বিশেষ প্রতিবেদক:
টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত চট্টগ্রামের নিত্যপণ্যের বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। এছাড়া রাজধানী ঢাকাতেও বাজারে কোনোভাবেই কমছে না নিত্যপণ্যের দাম। দুয়েকটি পণ্যের দাম কিছুটা কমলেও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় তা অনেক। মাঝখানে অল্প কয়েকদিন উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল থাকার পর চাল, পেঁয়াজ, সবজি, ডিম, মাছ- সবকিছুর দামই ফের ঊর্ধ্বমুখী। গেল কয়েক সপ্তাহ ধরে লাগামহীন মাছের দামে কপালে চিন্তার ভাঁজ ক্রেতাদের।
এতদিন অনাবৃষ্টির অজুহাত দিলেও ব্যবসায়ীরা এখন অতিবৃষ্টির অজুহাতে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ সাধারণ ক্রেতাদের। তাই বাজার মনিটরিং জোরদারের দাবি জানিয়েছেন ক্রেতা ও সংশ্লিষ্টরা।
প্রায় ২ বছর ধরে বাজারের উচ্চমূল্য সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন ভোক্তারা। গত বছরের আগস্টে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৯ শতাংশে পৌঁছানোর পর গত ৬ মাসে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। এর মধ্যেই দফায় দফায় বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে সুযোগ নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে এবার জলাবদ্ধতায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হলেও প্রায় সব পণ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। বাজারে নিত্যপণ্যের কোনো সংকট না থাকা সত্ত্বেও জলাবদ্ধতা ও পরিবহন সংকটে সরবরাহ কমে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। এছাড়া নগরের অন্য বাজারে নিত্যপণ্যের সংকট না থাকলেও হঠাৎ করে জলাবদ্ধতা ও সরবরাহের কৃত্রিম সংকটে সব পণ্যের বাজার বেশ চড়া। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে ভোক্তাদের।
ক্রেতারা নিত্যপণ্য কিনতে গিয়ে মিলাতে পারছে না পকেটের হিসেব। প্রয়োজনের তুলনায় অল্প নিত্যপণ্য নিয়ে বাড়ি ফিরছেন অনেকে। ব্যবসায়ীদের এমন অমানবিক আচরণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান ভোক্তা অধিকার রক্ষার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। বাজারে আসা ক্রেতারা অভিযোগ করেন, এবারের জলাবদ্ধতায় চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের নিত্যপণ্যের বাজারে তেমন ক্ষতি হয়নি। পানি উঠলেও তা দ্রুত নেমে যায়। কিন্তু জলাবদ্ধতা ও পরিবহন সংকটে সরবরাহ কমে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যা খুবই অমানবিক। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাতুনগঞ্জের পাইকারি দোকানে পানি ঢুকে পড়ায় নিত্যপণ্যের অনেক কাঁচামাল নষ্ট হয়েছে। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মালামাল তেমন আসছে না- যার ফলে নিত্যপণ্যের সাময়িক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে দাম বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও রেয়াজউদ্দিনসহ বিভিন্ন বাজারে সরজমিন দেখা যায়, গত ৫ দিনের ব্যবধানে আদা, রসুন পেঁয়াজে দাম বেড়েছে মানভেদে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। আমদানি করা আদা গত সপ্তাহে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে- যা গতকাল কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়ে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে, আমদানি করা চীনা রসুনের দাম কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়ে গতকাল বাজারে বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়। এভাবে চাল, ডাল, লবণ, শুকনো মরিচ, হলুদ, আটাসহ প্রায় নিত্যপণ্যের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১২ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। সরবরাহ সংকটের কারণে দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা।
বৃহস্পতিবার খাতুনগঞ্জে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৬৮ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে। অথচ এক সপ্তাহ আগে দেশি পেঁয়াজ পাইকারিতে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল।
এদিকে ভোজ্যতেল সয়াবিন ও চিনির দাম সরকার নির্ধারণ করে দিলেও ও দামে কোথাও মিলছে না এসব পণ্য। গতকাল বাজারে চিনি বিক্রি হয়েছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়, অথচ সরকার নির্ধারিত দাম হচ্ছে ১২০ টাকা। বাজারে পাম তেল বিক্রি হচ্ছে লিটার প্রতি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। অথচ সরকারের নির্ধারিত দর ১৩৩ টাকা। সে হিসেবে প্রতি লিটার পাম তেলের দাম বাড়তি নিচ্ছে ২৭ থেকে ৩৭ টাকা।
এছাড়া রেয়াজউদ্দিন বাজার ও বকসিরহাটে সরজমিন দেখা যায়, এক সপ্তাহ আগে যে লেয়ার মুরগির ডিম (লাল) বিক্রি হয়েছিল প্রতি ডজন ১৩৫ টাকায় তা ৩০ টাকা বেড়ে গতকাল বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায়। আর ডাবল সেঞ্চুরি ছাড়াল হাঁসের ডিম। বাজারে হাঁসের ডিম বিক্রি হয়েছে ডজন প্রতি ২০০ টাকা থেকে ২১০ টাকায়।
