বিশেষ প্রতিবেদক:
কক্সবাজার জেলার ঈদগাহ উপজেলাসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় সাঈদীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশের কারণে বহিষ্কার আতংকে ভুগছে আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের বেশ কিছু নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে ঈদগাও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং জালালাবাদ ইউপি নৌকা মার্কার চেয়ারম্যান ইমরুল রাশেদ, কক্সবাজার সদর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজীবুল হক চেীং লিপু, (সহ-সভাপতি মিজানুল হক একজন এমপির পিএস ও সাবেক শিবির ক্যাডার), ঈদগাহ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবু হেনা মিশাত ও ঈদগাহ কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সোহেল মাহমুদ রুহান সাঈদীর মৃত্যুতে শোক বার্তা দিয়েছেন।
ঈদগাহ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবু তালেব এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান- ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে রিলিফের কাপড় দিয়ে দাফন কাজ সম্পন্ন করেছে ঘাতকরা। আমরা ইতিহাস ভুলেগেছি। ইমরুল রাশেদ একজন নৌকা মাকার চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাঈদীর মৃত্যুনিয়ে কোন পোস্ট করতে পারে না। ইমরুল রাশেদের এধনের কাজের জন্য আমি ক্ষুভ ও দু:খ প্রকাশ করছি বলে জানান তিনি।
শোক বার্তা দেওয়া নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এড.ফরিদুল ইসলাম চৌধূরী জানান- এব্যাপারে এখনো পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
ঈদগাহ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সোহেল জাহান চৌধুরী জানান- একজন নৌকা মার্কার চেয়ারম্যান ,উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ইমরুল রাশেদ কে অনেকেই ফলো করে- তাছাড়াও তিনি সরকারদলীয় ব্যক্তি হয়ে সাঈদীর শোক বার্তা দেওয়া কখনো শুভ লক্ষণ নয়। তা দলের জন্য অমঙ্গল বলে মনে করি এবং আশা করি জেলা আওয়ামীলীগ সংগঠন অনুযায়ী সায়েস্ত করবেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে কক্সবাজার অঞ্চলে আওয়ামীলীগে ও অঙ্গ সংগঠনে বেশ কিছু অনুপ্রবেশধারী ডুকে পড়েছে। যাহা আওয়ামীলীগের জন্য অশনিসংকেত। হাইব্রিডরা মুজিব কোর্ট কে তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। আওয়ামীলীগের অঙ্গ সংগঠনে পদপদবী পেতে অনেক ইয়াবা কারবারীরা স্থানীয়ও কেন্দ্রীয় নেতাদের ঘরে ঘরে ধন্না দিচ্ছে। সুবিধা ও পদপদবী নিতে বিমান ভাড়া ও হোটেল বুকিংসহ নেতাদের পাশে দাড়িয়ে সেলফি ব্যবসা চালাচ্ছে। এসব অনুপ্রবেশধারীদের কারনে তৃণমুল আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা অসহায়ত্বে ভোগছে। নেতাদের প্রটুকল দিতে হাইব্রিডরা যতেষ্ট; মাঠে সঠিক কর্মী নেই। আবার অনেক অনুপ্রবেশধারী মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারও চালাচ্ছে। আওয়ামীলীগে ডুকে পড়েছে জামাত!
চারিদিকে শুধু হাই হাই অবস্থা!
