নিয়ে কক্সবাজার থেকে নরসিংদীর শিবপুরে আসার পথে চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানা পুলিশ ইয়াবাসহ তৌকির ও তার এক সহযোগী রাকিব নামের দুইজনকে গ্রেফতার করে।
এ ব্যপারে বাকলিয়া থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা রজু করা হয়েছে। পরে তাদেরকে আদালতে পাঠানো হলে আসামি তৌকিরের মা শিবপুর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাপসী রাবেয়ার ছেলের বয়স ১৯ এর স্থলে তা কমিয়ে ১৭ বছর দেখিয়ে নাবালক সাজিয়ে কাগজপত্র তৈরি করে আদালতে জমা দেয়।
ছেলে তৌকিরকে আদালতের মাধ্যমে জামিনে মুক্ত করে আনলেও ছেলের সহযোগী রাকিব আজও কারভোগ করছেন।
এ ব্যপারে শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে শিবপুর পৌর এলাকাবাসীর নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি জানান, ভাইস চেয়ারম্যান তাপসী রাবেয়ার ছেলে তৌকির প্রতি মাসে দু-একবার করে কক্সবাজারে চলে যায়। তবে সেখানে কেন সে যায় তা আমরা জানতাম না। তবে শুনেছি সে নাকি এলাকায় মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। অবশেষে কথাটার সত্যতা মিলল।
অপর এক ব্যক্তি বলেন, ‘তবে যাই বলেন ভাই দুইজন একসঙ্গে ধরা পড়ছে অথচ নিজের ছেলে বলে ভাইস চেয়ারমম্যান ম্যাডাম খালি একজনকে জামিনে ছাড়াইয়া আনলেন। অথচ একই বয়সী তার ছেলের সঙ্গে ছেলেটা এখনও ভিতরে থাইক্যা আকাশের তাঁরা গুণতাছে।
এ ব্যাপারে কথা বলতে তৌকিরের মা শিবপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তাপসী রাবেয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে আমাদেরকে হেয় করতে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। বিশ্বাস করেন আমার ছেলে নির্দোষ। আপনারও হয়তো ছেলে আছে। তাই ওই কথাটা পত্রিকায় লিখে আমার ছেলের ভবিষ্যৎ নষ্ট করবেন না।
পরে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তাপসী রাবেয়া সংবাদটি প্রকাশ না করার জন্য এভাবেই কাকতি-মিনতি জানান।
এদিকে ছেলে গ্রেফতারের বিষয়টি এলাকায় যাতে প্রকাশ না পায় সেজন্য সকল অপচেষ্টা চালায় মা উপজেলা পরিষদের বাইস চেয়ারম্যান তাপসী রাবেয়া। কিন্তু তার সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ছেলেকে জামিনে মুক্ত করলেও তার সহযোগী একই এলাকার বাসিন্দা রাকিব কারাহাজতে থাকায় বিষয়টি এলাকায় এক কান দুই হতে হতে বর্তমানে ‘টক অব শিবপুর’ এ পরিণত হয়েছে।
মামলার বাদী বাকলিয়া থানাধীন চাক্তাই পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. বিল্লাল উদ্দিন বলেন, আমরা খবর পাই কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামমূখী হানিফ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে দুই ব্যক্তি মাদকদ্রব্যের চালান নিয়ে যাচ্ছে। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শাহ আমানত সেতুর উত্তর পাশের পুলিশ বক্সের সামনে থেকে ঢাকা মেট্রো ক ১৫ ৭৯৬০ এই নাম্বার প্লেটের হানিফ পরিবহনের একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে চৌকির ও রাকিব নামে দুই তরুণের প্যান্টের পকেটে নীল জিপারের ভিতরে ৫০টি করে মোট ১০০টি পাওয়া ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়া গেলে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
এ ব্যপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত ১৬ জানুয়ারি ভোরে কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনে একটি যাত্রীবাহী বাসে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ১০০ পিছ ইয়াবাসহ তৌকির ও রাকিব নামে দুই তরুণকে গ্রেফতার করে চাক্তাই পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা। এই মামলায় তদন্ত চলমান রয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Comment *
Name *
Email *
Website
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.
Leave a Reply