কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে প্রায়ই ঘটছে খুনাখুনি। মাদক কারবার, চোরাচালান, অপহরণ ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধে জড়াচ্ছে নানা গ্রুপ। নিজ দেশে এখনও ফেরত পাঠাতে ব্যর্থ হওয়ায় বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এ দেশের জন্য বোঝা হয়ে উঠছে। কক্সবাজার থেকে তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায়ও ছড়িয়ে পড়ছে; পরিচয় গোপন করে নিচ্ছে বাংলাদেশি পাসপোর্ট। দিন যত যাচ্ছে, ততই ভারী হচ্ছে রোহিঙ্গা বোঝা।
বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের কবে তাদের নিজ ভূমিতে ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে– এর স্পষ্ট উত্তর কারও কাছে নেই। কারণ, তাদের ঘিরে অনেক দেশের রয়েছে ‘স্বার্থের দ্বন্দ্ব’। মানবিক জায়গা থেকে তাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে কক্সবাজার ও আশপাশের জনপদে বেড়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকি। আবার রোহিঙ্গাদের ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বাংলাদেশ সরকারকে মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এরপরও থামানো যাচ্ছে না অপরাধী চক্রকে। অন্তত ১১টি সশস্ত্র গ্রুপ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সক্রিয়। নিজেদের মধ্যে সংঘাত ছাড়াও তারা মাঝেমধ্যে রোহিঙ্গা মাঝিদের (রোহিঙ্গা নেতা) খুন করছে। ছয় বছরে ক্যাম্পে হত্যার শিকার হয়েছে ১৭৬ জন। শুধু গত এক বছরে ৪৬ জন খুন হয়েছে।
শেষজ্ঞরা বলছেন, সক্রিয় কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে দ্রুত রোহিঙ্গাদের সম্মানের সঙ্গে নিজ মাটিতে ফেরানো জরুরি। এটা করা না গেলে সামনে নতুন নতুন সংকট তৈরি হবে। ক্যাম্প ঘিরে অপরাধের পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকিও বাড়বে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরসি) মিজানুর রহমান সমকালকে বলেন, যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরানোর চেষ্টা করছি। রোহিঙ্গারাও নিজ ভূমিতে ফিরতে ব্যাকুল। তবে কিছু সন্ত্রাসী গ্রুপ প্রত্যাবাসন বাধাগ্রস্ত করতে চায়।
তিনি বলেন, রাখাইনের নর্থ মংডু এলাকার কিছু রোহিঙ্গাকে ফেরানোর ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছে মিয়ানমার।
তবে আমরা চাচ্ছি, আশ্রয় নেওয়া সবাইকে ফেরাতে। মিজানুর রহমান আরও বলেন, হতাশার কারণে অনেক রোহিঙ্গা অপরাধে জড়াচ্ছে। আর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে নানা ধরনের কৌশল নিচ্ছে মিয়ানমার। এখন আবার আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে একটি প্রতিনিধি দল আসতে চায়। আন্তর্জাতিক আদালত এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টি হলেই তারা নানা ধরনের নাটক করতে থাকে। আন্তর্জাতিক আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে আবার সময় চেয়েছিল মিয়ানমার। তবে তাদের আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদ বলেন, এ অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গা সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশকে যতটা সক্রিয় দেখা যায়, আমাদের অনেক বন্ধু রাষ্ট্রকে সেই ভূমিকায় দেখা যায় না। কিছু কিছু পশ্চিমা দেশ রোহিঙ্গাদের মানবিকতার বিষয়টি মাঝেমধ্যে সামনে আনছে। তবে তারা রোহিঙ্গাদের সম্মানের সঙ্গে তাদের বাপদাদার বাস্তুভিটায় ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে সেভাবে সোচ্চার নয়। এটাও সত্য যে, সম্মানের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো সবচেয়ে কঠিন কাজ। আমাদের কূটনৈতিক অগ্রাধিকারে এটি রয়েছে। সক্রিয় কূটনীতির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে হবে।
Leave a Reply