কক্সবাজার সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের এক নেতা ১৫ই আগস্ট শোক দিবসের অনুষ্টান থেকে ১ ডেকসি গরুর মাংস ভুরি ভোজের জন্য কালো গাড়ীতে করে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। যাহা তৃণমুল আওয়ামীলীগ ব্যাপক ভাবে হতাশা প্রকাশ করে।
মানবতাবিরোধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশের ঘটনায় দেশ ব্যাপী ছাত্রলীগে বহিষ্কার ও অব্যাহতির হিড়িক পড়েছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৬৮ জনকে ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার ও অব্যাহতি দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও অন্য মাধ্যমে কেউ শোক প্রকাশের সঙ্গে জড়িত কিনা সে ব্যাপারেও অনুসন্ধান চলছে।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, জামায়াত নেতা সাঈদীর মৃত্যুর পরই ছাত্রলীগের অনেক পদধারী নেতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশ করতে থাকেন। এর পরই নড়েচড়ে বসেন সংগঠনটির ঊর্ধ্বতন নেতারা। যারা শোক প্রকাশ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়। শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত ছাত্রলীগের বিভিন্ন শাখা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী ৬৮ জনকে সাময়িক বহিষ্কার এবং অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল পান্থ সাংবাদিকদের জানান, সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করায় অনেককে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। তবে ঠিক কত জনকে এখন পর্যন্ত অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তার সঠিক হিসাব আমার কাছে নেই। আমাদের কাছে সুপারিশগুলো এলে বলতে পারবো ।
তিনি আরও বলেন, যাদের স্থানীয়ভাবে সাময়িক বহিষ্কার কিংবা অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছেÑতাদের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা নিয়ে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে অভিযোগগুলো এলে যাচাই-বাছাই করে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।
পাবনায় সাময়িক বহিষ্কৃত নেতাকর্মীরা হলেন জেলা সদরের ভাঁড়ারা ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম শেখ, গয়েশপুর ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমন খান, চাটমোহরের ফৈলজানা ইউনিয়ন সমাজসেবা সম্পাদক মামুন হোসেন, আতাইকুলা ইউনিয়নের সহ-সম্পাদক আশিক খান, আতাইকুলা থানার ভুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, চাটমোহর উপজেলার কর্মী রাকিবুল হাসান ও বেড়ার কর্মী আবু বকর সিদ্দিক।
সাতক্ষীরায় সাময়িক বহিষ্কার হওয়া নেতাকর্মীরা হলেন তালা উপজেলার সহসভাপতি সাইফুদ্দীন আজাদ ও মাহিন ইসলাম এবং সীমান্ত আদর্শ কলেজ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আশিক কবির।
জামালপুরে অব্যাহতি পাওয়া নেতাকর্মীরা হলেন ইসলামপুর উপজেলার সহসভাপতি মিজানুর রহমান, সহ-সম্পাদক মুসা আহমেদ, ইসলামপুর সরকারি কলেজ শাখার সদস্য মুরসালিন উদ্দিন, গাইবান্ধায় ইউনিয়ন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনির সরকার, চরপুটিমারী ইউনিয়ন সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম, নোয়ারপাড়া ইউনিয়ন সহ-সভাপতি আশিকুর রহমান, কর্মী আবদুল কাইয়ুম ও জয় মামুন, মেলান্দহ উপজেলা সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক ইউসুফ আলী, সদস্য আশরাফুল সালেহিন, মেলান্দহ পৌর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আসিফ আহমেদ, মেলান্দহ সরকারি কলেজ শাখা সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান, নাংলা ইউনিয়ন দপ্তর সম্পাদক বরকতুল্লাহ ফারাজী, হাজরাবাড়ি পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি ফাহিম চৌধুরী, কুলিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড শাখার সাধারণ সম্পাদক সুমন ইসলাম, জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি সাইম কবির, বকশীগঞ্জ উপজেলা যুগ্ম আহ্বায়ক শোয়েব আল হাসান ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সানন্দবাড়ি সাংগঠনিক থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা এবং সাতকানিয়া, সন্দ্বীপ ও লোহাগাড়া উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের ১২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তারা হলেন সন্দ্বীপ উপজেলার সহ-সম্পাদক মো. রুস্তম, কার্যনির্বাহী সদস্য মো. আফসার ও পৌরসভার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, সাতকানিয়ার সদর ইউনিয়ন সভাপতি মোহাম্মদ তারেক, দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কর্মসংস্থানবিষয়ক উপসম্পাদক সাজেদুল হক ও সহসম্পাদক শাহজাহান হাবীব, সাতকানিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়ন সভাপতি মোহাম্মদ তারেক এবং লোহাগাড়ার বড় হাতিয়া ইউনিয়ন শাখা সহসভাপতি মো. ইরফান, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. বাইজিদ, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইমন চৌধুরী, আইনবিষয়ক সম্পাদক শাহরিয়া আলম, উপক্রীড়া সম্পাদক মো. কায়েস ও উপদপ্তর সম্পাদক মো. ইরফান।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে আধুনগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের চার নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তারা হলেন সহ-সভাপতি মো. জিসান, সাংগঠনিক সম্পাদক ইমাম হোসেন, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক রাকিবুল হোসেন এবং উপত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হেফাজ উদ্দিন।
নরসিংদীর বহিষ্কৃত নেতাকর্মীরা হলেন পলাশ উপজেলার সহ-সভাপতি নাসিম মিয়া, জিনারদী ইউনিয়ন সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান, মাধবদী থানা সহ-সভাপতি সুজন ভূঁইয়া, সদরের পাইকারচর ইউনিয়ন সহ-সভাপতি শরীফুল ইসলাম, মনোহরদীর কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন যুগ্ম আহ্বায়ক জে এস জুনাইদ ও বেলাবর নারায়ণপুর ইউনিয়নের যুগ্ম আহ্বায়ক সাকিব আহমেদ।
Leave a Reply