1. coxsbazarekattorbd@gmail.com : Cox's Bazar Ekattor : Cox's Bazar Ekattor
  2. coxsekttornews@gmail.com : Balal Uddin : Balal Uddin
নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে প্যারাবন : নির্মাণ হচ্ছে ঘরবাড়ি - Cox's Bazar Ekattor | দৈনিক কক্সবাজার একাত্তর
রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:২৮ অপরাহ্ন

নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে প্যারাবন : নির্মাণ হচ্ছে ঘরবাড়ি

  • আপলোড সময় : শনিবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২২
  • ১২০ জন দেখেছেন

কক্সবাজার ৭১ ডেস্ক:

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর তীরে সৃষ্ট প্যারাবনের আনুমানিক ৫০ হাজার গাছ কেটে দখল করা হয়েছে কয়েক শ একরের জলাভূমি। গাছপালা উজাড় হওয়ায় ধ্বংস হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আবাসস্থল ও জীববৈচিত্র্য। গেল ৩ মাস ধরে বাঁকখালী নদীর প্যারাবন দফায় দফায় নিধনযজ্ঞ চালিয়ে আসছে স্থানীয় বেশ কিছু ক্ষমতাধর দুর্বৃত্ত। তারা প্যারাবনের প্রায় ৫০ হাজার বাইন ও কেওড়া প্রজাতির গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলেছে।
পাশাপাশি প্যারাবন ভরাট করে নির্মাণ করা হচ্ছে বাড়িঘর। ভরাট করা প্যারাবন মোটা দামে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। গেল ১ ডিসেম্বর বেপরোয়া গাছ কাটার পর পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে। যদিও রাজনৈতিক প্রভাবের কারনে প্রকৃত গডফাদাররা আইনের আওতায় আসেনি। উক্ত ঘটনা নিয়ে বর্তমানে ৩টি মামলা দায়ের করা হলেও আটক নেই কেউ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের রাতে ২০ থেকে ২৫ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছাস হয়। ফলে ভেঙ্গে যায় বেঁড়িবাধ। এরপর উপকূলীয় এলাকায় বনায়নে এগিয়ে আসে জাপানের একটি এনজিও সংস্থা ওয়াইস্কা ইন্টারন্যাশনাল। এই এনজিও সংস্থাটি প্রতি বছর জাপান থেকে শিক্ষার্থী নিয়ে এসে সবুজ বেষ্টনীর আওতায় ব্যাপক বাইন ও কেওড়া গাছের চারা রোপন করে। পরবর্তীতে এসব চারা বড় হয়ে গাছে রুপান্তরিত হয়।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে বলেন, প্রকাশ্যে এসব প্যারাবন নিধন করা হলেও বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা প্রতিনিয়ত প্যারাবন নিধনে মেতে উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, দখলবাজরা ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে থাকায় তারা স্থানীয় প্রশাসনকে তোয়াক্কা করছে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার চেষ্টা করেও অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে প্যারাবন উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বাঁধা দিতে গিয়ে হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে বন কর্মকর্তাদের।
অভিযোগ উঠেছে, এই দখলকৃত প্লট চড়াদামে বিক্রি করছে দখলবাজরা। আর এই দখল কার্যক্রমে মোটা অংকের বিনিময়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তরের গুটি কয়েক অসাধু কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কয়েক অফিসার। যেকারনে দখলকারিদের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা হলেও বরাবরের মতোই মামলা থেকে বাদ পড়েছে দখলে নেতৃত্ব দেওয়া এবং অসংখ্য দখলকৃত প্লটের মালিক ও দখলবাজরা।
