নুপা আলম, প্রতিদিনের বাংলাদেশ
মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামী নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে কক্সবাজারের চকরিয়ায় গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সময় মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য জাফর আলম। ওই মিছিলের সামনে একজনকে ভারী অস্ত্র হাতে দেখা গেছে। এ ছাড়া অধিকাংশ লোকের হাতেই ছিল লাঠিসোটা। পরে এমপিকে হেলমেট পরা অবস্থায় দেখা যায়।
প্রতিদিনের বাংলাদেশের হাতে আসা ঘটনার দিনের কয়েকটি ভিডিও ও ছবিতে এমপি জাফর আলমের নেতৃত্বে মিছিল করতে দেখা যায়। এদিকে স্থানীয়রা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেও অস্ত্রধারী ও হেলমেট পরা ওই নেতাদের শনাক্ত করলেও তারা বিষয়টি অস্বীকার করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সংসদ সদস্য জাফর আলমের নেতৃত্বে মিছিলের সামনে ছিলেন একজন ভারী অস্ত্রধারী। হাঁটতে হাঁটতে তিনি ফাঁকা গুলি ছোড়েন। পরে এমপি ও ওই অস্ত্রধারীকে হেলমেট পরা অবস্থায় দেখা যায়। ভিডিওটি দেখা যায়, সাদা পাঞ্জাবি পরা এমপি জাফরকে মধ্যে রেখে মহাসড়কের চিরিংগা স্টেশনে একটি মিছিল। মিছিলের সামনে কালো পাঞ্জাবি পরা এক যুবকের হাতে ভারী অস্ত্র। মিছিল এগিয়ে যেতে যেতে অস্ত্রধারী ওই যুবক ফাঁকা গুলি ছুড়ছেন। এমপির পাশে ছিলেন কালো পাঞ্জাবি পরা চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়ন আলমগীর চৌধুরী। অস্ত্রধারী যুবকের নাম মিজানুর রহমান। তিনি পৌর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, সাদা পাঞ্জাবি পরা হেলমেট মাথায় ব্যক্তিটি এমপি জাফর আলম। আর হেলমেট মাথায় কালো পাঞ্জাবি পরা যুবকের নাম মিজানুর রহমান। তিনি চকরিয়া পৌর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এমপির নেতৃত্বে মিছিলসহকারে সংঘর্ষে অংশ নিয়েছিলেন তারা। মিছিলের শেষদিকে এমপি এবং অস্ত্রধারী যুবক হেলমেট পরেন।
সংঘর্ষের সময়কার আরেকটি ভিডিওতে এমপি জাফরের পিএস আমিন চৌধুরীকে দেখা গেছে একটি মিছিলে। সেই মিছিলে থাকা লোকজনের হাতে ছিল লাঠিসোটা ও হেলমেট।
আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলমের প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজি এবারই প্রথম না। বিভিন্ন সময় তার প্রকাশ্য অস্ত্র প্রদর্শন ও গুলি করার ঘটনা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে জাফর আলমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়ন আলমগীর এবং পৌর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তারা ধরেননি।
তবে পিএস আমিন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি একটি হোয়াটস অ্যাপে বার্তা পাঠান। তাতে লেখা হয়েছে, ‘ভিডিওটির বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই এবং আমার উপস্থিতির কথা সঠিক নয়।’
এর আগে ঘটনার দিন সংবাদ মাধ্যমে একটি ছবি প্রকাশ হয়। তাতে ভারী অস্ত্র হাতে এক যুবককে দেখা যায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তার নাম বেলাল উদ্দিন। তিনি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি। তবে বেলালের দাবি, হেলমেট পরা সশস্ত্র সেই ব্যক্তিটি তিনি না। এমনকি ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িতও নন।
এদিকে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে পৌর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চকরিয়ায় সংঘাত-সহিংসতার সময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ বা কোনো সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনো অস্ত্রবাজি করা হয়নি। জামায়াত-শিবির ও বিএনপির সশস্ত্র সন্ত্রাসীরাই ওইদিন প্রশাসনের কর্মকর্তা, পুলিশ বাহিনীর ওপর ন্যক্কারজনক হামলা ও তাদের ব্যবহৃত সরকারি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। এ খবর পেয়ে তারা শান্তি মিছিল নিয়ে বের হন। কিন্তু তার আগেই মহাসড়ক থেকে আধা কিলোমিটার দূরে বায়তুশ শরফ সড়কের মাঝামাঝি স্থানে ফোরকানুল ইসলাম নামের একজন নিরীহ ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির সন্ত্রাসীরা। সেই হত্যাকাণ্ডটি আওয়ামী লীগের ওপর চাপিয়ে দিয়ে শান্ত চকরিয়াকে অশান্ত করার চেষ্টা চলছে।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, এ ধরনের ভিডিও তার নজরে আসেনি। সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে সংঘাত-সংঘর্ষে অস্ত্রধারী লোকজনকে শনাক্ত করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তারা যদি জড়িতদের শনাক্ত করতে পারে, তাহলে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নিতে পারে।
বিষয়টি মিথ্যা বলে দাবি করেছেন চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু। তিনি জানান, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কেউ সংঘর্ষে ছিলেন না। জামায়াত-বিএনপি এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিষয়টি বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে পরিষ্কার করা হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানান, সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে চকরিয়ায় সংঘাতে অংশগ্রহণকারী অস্ত্রধারীদের এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তাদের শনাক্ত করতে পুলিশ কাজ করছে। এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অস্ত্রধারীদের শনাক্ত করা সম্ভব হলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
মঙ্গলবার বিকালের গায়েবানা জানাজা চালাকালে ওই সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজনের মৃত্যু এবং ৬ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষের ওই ঘটনায় ছয়টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৪৬৬ জনের নাম উল্লেখ করে ১১ হাজার ৯০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। সুত্র. প্রতিদিনের বাংলাদেশ
Leave a Reply