আব্দুল আলীম নোবেল
ভূমি অফিসকে কেন্দ্র করে যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই দুর্নীতি প্রতিরোধে এবার উমেদার ছাঁটাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান। এ নিয়ে তিনি গত কিছুদিন আগে সংশ্লিষ্ট উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও তহসিলদারদের কড়া নির্দেশ প্রদান করেন বলে জানা গেছে। এরপরে কিছুদিন মাত্র ভুমি অফিস পাড়ায় পরিবর্তনের চিত্র দেখা মিললেও এখন আগের চিত্রে ফিরে এসেছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
তবে ভুমি অফিসে নিয়মিত স্টাফ বদলি হলেও উমেদার থেকেই যায়। ভূমি অফিস কেন্দ্রিক দালালদের আধিপত্যের পেছনে এ উমেদাররাই দায়ী। দুর্নীতিমুক্ত ভূমি অফিস গড়তে জেলা প্রশাসন কার্যক্রম হাতে নেওয়ায় এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান সচেতন মহল।
স্থানীয় লোকজনের কাছে উমেদার নামে পরিচিত হলেও মূলত তাঁরা ‘দালাল’। কক্সবাজার ভূমি অফিস ঘিরে তৎপর এমন দালালের সংখ্যা অন্তত কয়েক শতাধিক। তাঁদের কাজ ভূমি অফিসের কর্মচারীদের যোগসাজশে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে ঘুষ আদায় করা। এমনকি অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রও থাকে তাঁদের জিম্মায়।
শুধু কক্সবাজার নয়, দেশের প্রায় সব ভূমি অফিসেরই একই চিত্র। ঘুষ ছাড়া সেবা মেলে না কোথাও। সেখানে পা বাড়ালে জমির মালিকদের জন্য পদে পদে অপেক্ষা করে হয়রানি। এ জন্য অনেকে ভূমি অফিস এড়িয়ে চলতে চান। জরুরি প্রয়োজনে দালালেরাই হয়ে ওঠেন সমাধান।
গ্রাম এলাকায় জমির কাগজসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা সমাধানে প্রথমেই যেতে হয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। পরের ধাপে সেবা দেয় উপজেলা ভূমি অফিস। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন এসব অফিসের দেওয়া সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছেÍভূমিহীনদের মাঝে কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত, খতিয়ানের ভুল সংশোধন, নামজারি ও জমাভাগ, ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণীর আপত্তি-নিষ্পত্তি, দেওয়ানি আদালতের রায় বা আদেশমূলে রেকর্ড সংশোধন, ভূমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন নিষ্পত্তি, জমা একত্রকরণ ও বিবিধ কেসের আদেশের নকল বা সার্টিফায়েড কপি প্রদান ইত্যাদি। এখানেই তারা সুযোগ নিয়ে মেতে উঠে দুর্নীতি-অনিয়মে। তাদের এমন গভীরে থাকা শেকড় উপড়ে ফেলতে এখনই সময় এসেছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
ওমেদার নামদারী দালালদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদক আব্দুল আলীম নোবেল গত কিছু দিন আগে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করেন তিনি।
কক্সবাজার জেলার ও বিভিন্ন উপজেলার রাজস্ব প্রশাসনের ওমেদার নাম দারী দালালদের নামের তালিকা তৈরি করেন প্রতিবেদক। এখানে উঠে এসেছে অনেক জনের নাম কক্সবাজার সদর ভূমি অফিসে রয়েছে মোহাম্মদ, জুয়েল (মামলা তালাশকারী), শামসুল আলম প্রকাশ চিকন সমসু, ছোটন দে, মোহাম্মদ আবু, আব্দু ছব্বির (নকল লেখক), হৃদয়, ইকবাল, রাজু সেফায়েত হোসেন, এছাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ঈদগাঁও যারা রয়েছে, আব্দু শুকর (এম. আর কে ইচ তদন্তকারী), মোঃ সামসু, মোহাম্মদ মনজুর, ফয়সাল, খোরশেদ (দাখিলী প্রদানকারী) শামসুল আলম প্রকাশ জঙ্গি চেয়ারম্যান বিকাশ দে, টিপু (নামজারী কন্ট্রাকটর)।
