নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রায় ১০০ ফুট উঁচু একটি বিশাল পাহাড় কেটে ডাম্প ট্রাকে মাটি নিয়ে ভরাট করা হচ্ছে শতবর্ষী একটি পুকুর। কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের উত্তর হিন্দু পাড়ায় পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে প্রকাশ্যে। জয় বর্ধন নামের একজন সাবেক ইউপি সদস্য,কক্সবাজার ইউনিয়ন ভুমি অফিসের কম্পিউটার অপারেটর দেবাশীষ দে বাবু, নাছির উদ্দীন রুনো, মামুন ও কায়সার এর নেতৃত্বে ১০/১২ জনের একটি সিন্ডিকেট ৪০ শতক আয়তনের শতবর্ষী পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
সরেজমিনে দেখা যায়, পালপাড়া বাজারের (পুরাতন ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে) পূর্ব পাশের সড়কে বড় আকারের ২০ টি মতো গাছ কেটে নিয়ে পুকুরের চারপাশে দেয়া হয়েছে সীমানা প্রাচীর। এরপর পুকুরে ৫/৬ টি ডাম্প ট্রাকে করে মাটি এনে ফেলা হচ্ছে। মাটি আনা হচ্ছে পূর্ব হামজার ডেইল এলাকার প্রায় ১০০ ফুট উঁচু একটি বিশাল পাহাড় কেটে।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’ এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, ‘এলাকাবাসীর মৌখিক অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পাহাড় কেটে পুকুর ভরাটের ভয়াবহ দৃশ্য দেখা গেছে।’ তিনি বলেন, ‘একদিকে কেটে নেয়া হচ্ছে পাহাড় অন্যদিকে ভরাট করা হচ্ছে পুকুর। দুটিই দন্ডনীয় অপরাধ।’ দ্রুত পাহাড় কাটা বন্ধ করে পুকুরটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার দাবি জানান তিনি।
শামসুল আলম নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, মূলতঃ পুকুরটির মালিক মৃত ধীরেন্দ্র লাল দে। বৃটিশ আমল থেকেই পুকুরটি সাধারণ লোকজন ব্যবহার করে আসছে। হঠাৎ করেই ধীরেন্দ্র লাল এর ওয়ারিশ সাবেক ইউপি সদস্য জয় বর্ধন ও কক্সবাজার সদর ইউনিয়ন ভুমি অফিসের কম্পিউটার অপারেটর দেবাশীষ দে বাবুর নেতৃত্বে পুকুরটি ভরাট করে বিক্রি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এটি বায়না মূলে বিক্রি করা হয়েছে। ক্রেতারা সেখানে সনজয় দাশ গং এর নামে সাইনবোর্ড টাঙিয়েছেন।
যোগাযোগ করা হলে পুকুরের ক্রেতা সনজয় দাশ বলেন, ‘জয় বর্ধন-দেবাশীষদের কাছ থেকে পুকুরটি আমরা কিনেছি। তবে যারা এটি বিক্রি করেছেন তারাই ভরাট করে দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন। ‘ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সীমানা প্রাচীর দিয়েছি, বিক্রেতারা এখন এটি দায়িত্ব নিয়ে ভরাট করে দিচ্ছেন।’
রতন নামের আরেক ক্রেতা বলেন,’আমরা ১০ জন মিলে পুকুরটির ৩৬ শতক কিনেছি। এখন এটি জয় বর্ধন ও দেবাশীষরা ভরাট করে দিচ্ছেন।’
জানতে চাইলে জয় বর্ধন বলেন,’আমার অংশ আমি বিক্রি করিনি। আমিও তাদের সাথে আছি।’ পুকুর ভরাটের বিষয়ে তিনি বলেন,’এটি পরিত্যক্ত ছিল তাই ভরাট করা হচ্ছে।’
পরিত্যক্ত দাবি করে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে বলে স্বীকার করেন দেবাশীষ দে বাবু নামের আরেক বিক্রেতা। পাহাড় কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের পিএমখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল জব্বার পাহাড় কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন,’পাহাড় কাটা ও পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
Leave a Reply