অন্যদিকে এতদিন ধরে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছিল কেজিপ্রতি ১৫৫ টাকায়, তা বৃহস্পতিবার বাজারে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা কেজিতে। পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সোনালি মুরগির দাম। বৃহস্পতিবার বাজারে সোনালি মুরগি কেজিপ্রতি ৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়- যা গত শনিবারও বিক্রি হয় ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা কেজিপ্রতি।
ব্রয়লার মুরগির পাইকারি ব্যবসায়ী মো. মোজাম্মেল বলেন, দেশের যেসব স্থান থেকে মুরগি সরবরাহ করা হতো, জলাবদ্ধতার কারণে ব্যবসায়ীদের মুরগি সরবরাহ সম্ভব হয়নি। তাছাড়া যেসব স্থান থেকে মুরগি কিনেছি তারা চড়া দামে মুরগি বিক্রি করছে। যার ফলে মুরগির বাজার চড়া।
অন্যদিকে সবজির বাজারও অস্থির। গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় সব সবজির দাম বেড়ে দ্বিগুণ। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে মরিচ ও টমেটোর। বাজারে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে। আর টমেটো ২৪০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এছাড়া বাজারভেদে পটল প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা। কাঁচা কলা প্রতি হালি ৪০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সবজি বিক্রেতারা জানান, দেশের বিভিন্নস্থানে জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকদের ফসল নষ্ট হয়েছে। যার ফলে বাজারে সবজির সরবরাহে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তাই পাইকারি বাজারে সব ধরনের সবজি বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছে। যার কারণে খুচরা বাজারে সবজির দাম চড়া। কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা ফয়সাল করিম নামের এক এনজিও কর্মকর্তা জানান, বাজারে সবকিছুর দাম বাড়তি। এক সপ্তাহ আগে যে সবজি ৩০ টাকায় কিনেছি তা আজকের বাজারে ৬০ টাকার চেয়ে বেশি। একটি পণ্যের দাম কমলে দুইটি পণ্যের দাম বাড়ে। মাসের আয় দিয়ে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাজারের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছি।
ক্যাব’র ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, সংকট থাকুক বা না থাকুক ব্যবসায়ীরা ইস্যু পেলেই কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। ক্রেতাদের জিম্মি করে ফেলেছে ব্যবসায়ীরা। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের অনুসন্ধানে এসব কারসাজির পেছনে বড় প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এলেও কোনো শাস্তি হতে দেখিনি। বাজার ব্যবস্থাপনার কোনো নীতিমালা ও নিয়মিত তদারকি না থাকার কারণে বাজারের পরিবেশ অমানবিক হয়ে ওঠছে। মূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার, খিলগাঁও বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টির অজুহাতে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দামই বাড়তির দিকে। এর মধ্যে আরেক দফা দাম বেড়েছে ডিম ও মুরগির। ব্রয়লার ও কক মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা এবং ডজনে ১০ টাকা বেড়েছে ডিমের দাম। এছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে চাল, পেঁয়াজ, রসুন ও জিরার দাম। চাহিদা বাড়ায় দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৫-২০ টাকা বেড়ে ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত দুই দিনের মধ্যে কেজিপ্রতি রসুনে দাম বেড়েছে ২৫ টাকা পর্যন্ত।
পণ্যের দাম নিয়ে কারসাজি বন্ধে আইন এবং সরকারি সংস্থা রয়েছে। কিন্তু এসব আইনের শিথিল প্রয়োগ ও সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের কারণে পণ্যের দাম নিয়ে নিয়মিতই কারসাজি চলছে বলে মনে করছেন পণ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, অসাধু ব্যবসায়ীরা বছরের পর বছর ধরে অতিরিক্ত মুনাফা করে আসছেন। একেক সময় একেক অজুহাতে তারা বাজার থেকে মুনাফা তুলে নিয়ে ভোক্তার পকেট কাটেন।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, দাম বাড়ানোর জন্য এখন ব্যবসায়ীদের কোনো অজুহাত লাগে না। তাদের ইচ্ছে হলেই দাম বাড়িয়ে দেয়। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরাই বর্তমানে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ইতোমধ্যে অনেকগুলো ঘটনা প্রমাণিত হওয়ার পরেও সরকার কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার কারণেই তারা বুঝে ফেলেছে, সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে না। এজন্য তারা অনেকটাই বেপরোয়া।