ইউনিয়ন ভূমি অফিস, পি.এম খালী মোঃ সমণ্ডল আলম (নামজারী কন্ট্রাকটর) মোঃ শামিম (খতিয়ান তামিলকারক) ইউনিয়ন ভূমি অফিস, সদর, কক্সবাজার সুলতান আহামদ,জয়নাল আবেদীন (নামজারী কন্ট্রাকটর), মিস্টার বাবু (দাখিলা প্রদানকারী), মোহাম্মদ সরোয়ার, সাহেব উদ্দি, আব্দুস সাত্তার, মোহাম্মদ শফিকসহ নাম না জানা আরো ৫/৭ জন।
উপজেলা ভূমি অফিস রামুতে যারা রয়েছে, কায়েশ বড়ুয়া (রেকর্ড কিপার ও মামলার তালাশ কারি) টিপু বড়ুয়া (নামদারী কন্ট্রাক্টর) উজ্জ্বল বড়ুয়া, তপু বড়ুয়া (ডিসিআর প্রদানকারী), আজগর আলি প্রকাশ আজগর, রানা। এছাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস রামু, আনসারুল করিম রিপন, সাদ্দাম হোসেন, কোরবান আলী, সিরাজ মিয়া, বাপ্পা বড়ুয়া, আমজাদ আহমদ, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, রামু গর্জনিয়া যারা রয়েছে, মোঃ সেলিম নামজারি কন্ট্রাক্টর, সাদ্দাম হোসেন।
উপজেলা ভূমি অফিস টেকনাফে যারা রয়েছে, আব্দুল হাকিম, ওবায়দুল্লাহ, জয়নাল আবেদীন, বিজয় পাল সহ ইউনিয়ন ভূমি অফিস টেকনাফ সদর, মোহাম্মদ ওমর ফারুক আক্তার, হোসেন, ইব্রাহিম, মোহাম্মদ ফারুক, এরশাদ, আব্দুল্লাহ।
ইউনিয়ন ভূমি অফিস টেকনাফ বাহারছড়ায় রয়েছে, মোহাম্মদ সাজ্জাদ। ইউনিয়ন ভূমি অফিস হ্নীলায় শাহাবুদ্দিন, আফসার উদ্দিন, নুরুল আলম, মোহাম্মদ লালু, মোহাম্মদ তারেক।
মহেশখালী উপজেলা ভূমি অফিসে যারা রয়েছেন, প্রণব কান্তি দে নামজারি কন্ট্রাক্টর, ইউনিয়ন ভূমি অফিস গরোকঘাটায়, মহিউদ্দিন সিপাহিপাড়া, সাদেক উল্লাহ। ইউনিয়ন ভূমি অফিস কেরনতলি, শাহ আলম এছাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস কালামারছড়া, ছগির আহমদ সহ তালিকা তৈরির কাজ চলছে চকোরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া উপজেলার সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে ওমেদার ও দালালদের তালিকা তৈরি করে পরবর্তী প্রতিবেদনে সংবাদ প্রকাশ করা হবে।
ভূমির সংশ্লিষ্ট সচেতন মহল দাবি তুলছেন উমেদার নামধারী দালালেরা থাকলে রাষ্ট্রীয় সম্পদ কোনভাবে নিরাপদ নয়। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে দাবি তুলছেন সচেতন মহল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ঈদগাঁও চৌফলদন্ডী মৌজার সৃজিত খতিয়ান নং- ৫১২২, ৫১৯৬, ৫১৭১, ৫১৭০, ৫১৫৯, ৫১৬০, ৫১৫৮, ৫১৭৫, ৫১২৩ ও ঈদগাঁও মৌজার সৃজিত খতিয়ান নং- ১১৪৬৭, ১১৪৫৩ ও গোমাতলী মৌজার সৃজিত খতিয়ান নং- ১৪০৯ ও ভারুয়াখালী মৌজার সৃজিত খতিয়ান নং- ৩৪১৫ এবং কক্সবাজার ঝিলংজা মৌজার খতিয়ান নং- ২০৪৭, ২০৬৭, ২১০৩, ২০৫১ জেলার ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি গেলে জানাযায় উল্লেখিত খতিয়ানগুলি সম্পূর্ণ ভূঁয়া ভাবে সৃজিত বলে প্রমাণিত হয়।
বর্তমানে সরকারী কর্মচারীদের কিছু পদ খালি থাকার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির ওমেদার নামদারী দালালগণ এই অপকর্মের সাথে জড়িত রয়েছে । ওমেদার নামজারী দালালগণের কারণে অফিসের গোপনীয়তা জাল, জালিয়াতী ও নথি গাইপের মতো কাজ কর্ম করে থাকে তারা।
তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে অদূর ভবিষ্যতে রাজস্ব প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারীগণ প্রশ্নের সম্মুখীন হবে।
এ বিষয়ে উপসহকারী কর্মকর্তা আব্দুল করিম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানা, আমার অফিসে জেলা প্রশাসন মহোদয় নির্দেশনার পরে উমেদার ছাড়াই করে দিয়েছি। তবে মৌখিকভাবে এমন কথা বললেও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় উমেদারদের উপস্থিতি।
Leave a Reply