রাজনৈতিক অস্থিরতাকে সামনে রেখে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দ্বারা বাজারের আরো একাধিক পণ্যের দাম বৃদ্ধির ভয়ংকর পরিস্থিতি আসছে বলে সতর্ক করেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। তাদের মতে, খুব শিগগিরই দাম বাড়তে পারে নিত্য পণ্য আটা-ময়দা, ডালসহ একাধিক পণ্যের। সিন্ডিকেট কয়েক দিনের জন্য হঠাৎ করে বাজার অস্থিতিশীল করে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ফান্ডকে সমৃদ্ধ করবেন বলে জানিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে এই সিন্ডিকেটের নাটের গুরু কারা? সিন্ডিকেটের হাত সরকারের হাতের চেয়েও কি লম্বা?
সম্প্রতি নিত্যপণ্যের বাজারে কাঁচামরিচ নিয়ে এতটা নাজুক অবস্থা আর কখনো দেখা যায়নি। দেদার আমদানি সত্ত্বেও এখনো কাঁচামরিচের কেজি ৩০০-৪০০ টাকা। অথচ ভারত থেকে ৩০-৩২ টাকা কেজি দরে কাঁচামরিচ আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারা বছরই ছয়টি পণ্য- চাল, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, মুরগিও ডিম নিয়ে চলে সিন্ডিকেটবাজী। দাম বাড়িয়ে লুট করা হয় ভোক্তার টাকা। অথচ অসাধু ব্যবসায়ীদের হচ্ছে না কোনো শাস্তি। আর তাই বাজারেও মিলছে না স্বস্তি; বরং ছয় পণ্যের পাশাপাশি নিত্যনতুন আরো পণ্য যুক্ত হচ্ছে। তার মধ্যে অন্যতম কাঁচামরিচ।
জানেত চাইলে কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান এ বিষয়ে বলেন, সিন্ডিকেট হচ্ছে অদৃশ্য এক শত্রæ। তাকে খালি চোখে দেখা যায় না। তবে এর কার্যক্রম বোঝা যায়। বর্তমান স্মার্ট যুগে আইসিটির মাধ্যমে তা আরো বেশি হচ্ছে। সব দেশেই কিছু না কিছু আছে। তবে বাংলাদেশে এই অপশক্তি খুব বেশি সক্রিয়। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটগুলোও দৃশ্যমান নয়। এরা অদৃশ্যভাবে কাজ করে। তারা মজুত করে বাজারে সরবরাহ সংকট তৈরি করে দুই থেকে তিনগুণ বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছে।
সিন্ডিকেটের কাজ হচ্ছে একসঙ্গে সব পণ্যের দাম বাড়াবে না। যখন যে পণ্যের চাহিদার চেয়ে জোগান কম থাকে, সেই পণ্যের দাম বাড়বে। তিনি বলেন, সরকার পলিসি তৈরি করছে; কিন্তু ঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। সরকার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তাই সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ ও তদারকিতে যাদের দায়িত্ব দিয়েছে- তাদেরই এসব সিন্ডিকেট খুঁজে বের করতে হবে। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাও নিতে হবে।
ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির কারণে আমাদের ভোক্তাদের শোষণ করা হচ্ছে। আমাদের দেশের ছয়-সাতটি প্রতিষ্ঠান আছে, যারা বাংলাদেশের মানুষকে জিম্মি করে ইচ্ছামতো দাম বাড়ায়। এ ব্যবসায়ীরা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন। কিছুদিন পরপর এই সংকট দেখা দেয়। যেমন- কাঁচামরিচের দাম বাড়িয়েছে। এখন আবার আলু নিয়ে কারসাজি শুরু করেছে। আমরা ভোক্তারা খুব কষ্টে আছি। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।
মূলত, ভোগ্যপণ্যের বাজারে সিন্ডিকেট শুরু হয় গত করোনা মহামারি থেকে। তখন প্রধান খাদ্যপণ্য চাল নিয়ে শুরু হয় তেলেসমাতি। এরপর একে একে সয়াবিন তেল, চিনি, পেঁয়াজ, মুরগি, ডিম, আটা-ময়দা, মশুর ডাল, সবজি, মাছ-মাংস, আলু, মসলা ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে অস্বাভাবিক দাম বাড়ায়। এখন চলছে ‘কাঁচামরিচ সিন্ডিকেটে’র দাপট। অসুধা ব্যবসায়ীদের এমন দৌরাত্মে নাজেহাল সাধারণ মানুষ। এক বছর আগে ৫৫০ টাকায় মোটামুটি পরিমাণ চাল, সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ, লবণ ও ডিমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারতেন ঢাকায় বসবাসকারী বেসরকারি চাকরিজীবী রাজিবুর রহমান।
৪ সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী রাজিবুরকে বর্তমানে একই পরিমাণ পণ্য কিনতে হচ্ছে ৬৪০ টাকায়, যা আগের চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি। রাজিবুর রহমান বলেন, শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নয়, আরো কয়েকটি খাতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, গত এক বছরে সামগ্রিক মাসিক ব্যয় প্রায় সাড়ে ৬ হাজার টাকা বেড়েছে। যা বাড়তি বেতনের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। অতিরিক্ত এ ব্যয় বহন করতে তার পারিবারিক বিভিন্ন কেনাকাটায় কম খরচ করতে হচ্ছে বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন রাজিবুর।
Leave a Reply