কক্সবাজারের উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে নিজের ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে হৈ ছৈ ফেলে দিয়েছেন উখিয়ায় কর্মরত সাংবাদিক ও উখিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রতন দে। স্ট্যাটাসে তিনি চেয়ারম্যান ইমরুলের হাতে নির্যাতনের শিকার মানুষের কথা তুলে ধরেন।
পাঠকের সুবিধার্থে রতন দে’র স্ট্যাটাস হুবুহু তুলে ধরা হলো।
অনেক দুষ্কর্ম করে পার পেলেও সাহসী সুলতান আহমদের কাছে ধরাশায়ী হলেন বিতর্কিত চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী।
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর হলদিয়াবাসী স্বপ্ন দেখে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসবে। স্বস্তিতে ভোগ করবে নাগরিক সুবিধা। কিন্তু এক মাসের মাথায় দেখা গেল তার উল্টো চিত্র। জনতার উপর শুরু হয় নব নির্বাচিত চেয়ারম্যানের স্টিম রোলার। ব্যবসায়ী সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে জিম্মি করে নির্বাচনে ব্যয় হওয়া অর্থ আদায়ের কৌশল।ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার সময় অনেক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিধি বহির্ভূতভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ। উদ্দেশ্য হাসিল না ও অপছন্দের এবং নির্বাচনে বিরোধিতা কারি হলে ট্রেড লাইসেন্স আটকে দেওয়া। পরিষদের নামে অন্যর জমি দখলের চেষ্টা।বিচার না মানলে নির্যাতন। অযাচিত হস্তক্ষেপ।অন্যায় ভাবে ইমাম শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করা। এরকম অসংখ্য ঘটনা অজানা রয়েছে। ভুক্তভোগীরা ভয়ে প্রতিবাদ করছে না বা আইনের আশ্রয় গিয়ে প্রতিকার পাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। ক্ষোভ দুঃখ ও মনের জ্বালা নিয়ে দুকে দুকে মরছে। যন্ত্রণা কষ্টদায়ক এমনই কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা তুলে ধরা হলো। অধরা ও স্বার্থ হাসিলের কৌশলের এর শিকার মরিচা বাজারের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠিত সৎ ব্যবসায়ী তমিজ সওদাগর। তিনি চাপা আর্তনাদ কন্ঠে এই অভিযোগ করেন। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধকালীন কক্সবাজার বান্দরবানের সাব সেক্টর কমান্ডার( অব:)ক্যাপ্টেন আব্দুস সোবাহানের পরিবার তার মেয়ে শিক্ষিকা তৃপ্তিও তার স্বামীর উপর পৈশাচিক বর্বর হামলা এবং শ্লীলতা হানির অভিযোগ। যা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পুরো দেশবাসী জেনেছে। স্থানীয় শ্রমিকলীগ নেতা ও প্রতিবাদী যুবক জসিম আহমেদ এবং সাইফুল ইসলামের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে কেড়ে নেওয়া হয় ।
আরো পড়ুন-মুছলেখায় জামিন পেলেন হলদিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস
মরিচা বাজারের কেন্দ্রীয় মডেল মসজিদের ইমাম মাওলানা মাহমুদুল হাসান কে স্পর্শ কাতর একটি খোঁড়া অভিযোগে এবং মরিচ্যাপালং উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রায় এক দশক ধরে চাকুরীরত দুইজন শিক্ষক মৃদুল বড়ুয়া ও মাওলানা ফরিদুল আলম কে চেয়ারম্যানের অনৈতিক কাজে সাড়া না দেওয়ায় অতি সম্প্রতি চাকরিচ্যুত করে। পরিবারগুলো বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ কয়েকটি অমানবিক ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় ওঠে। উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ দেখিয়ে নিজ সীমারেখা, শিষ্টাচার ও সামাজিকতা লংঘন করে লোক দেখানো জনহিতকর কাজের অপকৌশল অবলম্বন করে কোট বাজার স্টেশনে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনপূর্বক গণমানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হরণের চেষ্টা চালায়।যা অবশ্যই পরে রতœা পালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হুদা এর প্রচেষ্টায় উখিয়া থানার চৌকস, কর্মঠ, পরিচ্ছন্ন ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য অফিসার ইনচার্জ শেখ মোহাম্মদ আলীর হস্তক্ষেপে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে পুলিশ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আনে। এরকম অনেক অন্যায় অবিচার দমন-পীড়ন নির্যাতন চালিয়েও পার পেয়ে যায় উক্ত চেয়ারম্যান। ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করছিল। কিন্তু বিধিবাম স্রষ্টা দুষ্টের দমন সৃস্টের পালন এমনিভাবে প্রমাণ করল আত্মসম্মানবোধ অথবা ভয়ে যা অনেকে করতে পারেনি অবশেষে অসম সাহসী বীরের মতো তাই করল নির্মম নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার সুলতান আহমদ। অবশ্য বলাবাহুল্য এই জনপদে এক সময়ে নেতৃত্বদানকারী জনপ্রিয় সর্বজন শ্রদ্ধেয় এখনো যাকে মানুষ হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে সাবেক উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরীর ছেলে এবং জেলার বরেণ্য ব্যক্তিত্ব ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠাতা ও বর্ষিয়ান রাজনীতিক বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহম নুরুল ইসলামের নাতি,এবং কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জেলার আলোকিত ব্যক্তিত্ব সাংবাদিকদের অভিভাবক মজিবুল ইসলামের ভাগীনা। উনাদের দিকে চেয়ে অনেকে অপবাদ অত্যাচার মুখ বুজে নিরবে সয়ে যান। মহান স্রষ্টা ইমরুলের লাগাম টেনে উচিত শিক্ষা দিতে দিনমজুর অসহায় সুলতানের মনে সাহস জুগিয়ে অবশেষে আইনের কাঠগড়ায় নিয়ে গেলেন। দেরিতে হলেও স্রষ্টার বিচার এভাবেই হবে বলে বুঝিয়ে দেয়।অতঃপর উক্ত লোমহর্ষক ঘটনার সূত্রপাত ও বিবরণ বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো।
হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরীর বিরুদ্ধে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর ও চুরির অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যজিষ্ট্রেট আমলী আদালত-৪ এ মামলাটি দায়ের করেন হলদিয়া পালং ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ভুক্তভোগী সোলতান আহমদ। আদালত মামলাটি ৩২৩/৩৮২/৩০৭ ধারায় আমলে নিয়ে আসামীর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১০ মে ধুরুমখালী এলাকার সোলতান আহমদকে হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদারদের মাধ্যমে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে ব্যাপক মারধর করে ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী। এসময় ভুক্তভোগীর মোবাইল চুরি করে নিয়ে নেওয়া হয়।
এ ঘটনায় ১৬ মে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করা মামলায় আদালতের কাছে আত্মসমর্পণ করে ভবিষ্যতে বাদী ও সাক্ষীদের মারধর ও হুমকি প্রদান আর করবেনা বলে লিখিত অঙ্গিকার নামায় মুছলেকা দিয়ে জামিনে মুক্তি লাভ করে চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী।
এজাহার সুত্রে জানা যায়, বিচারের নামে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে শারিরীক নির্যাতন ও লুটপাটের অভিযোগে উখিয়ার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরীর বিরুদ্ধে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী সোলতান আহমদ। মামলা নং সি আর ২৭২/২০২৩।
মামলার বাদী সোলতান আহমদ একই ইউনিয়নের সাবেক রুমখা জনাব আলী পাড়ার মৃত আলী আহমদের পুত্র বলে জানা গেছে।
মামলার বাদী সোলতান আহমদ জানান, গত ০৯ মে হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের অধীনস্থ চৌকিদার শাহা আলম ও পুতিয়া এবং অপর একজন চৌকিদার মামলার বাদী সোলতান আহমদকে চেয়ারম্যানের বাড়ী যেতে হবে বলে জোর পূর্বক টমটম গাড়ীতে তুলে নিয়ে যায়। মামলার আসামী হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী একটি বৈদ্যুতিক তার কসটেপ দ্বারা মোড়ানো লাঠি হাতে আবুল কালাম ও হোছন আহাম্মদ এবং রশিদ আহাম্মদ গং এর জায়গা দখল করছি বলে হাতে থাকা লাঠি দিয়ে তাকে বেদম মারধর এবং অকথ্য ও বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করে। এক পর্যায়ে হাতের লাঠি ভেংগে গেলে চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী পাশে থাকা লোহার স্তুপ থেকে ৪ সুতা বেড়ের লোহার রড দিয়ে মারধর করে।
চেয়ারম্যানের মারধরের আঘাতে সমস্ত শরীর রক্তাক্ত ও ফুলা জখম হয় এমনকি লোহার রডের আঘাতে বাম হাতের অনামিকা আংগুল ও ডান হাতের সাহাদাত আংগুল এবং বাম পায়ের পাতা ও অনামিকা আংগুল ভেঙ্গে যায়। চেয়ারম্যানের মারধর সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যাই। এই সময় আমার ছেলে মোস্তাক আহমদ (২২) ফোন বের করে আত্মীয় স্বজনকে ফোন করতে গেলে ইমরুল আমার ছেলেকে কিল ঘুষি মেরে ২০ হাজার টাকা মূল্যের এন্ড্রয়েড মোবাইল সেট ছিনিয়ে নেয়। ঘটনাস্থলে আসা লোকজন তার অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে একটি সি.এন.জি যোগে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়া যাওয়ার চেষ্টা করলে চেয়ারম্যান মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে হাসপাতালে নিতে বাধা সৃষ্টি করে। কিন্তু ঘটনাস্থলে আসা লোকজন চেয়ারম্যানের কথায় কর্ণপাত না করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত ডাক্তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার পর প্রায় ২০ মিনিট পরে সুলতানের জ্ঞান ফিরে।
মামলার বাদী সোলতান আহমদ জানান, মামলার আসামী হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন পূর্বে হতে আমাকে হামলা মারধর করবে বলে এমনকি সন্ত্রাসী লেলিয়ে হত্যার হুমকি ধমকি দিয়ে আসছিল।
অভিযুক্ত চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী মামলার বাদী ও সাক্ষীদেরকে কোন ধরণেরে ভয়ভীতি, হুমকি ধমকি ও মারধর করবেন না বলে অঙ্গীকার নামায় আদালতকে জানিয়েছেন।অত্র উপজেলার সর্বস্তরের বিবেকবান মানুষ অভিমত ব্যক্ত করে যে এখন হয়তো কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙবে। উক্ত চেয়ারম্যান নিজেকে শুধরিয়ে আত্মঅহংকার এবং ক্ষমতার দম্ভ ও দাপট পরিহার করে ভদ্র, শান্তশিষ্ট, সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্য, সুশৃংখল,এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল জনপ্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালাবেন বলে সুধী সমাজ রাজনৈতিক মহল সহ সকলেই প্রত্যাশা করছেন।
Leave a Reply