তিনি বলেন, দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সমস্যাও প্রকট হচ্ছে। যার পরিণতিতে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা আরো বাড়তে পারে। তাই সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সমন্বিতভাবে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো, বাজার ব্যবস্থাপনায় ত্রæটিগুলো দ্রুত দূর করে নি¤œ ও মধ্য আয়ের মানুষের জন্য খাদ্যসহায়তা কার্যক্রম বাড়িয়ে এই সংকট দূর করতে হবে।
পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম। যে কারণে ডিমের দাম বাড়ছে। প্রান্তিক খামারিরা ঝরে যাওয়াও ডিমের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ। বর্তমানে করপোরেট ব্যবসায়ীরা এসএমএসের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন।
সরকারের সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় বিষয়টি জানার পরও এসব সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের নিয়েই সমস্যা সমাধানের জন্য মিটিং করেন। তিনি বলেন, ছোট খামারিরাই বাজারে বেশি অর্থাৎ ৮০ শতাংশ উৎপাদন তাদের হাতে, অথচ তাদের সরকার ডাকেন না। এ সংকট গত দুইমাস আগেই সৃষ্টি হয়েছে। এখন তা বাজারে প্রভাব পড়েছে।
তিনি আরো বলেন, সরকার এখনই ব্যবস্থা না নিলে সংকট আরো বাড়বে, বাজারে ডিম-মুরগির দাম আরো চড়া হবে। সুতরাং খামারিকে প্রটেকশন না দিলে অবস্থা ধীরে ধীরে জটিল হতে থাকবে। এজন্য যারা উৎপাদন ছেড়ে গেছে তাদের পুনরায় উৎপাদনে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা নিতে হবে।
খিলগাঁও বাজারে কেনাকাটা করতে আসা ফরিদ উদ্দিন নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী জানান, ব্যবসায়ীরা অল্প বৃষ্টি হলে সেটিকে অজুহাত বানিয়ে সবজির-ডিমের দাম বাড়িয়ে দেন। এটি নতুন কিছু নেই। তিনি বলেন, আসলে আমাদের দেশে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা খুব দুর্বল। যার ফলে ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা নিজেদের মতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। কাওরান বাজারের ডিম বিক্রেতা মফিজ উদ্দিন বলেন, ডিমের সরবরাহ কমার কারণে ডিমের দাম বেড়েছে। সরবরাহ বাড়লে আবার কমে যাবে।
আরেক ডিম ব্যবসায়ী আমান উল্লাহ বলেন, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বাজারে সবজির সরবরাহ কম। এছাড়া বৃষ্টির কারণে অনেকেই বাসাবাড়ি থেকে বের হয়ে বাজারে যেতে পারেননি। ফলে ডিমের ওপর নির্ভরশীলতা কিছুটা বেড়েছে। এতে ডিমের চাহিদা বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দামে। তবে বাড়তি এ দর বেশি দিন থাকবে না বলে জানান তিনি। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই দাম কমে যাবে বলে মনে করেন আমান উল্লাহ।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরায় পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। তিন দিনের ব্যবধানে দাম বেড়েছে সব ধরনের সবজির। বেগুন প্রতি কেজি ৮০ টাকা, পটল কেজি ৬০ টাকা, টমেটো ২৪০ থেকে ৩০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫৫ টাকা, ঝিঙে ৭৫ টাকা, করলা ৮৫ টাকা,কাঁকরোল ৭৫ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, লাউ ৬০ টাকা, বরবটি ৯০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, গাজর ১৪০ টাকা, আলু ৪০ টাকা এবং পেঁপে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কাঁচা মরিচ ২০০ টাকা থেকে বেড়ে ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে দাম বেড়েছে সব ধরনের মাছের। ভরা মৌসমেও ইলিশের দাম অনেক বাড়তি। বাজারে ইলিশ এলে অন্যান্য মাছে দাম কিছুটা কমে যায়, তবে এবার তার ব্যতিক্রম। বর্তমানে প্রতি কেজি টেংরা মাছ ৮৫০ টাকা, পাবদা ৬০০ টাকা, শিং ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা, রুই ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, মৃগেল ৩২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মাঝারি আকারের ইলিশ ১০০০ টাকা কেজি এবং ১ কেজি ওজনের বড় ইলিশ ১৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে চালের দাম বেড়েছে ৫০ কেজির বস্তা প্রতি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৩-৫ টাকা। চালের আড়তদাররা বলছেন, এক সপ্তাহ ধরে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। ৫০ কেজি চালের বস্তায় ২০০ টাকার বেশি বেড়েছে। নগরীর খুচরা বাজারে অন্যান্য চালের মধ্যে মাঝারি মানের বিআর ২৮ চাল খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৪ টাকা কেজি। মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬৮ থেকে ৭৫ টাকা। আর নানা পদের নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মোসাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, এটা একটা ইঁদুর-বিড়াল খেলার মতো। বিভিন্ন উৎসবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে গেলে অভিযান চালানো হয়। এতে সাময়িক স্বস্তি আসে, কিন্তু সমস্যা রয়ে যায়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, বিক্রেতারা অতিরিক্ত মূল্য নিয়ে বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে কিনা, সেটা খতিয়ে দেখতে অধিদপ্তর অভিযান চালাচ্ছে।
Leave a Reply