বিশেষ প্রতিবেদক :: কক্সবাজার শহরের হলিডের মোড় এলাকায় হোটেল সানমুনের কক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নেতা সাইফ উদ্দিনের (৪৫) লাশ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য এখনো উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কোনো মামলাও হয়নি। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করা হলেও জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সোমবার রাত সোয়া ১২টার দিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং এলাকা থেকে আশরাফুল ইসলাম নামের এক তরুণকে আটক করেছে পুলিশ। সিসিটিভির ফুটেজে মুখে মাস্ক ও পাঞ্জাবি পরিহিত যে তরুণকে সাইফ উদ্দিনের কক্ষ থেকে বেরিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যেতে দেখা গেছে, আটক আশরাফুলকে সেই তরুণ বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে আশরাফুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ হোটেল সানমুনের দ্বিতীয় তলার ২০৮ নম্বর কক্ষ থেকে সাইফ উদ্দিনের হাত বাঁধা রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে। বিকেলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। হোটেল সানমুনের একজন কর্মচারী বলেন, রোববার রাতে সাইফ উদ্দিন দুজনকে সঙ্গে নিয়ে হোটেলের দ্বিতীয় তলার ২০৮ নম্বর কক্ষে উঠেছিলেন।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাজমুল হুদা বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে আটক করে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের কাছে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। রাতে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত মুখে মাস্ক ও পাঞ্জাবি পরিহিত এক তরুণকে খুঁজছে পুলিশ। হোটেলের সিসিটিভি ফুটেছে পাঞ্জাবি পরা ওই তরুণকে সাইফ উদ্দিনের কক্ষ থেকে বেরিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যেতে দেখা গেছে।
নিহত সাইফ উদ্দিনের বাড়ি শহরের ঘোনাপাড়ায়। তাঁর বাবা সাবেক আনসার কমান্ডার আবুল বাশার। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফ উদ্দিন কক্সবাজার শহর আওয়ামী লীগের দুর্যোগ ও ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। সাইফ সব সময় কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের সঙ্গেই থাকতেন।
২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে করা একটি রাজনৈতিক মামলার আসামি হিসেবে হাজিরা দিতে গত বৃহস্পতিবার কক্সবাজার আদালতে যান সাইফ উদ্দিন। এ মামলায় তিনি তিন বছর কারাগারে ছিলেন।
আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, সাইফ উদ্দিনকে পরিকল্পিতভাবে হোটেল কক্ষে চেতনানাশক কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করে হত্যা করা হয়েছে। সাইফ উদ্দিনের লাশ দুই হাত বাঁধা অবস্থায় খাটের ওপর পড়ে ছিল। ডান পা, বুক ও গলায় একাধিক ছুরিকাঘাতের দাগ ছিল। হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সোমবার বিকেলে শহরের প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ।
শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম বলেন, হত্যাকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজে মুখে মাস্ক ও পাঞ্জাবি পরিহিত যে তরুণকে সাইফ উদ্দিনের কক্ষে ঢুকতে দেখা গেছে, তাঁকে দ্রুত শনাক্ত করা জরুরি। তাঁরা দ্রুততম সময়ে সাইফ উদ্দিন হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন এবং হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার চান।
সাইফ উদ্দিনের হত্যা পরিকল্পিত দাবি করে পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, সাইফ উদ্দিন হত্যার সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক কিংবা হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যর্থ পুলিশ। পুলিশের নির্লিপ্ততার কারণে শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি হচ্ছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, খাটের ওপর পড়ে থাকা সাইফ উদ্দিনের শরীরে একাধিক ছুরিকাঘাতের দাগ রয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে সাইফ উদ্দিনের কক্ষ থেকে মুখে মাস্ক ও পাঞ্জাবি পরিহিত যে তরুণকে বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে, তাঁকে ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি হত্যার মূল রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
Leave a Reply