আব্দুল আলীম নোবেল :
কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফে চলতি মৌসুমে সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। এই নিয়ে কৃষকরা কয়েকশ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে দাবি করছেন তারা।
আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ ও কোন প্রকার প্রাকৃতিক দূর্যোগ হানা না দেওয়ার কারণে ফলনে ভরপুর সুপারির বাগানগুলো। বাজারে সুপারির দামও আশাতীত ভাল হওয়ায় কৃষকেরাও খুশি।
সুপারী ব্যবসায়ীরা বলছে,টেকনাফ শামলাপুর বাজার, জাহাজপুরা বাজার, টেকনাফ বাজার, উখিয়া সদর,সোনাপাড়া বাজার, মরিচ্যা বাজার, কোর্টবাজার থেকে সুপারি দেশের বিভিন্ন আড়তে চালান হয়। ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে যেমন সুপারি বাগান মালিকেরা তাদের উৎপাদিত অর্থকারী ফসল সুপারি বাজারজাত করণের মাধ্যমে অনেক অস্বচ্ছল পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আসতে পারে বলে সুপারি ব্যবসায়ীদের অভিমত। টেকনাফ উপজেলার পান-সুপারি উৎপাদনের অন্যতম ইউনিয়ন বাহারছড়া শামলাপুর বাজার ঘুরে সুপারি ব্যবসায়ীদের কথা বলে জানা গেছে, প্রতি শনি ও মঙ্গলবার শামলাপুর বাজার বসে। এ বাজারে অর্থকারী ফসলের মধ্যে পান-সুপারি লেনদেন অন্যতম। শামলাপুর বাজারের পাইকারী ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহর সাথে কথা বলে জানা যায়, ৮০টির একপন সুপারি বেচা কেনা হচ্ছে সাড়ে ৪ শ টাকায়। সে আরো জানায়, প্রতি বাজারের দিন এ বাজার থেকে প্রায় ১৫ টন ওজনের ৫/৬ ট্রাক সুপারি দেশের বিভিন্ন আড়তে যায়। উখিয়ার মনখালীর চাষি মোক্তার আহমদ (৩৫) বলেন, এক কানি (৪০ শতক) জমিতে সৃজিত ৪৫৮টি গাছে সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিটি গাছে সুপারি ধরেছে ৪০০ থেকে ৫০০টি। এবার সুপারির বাজারমূল্য বেশি থাকায় এই বাগান থেকেই প্রায় পাঁচ লাখ টাকার সুপারি বিক্রির মাধ্যমে আয় করা সম্ভব বলে তার ধারণা। সূত্রমতে, আদিকাল থেকেই দেশে টেকনাফ-উখিয়ার সুপারির কদর রয়েছে। টেকনাফের সুপারির সঙ্গে মহেশখালীর পান নিয়ে লোকগানও রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই দেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত শহরে গড়ে উঠেছে বিশাল বিশাল সুপারির বাগান। পাশাপাশি কমবেশি সুপারি বাগান রয়েছে জেলার প্রতিটি উপজেলায়। কক্সবাজারের প্রায় এলাকায় পান দিয়ে অতিথি আপ্যায়নের রীতি চলমান। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমেই একসঙ্গে নামে পাকা সুপারি। সেই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে টেকনাফ-উখিয়াসহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় জমে উঠেছে সুপারির হাট। প্রথম দিকে দাম কম পেলেও এখন বাজারে সুপারির ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরা। কক্সবাজারে সাধারণত বিভিন্ন হাটে -বাজারে সুপারি বেচাকেনা হয়। তবে জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারী হাট টেকনাফ বাহারছড়ার, শামলাপুর বাজার, উখিয়ার সোনারপাড়া বাজার, মরিচ্যা বাজার, কোটবাজার এবং রামু বাজার। টেকনাফ শামলাপুর বাজার শনিবার ও মঙ্গলবার বড় পাইকারী বাজাট বসে। এ বাজারে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে সুপারি কিনে নিয়ে যায়। সুপারি ব্যবসায়ীরা জানান, মৌসুমে জেলায় শতাধিক হাট, বাজার ও বিভিন্ন স্থানে সুপারি বেচা কেনা হয়। চাষিদের কাছ থেকে সুপারি কিনে সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে সেগুলো বিক্রি করে থাকেন। কাচা সুপারি রোদে শুকিয়ে সুপারির খোসা (খোলস) ফেলে দিয়ে প্রতি কেজি শুকনা সুপারি ৬শ থেকে ৭শ টাকা দরে বিক্রি করে। পাকা সুপারি বাজার থেকে কেনে পানিতে ৩ থেকে ৪ মাস পচন দিয়ে (ভিজিয়ে) সেগুলো বাজারে বিক্রি করেন, পানিতে ভেজানো সুপারিকে স্থানীয় ভাষায় ভিজা সুপারি বলে, এই ভিজা সুপারির চাহিদা বেশি তাই দামও ভাল পাওয়া যায়। চাষিরা জানান, অন্যান্য ফসলের তুলনায় সুপারি চাষে খরচ অনেক কম। চারা লাগানোর প্রথম ২-৩ বছর একটু কষ্ট করতে হয়। তখন ছোট চারা গরু ছাগলে খেয়ে ফেলার ভয় থাকে। প্রথম দিকে জমিতে স্বল্প পরিমাণ সারও দিতে হয়। ৫-৬ বছর পর গাছে ফল আসে। একবার ফল আসলে একাধারে অন্তত ৪০ বছর ফল পাওয়া যায়। ফল আসার পরে তেমন কোন খরচ হয়না। প্রতিটা গাছ থেকে বছরে আকারভেদে ৩শ থেকে ৫শ পিস সুপারি পাওয়া যায়। শামলাপুর বাজারের ব্যাবসায়ী ছিদ্দিক জানান, স্থানীয় ভাবে ৮০ পিস সুপারিতে এক পন হয়। বর্তমান বাজারে প্রতি পন সুপারি ৪শ থেকে ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি মৌসুমে আমরা বিভিন্ন বাজার ও গ্রামের চাষিদের কাছ থেকে সুপারি কিনে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি এতে আমাদের লাভ ভাল হয়। কক্সবাজার জেলা কৃষি অফিসার কবির হোসেন জানান, কক্সবাজার জেলা থেকে যে পরিমাণ সুপারি উৎপাদন হয়,সেখান থেকে দেশের বাইরে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।আমরা প্রতিনিয়ত কৃষকদেরকে উদ্ধুদ্ধ করে যাচ্ছি। যে কোন চাষে কৃষকদের কারিগরী সহায়তার ও পরামর্শের জন্য আমাদের মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ নিয়োজিত আছেন। অনেক সচেতন সুপারি বাগান মালিক শুকনো মৌসুমে গাছে সার ও সেচ দিয়েছেন। এজন্য এবারে সর্বত্রই সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
Related
Leave a Reply