নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজারের রামুর রাজারকুল পাহাড়তলি ২নং ওয়ার্ডে পাহাড় ও পাহাড়ের বড় বড় গাছ কেটে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ চলছে। আবদুল মান্নান ও তার ভাই আব্দুস ছালাম পাকা দালান নির্মাণের কাজ করছেন।
আবদুল মান্নান উক্ত এলাকায় প্রভাবশালী মাস্তান হিসেবে পরিচিত। তিনি দীর্ঘদি ধরে এলাকার সাধারণ মানুষদের জিম্মি করে চাঁদা আদায়, ভূমি দখল, বনবিভাগের জায়গা নিজের মনে করে এক জায়গা ৩ থেকে ৪ জনকে বিক্রি করেন এমন অভিযোগ অহরহ।
বর্তমানে তার ভাই আব্দুস ছালাম সরকারি বনভূমির পাহাড় সাবাড় করে বাড়ি নির্মাণ করতে ব্যস্ত। কিছুদিন আগে বন বিভাগ থেকে তাদেরকে কাজ না করতে বলার পরও তোয়াক্কা না করে ফের কাজ দ্রুতগতিতে চালিয়ে যাচ্ছে। রাতের অন্ধকারে বেশি শ্রমিক দিয়ে দালান নির্মাণ শেষ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে মৃত আজিজুর রহমান এর ছেলে আবদুল মান্নান ও আব্দুস ছালাম।
এলাকাটির দূরত্ব বেশি হওয়ায় সহজে সেখানে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আসা-যাওয়া খুব একটা নেই। সব সুযোগ হাতে থাকায় অনায়াসে চালাচ্ছে বড় বড় অপরাধ। প্রশাসনের দায়িত্বশীল কারও তদারকির বালাই নেই বললেই চলে।
বর্তমানে সেখানে নির্মাণ সামগ্রী ইট, বালি ও অন্যান্য সরঞ্জামাদী স্তুপ করে রেখেছে এবং বাড়তি শ্রমিক দিয়ে দালান তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে প্রশাসনের অভিযান চালানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল। নচেত উক্ত এলাকার পাহাড়গুলো নিমিষেই বিলিন হয়ে পড়বে।
স্থানীয়রা বলছেন মান্নান ও ছালামসহ পরিবারের সদস্যরা মিলে বনের পশুর আবাসস্থল পাহাড় বিলিন করে সেখানকার বড় বড় গাছ অবৈধভাবে পাচার করছে রাতের আধারে। লোকালয়ে থাকা হাতি বন সাবাড় হওয়ায় এখন বাড়ি ঘরে হানা দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। এলাকাবাসীসহ ছোট ছোট ছেলে মেয়েরাও বন্য হাতির ভয়ে আতংকে দিন কাটাচ্ছেন।
মান্নানের বিরুদ্ধে আগে থেকেও অনেক অভিযোগ রয়েছে। পাহাড় কাটা, ডাকাতি, নারী কেলেংকারী এমনকি স্থানীয় এক ইউপি সদস্যও তার নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ আছে।
তার দাপটের কারনে এলাকায় কেউ মুখ খুলতে পারেনা। মান্নান সিন্ডিকেট বিশাল পাহাড় কেটে দালান নির্মাণ করতে কাজ করছে দিন রাত।
একসময় বনবিভাগের গুটিকয়েক সদস্যদের সাথে বেশ সখ্যতা থাকায় এখনো সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে পাহাড় নিধন, গাছ কাটা, জুলুম, নির্যাতন ইত্যাদি। এমনকি আবদুল মান্নান এখনো বলে বেড়ায় তিনি উক্ত এলাকায় ভিলেজারের দায়িত্ব পালন করছেন। সেই সুযোগ তার এখন বড় হাতিয়ার।
তার এমন অসাধু কর্মকাণ্ড থেকে পরিত্রাণ চায় স্থানীয় বাসিন্দারা।
কক্সবাজার রামুর রাজারকুল ইউনিয়নের পাহাড়তলী ২নং ওয়ার্ডে আবদুল মান্নান এর নেতৃত্বে যেভাবে বনের পাহাড় নিধন হচ্ছে তা প্রশাসন যদি বন্ধ করতে না পারে তাহলে এলাকাবাসী অনেক বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে মনে করছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল এর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের আন্তরিকতার ঘাটতি, দায়িত্ব অবহেলা এবং ক্ষেত্রবিশেষে অপরাধীদের সাথে যোগসাজশে বনভূমি দখল হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বন বিভাগের পর্যাপ্ত জনবলের সংকটও রয়েছে। বনভূমি রক্ষায় বন বিভাগে সংস্কারের পাশাপাশি দায়িত্ব অবহেলার কারণে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, সাংবাদিকরা লিখতে লিখতে ক্লান্ত হলে প্রশাসন আসে। তখন তাদের চাহিদা তারা পূরণ করে চলে যায়। লাগামহীন পাহাড় কাটার কারণে বর্ষাকালে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু তাতে প্রশাসনের কোনো নজর নেই। পাহাড় ধসে মানুষ মরলে তারপর প্রশাসন তোড়জোড় শুরু করে। স্থানীয় আরেক বাসিন্দা জানান, এ এলাকা এখন ইয়াবা ও মাদকের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয় উটতি বয়সী যুবক ও একসময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা মিলে বিভিন্ন জায়গায় মানুষ গিয়ে সাধারণ মানুষদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, ছিনতাই, ডাকাতিসহ তারা অবাধে করে যাচ্ছে।
এ প্রসংগে জানতে রামু উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি কল রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
Leave a Reply