এস এম জুবাইদ, পেকুয়া
কক্সবাজারের পেকুয়ায় অবৈধভাবে চলছে ২৮টি করাতকল। এসব করাতকলে প্রতিদিন চিরাই হচ্ছে প্রায় ১৫ হাজর ঘনফুট কাঠ। দিন দুপুরে এসব করাতকল চললেও অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেনা বন কর্মকর্তারা। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় বিট কর্মকর্তাদের মাশুহারা দিয়ে চলছে এসব করাতকল। এ অবস্থায় হুমকির মুখে পড়েছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল।
স্থানীয় পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরব ভূমিকার কারণে অধিক হারে বাড়ছে করাতকল। অথচ বন বিভাগের নীতিমালায় রয়েছে, সংরক্ষিত বনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যাবে না। করাতকল চালাতে হলে প্রয়োজন হবে লাইসেন্স। কিন্তু এসব নিয়মনীতির বালাই নেই পেকুয়া উপজেলায়।
পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্য নেচার পেকুয়া উপজেলা শাখার সভাপতি মাসউদ বিন জলিল বলেন, ‘করাতকলের প্রভাবশালী মালিকদের সঙ্গে বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে। তাই তাঁরা টুঁ-শব্দ করেন না। এদিকে প্রতিনিয়ত বনভূমির গাছ নিধনের ফলে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। একই সঙ্গে বিপন্ন হচ্ছে বন্য পশুপাখি। বনাঞ্চলসহ পরিবেশ রক্ষার্থে উপজেলা বন ও পরিবেশ কমিটি থাকলেও এর কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেকুয়ার সংরক্ষিত বনের তিন কিলোমিটারের মধ্যে ৬টি এবং পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে আরও ১০টি করাতকল। অনুমোদনহীন এসব করাতকলে দিনরাত দেদারছে চলছে সংরক্ষিত বনের চোরাই কাঠ চেরাই। সংরক্ষিত বনাঞ্চলে মূল্যবান গর্জন, সেগুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাদারট্রি কেটে নদীপথে পাচার করা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায়। পেকুয়া বাজারকেন্দ্রিক প্রভাবশালী একটি চক্র এ কাজে জড়িত।
ছবি-সংরক্ষিত বন থেকে কাট কাটার দৃশ্য।
টইটং ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, তাঁর ইউনিয়নে চারটি করাতকল রয়েছে। অথচ এসব করাতকল থেকে টইটং সংরক্ষিত বনাঞ্চলের দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। সরকারি নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে এসব করাতকল স্থাপিত হয়েছে।
পেকুয়া সদর ইউপির চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ বলেন, ‘যে যার মতো যেখানে-সেখানেই স্থাপন করছে করাতকল। ইতিমধ্যে আমার ইউনিয়নে প্রায় ১২ থেকে ১৪টি করাতকল স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু এসব করাতকল থেকে বনাঞ্চলের দূরত্ব খুবই কম।’
রাজাখালী ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সিকদার জানান, টইটং ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষেই আবর শাহ বাজারে স্থাপন করা হয়েছে বেশ কয়েকটি করাতকল। এগুলোর মাধ্যমে খুব সহজেই সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ চলে যাচ্ছে উপকূলের বিভিন্ন উপজেলায়।
বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হক বলেন, অবৈধ করাতকলের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে আমার উধ্বর্তন কতৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছি এবং ইউএনও ম্যামকে জানানো হয়েছে
শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, অবৈধ করাতকলের বিরুদ্ধে শিগগিরই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply