1. coxsbazarekattorbd@gmail.com : Cox's Bazar Ekattor : Cox's Bazar Ekattor
  2. coxsekttornews@gmail.com : Balal Uddin : Balal Uddin
বর্ডার ভেঙ্গে মিয়ানমারে ঢুকে যাবো - Cox's Bazar Ekattor | দৈনিক কক্সবাজার একাত্তর
সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:৪৯ অপরাহ্ন

বর্ডার ভেঙ্গে মিয়ানমারে ঢুকে যাবো

  • আপলোড সময় : রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৩
  • ৪৫ জন দেখেছেন

ঠিক ছয় বছর আগে। ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নারকীয় নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে রাখাইন রাজ্য থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুদের ঢল নেমেছিল বাংলাদেশে। এই দিনটিকে স্মরণ করতে শুক্রবার (২৫ আগস্ট) কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে সমাবেশ করেছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। সমাবেশ থেকে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার এবং দ্রুত প্রত্যাবাসন না হলে একযোগে বারো লাখ রোহিঙ্গা স্বদেশে ফিরে যাবে বলে মিয়ানমার সরকারকে হুঁশিয়ারি দেয়।
রোহিঙ্গা এফডিএমএন রিপ্রেজেনটেটিভ কমিটি বোর্ড মেম্বার মাস্টার ছৈয়দ উল্লাহ বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আমরা আরো জোর দাবি জানাবো। এরপরও যদি আমাদেরকে না নিয়ে যায় তখন আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা নিয়ে বর্ডার ভেঙ্গে আমাদের দেশ মিয়ানমারে ঢুকে যাবো।

২০১৭ সালের ২৫শে আগষ্ট। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংস নির্যাতনের শিকার হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারমুখী হয়। তারা দিনটাকে গণহত্যা দিবস হিসেবে গণ্য করে। তাই একই সঙ্গে দিনটিকে স্মরণ করতে এবং স্বদেশে ফিরে যেতে আয়োজন করে সমাবেশ।

শুক্রবার সকাল ৯টায় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৩ টি ক্যাম্পে একযোগে শুরু হয় সমাবেশ। মূল আয়োজন হয় উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্পে, তবে বৃষ্টির কারণে সমাবেশ শুরু হয় সাড়ে ১০টায়। এরপর বৃষ্টি উপেক্ষা করে দলে দলে সমাবেশ স্থলে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু।
সমাবেশে ব্যানার, পেস্টুন প্রদর্শনের পাশাপাশি বক্তারা বলেন, জন্মগত মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নাগরিক আমরা, গণহত্যা, জাতিগত নিধনযজ্ঞ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশ পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছি। এটা শরণার্থী জীবন। আমরা এমন জীবন চাই না, স্বদেশ মিয়ানমারে দ্রুত ফিরতে চাই। এর জন্য আন্তর্জাতিক সকল মহলের সহযোগিতা চেয়েছেন রোহিঙ্গারা।
উখিয়ার কুতুপালংস্থ লম্বাশিয়া ১ নম্বর ক্যাম্পে এ সমাবেশে হাজার হাজার রোহিঙ্গা স্লোগান দেয় স্বদেশে ফিরতে চাই, বাড়ি যাবো-বাড়ি যাবো। একই সঙ্গে গণহত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার দ্রুত শেষ করার স্লোগানও দেয়া হয়।
লম্বাশিয়া ক্যাম্পে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আরাকান রোহিঙ্গা পিস ফর হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ জোবায়ের। বক্তব্য রাখেন, রোহিঙ্গা এফডিএমএন রিপ্রেজেনটেটিভ কমিটির মুখপাত্র কামাল হোসেন, রোহিঙ্গা এফডিএমএন রিপ্রেজেনটেটিভ কমিটির বোর্ড সদস্য ছৈয়দ উল্লাহ, নারী সদস্য হামিদা, মোহাম্মদ মুসা, মাস্টার শোয়াইব।
সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা দ্রুত প্রত্যাবাসন না হলে একযোগে বারো লাখ রোহিঙ্গা স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরে যাবার হুঁশিয়ারি দেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার দ্রুত শেষ করার দাবি জানানো হয়।
এফডিএমএন রিপ্রেজেন্টেটিভ কমিউনিটির মুখপাত্র কামাল হোসেন বলেন, অধিকার নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই। আমরা আর রিফিউজি জীবন চাই না। নিজ দেশে গিয়ে বাকি জীবন কাটাতে চাই। কারণ আমরা বাংলাদেশের নাগরিক নই, আমরা মিয়ানমারের নাগরিক। আমাদের নাগরিকত্ব আর নিজ গ্রামের ভিটে-মাটি ফেরত দিলেই আমরা দ্রুত দেশে ফিরে যাব।
কামাল হোসেন আরও বলেন, মিয়ানমার যদি আমাদের স্বদেশে ফেরত না নেয় তাহলে মিয়ানমারের উপর সামনে এমন একটা সময় আসবে সেটা হচ্ছে, ক্যাম্পে একজন রোহিঙ্গাও থাকবে না। সবাই একসাথে যেভাবে এসেছি সেভাবে মিয়ানমারে চলে যাবো এমন একটা পরিকল্পনা করেছি। আমাদের শর্তগুলো যদি পূরণ না হয় যেমন জন্মভূমি ও নাগরিকত্ব যদি না দেয় তাহলে এবার মিয়ানমারের দিকে রোহিঙ্গা ঢলের পরিকল্পনা রয়েছে। মিয়ানমার দ্রুত প্রত্যাবাসন না করলে যা দ্রুত আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করব।
এফডিএমএন রিপ্রেজেন্টেটিভ কমিউনিটির বোর্ড সদস্য মোহাম্মদ মুসা বলেন, নিজ দেশ মিয়ানমারে ২০১৭ সালে চরম বর্বরতার গণহত্যার কারণে নিজেদের ভিটে বাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি। ছয় বছর হয়েছে আর না। পূর্ণ নাগরিক অধিকার দিয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন চাই।
সমাবেশে ৫ দফা উপস্থাপন করেন, আরাকান রোহিঙ্গা পিস ফর হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ জোবায়ের।
এ ৫ দফা হল: রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশে দ্রুত প্রত্যাবাসন, জাতিগত পরিচয়ের স্বীকৃতি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য সেফ জোন, রাখাইন ষ্টেটে নিজেদের ভিটে বাড়ি এবং নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়া।
তিনি ২৫ আগষ্ট কে গণহত্যা ও কালো দিবস আখ্যায়িত করে তারা নিজ ভূমি মিয়ানমারের আরাকানে ফিরে যেতে চায় এবং গণহত্যার বিচার দাবী করেন।
মাস্টার মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, বিশ্বকে আবারও অনুরোধ করছি। বাংলাদেশকে সহায়তা কর এবং মিয়ানমারের চাপ প্রয়োগ কর। মিয়ানমারের সংসদে সবকিছু ঠিক করে রোহিঙ্গাদের যাতে পূর্ণ নাগরিকত্ব, জানমালের নিরাপত্তা ও অধিকার নিয়ে দ্রুত প্রত্যাবাসন করে। যতদিন প্রত্যাবাসন করবে না ততদিন রোহিঙ্গাদের পাশে থেকে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য বিশ্বকে অনুরোধ করছি।
এদিকে উখিয়ার পালংখালীর জামতলী, ময়নারঘোনা, টেকনাফের লেদা ক্যাম্পে বড়ো সমাবেশ হয়েছে। এসময় তাদের নিরাপদ আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানান।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গারা হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছে, তাদের বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
সমাবেশের শেষ পর্যায়ে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রোহিঙ্গারা। আর নিজেদের দেশে ফিরে যেতে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতন ও গণহত্যার শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা দেশ ছাড়া হবার ৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে সমাবেশের আয়োজন। এর আগে, ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট ক্যাম্পে প্রথম বড় সমাবেশ করা হয়, যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাস্টার মুহিবুল্লাহ। পরে তিনি মিয়ানমারের সন্ত্রাসী গ্রুপ আরসার সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন।

শেয়ার করতে পারেন খবরটি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো বিভিন্ন খবর দেখুন

Sidebar Ads

© All rights reserved © 2015 Dainik Cox's Bazar Ekattor
Theme Customized By MonsuR
x