সরেজমিনে গিয়ে একাধিক লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যারা দখলের মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে তারা হলো, নেত্রকোনা সদরের মৌগাতী, মারাদিঘী এলাকার ইদ্দিকুর রহমান এর পুত্র এলএ অফিসের চিহ্নিত দালাল ওমর ফারুক ওরফে দালাল ফারুক, মহেশখালীর কুতুবজোমের মেহেরিয়াপাড়ার রোকন উদ্দিন, মহেশখালী পৌরসভার, চরপাড়ার ইউছুফ, সাতকানিয়া কাঞ্চনার শরিফুল আলম চৌধুরী, মহেশখালী পুটিবিলা এলাকার জাহেদুল ইসলাম শিবলু, বদরমোকামের কামাল মাঝি, খরুশকুল কুলিয়াপাড়ার মৃত মোহাম্মদ আলীর পুত্র মোহাম্মদ সোহেল, শাহজাহান, সাতকানিয়া পশ্চিম ডলুর জসিম উদ্দিন, বাঁশখালী চনুয়ার জিয়া কলিম উল্লাহ, লোহাগাড়া চৌধুরীপাড়াস্থ উত্তর হরিয়া এলাকার খোরশেদ আলম চৌধুরী, মনোহরগনজয়ের দক্ষিন সরসপুর বাতাবাড়িয়া এলাকার ফিরোজ আহমদ, বদরমোকামের কফিল উদ্দিন, মিজানুর রহমান, জসিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনস্থ চাদগাঁও এলাকার মাহমুদুল করিম, শহরের লালদিঘীপাড় এলাকার আশিক, কক্সবাজার সদর উপজেলার হাজীপাড়ার আমীর আলী, রামু চাকমারকুলের মোস্তফা কামাল, বৈল্যাপাড়ার আমিনসহ কিছু ক্ষমতাধর জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদ।
সূত্র জানায়, প্রায় দেড় হাজার একর জমি এখন তিন ভাগে প্রভাবশালীদের দখলে। এর মধ্যে প্রায় ৫০০ একর জমির অবৈধ দখল করে চিংড়িঘেরের জন্য প্রস্তুত করেছে জনৈক প্রভাবশালী। আর প্রায় ১ হাজার একরের মতো জমি দখল করে কাজ করে যাচ্ছে প্রভাবশালীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন দখলদার বলেন, স্থানীয় কয়েক প্রভাবশালী ব্যক্তি শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে রাতে হাজার হাজার কেউড়া, বাইনগাছ কেটে বনভূমি টিন দিয়ে ঘিরে দখলে নিচ্ছেন। এরপর প্রতি গন্ডা (দুই শতক) জমি ১০ থেকে ১২ লাখ টাকায় বিভিন্ন লোকজনের কাছে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। বর্তমানে পুরোদমে প্যারাবন নিধন করে বাড়িঘর নির্মাণ কাজ অব্যাহত রয়েছে।
কস্তুরাঘাটের ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের অভিযোগ, বদরমোকাম হয়ে খুরুশকুল পর্যন্ত সংযোগ সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে মূলত নদী দখল শুরু হয়। নির্মাণাধীন সেতুর দু’পাশে চলছে প্যারাবন উজাড় করে নদী দখল ও ভরাটের কাজ এখন রাতেদিনে চলছে নির্মাণ কাজ। এতে নদীর গতিপথ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। জোয়ার-ভাটার অংশ ভরাট করে গড়ে তোলা হচ্ছে স্থাপনা।
এদিকে গেল শনি সকাল ও বিকেলে দুই দফায় বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাটের বদরমোকাম জামে মসজিদ সংলগ্ন পয়েন্টে দেখা গেছে, উজাড় করা বনভূমিতে (জলাশয়) ট্রাকে করে আনা মাটি ও বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চালানো হচ্ছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও নির্মাণ কাজ। দখলদারদের কেউ কেউ প্যারাবনের জমিকে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি উল্লেখ করে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্থানীয় ক্ষমতাধর নেতাদের সাথে মিলে এ প্যারাবন নিধন করা হচ্ছে। এব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়ার মতো সাহসও কেউ দেখাতে পারে না। উল্টো তাকে দৌড়ের ওপর থাকতে হয়। এসব শক্তিশালী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উর্ধবতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের কস্তুরাঘাট বিটের দুই দফায় ৫০ হাজার গাছ কেটে গাছের শেখড়সহ উপড়ে ফেলে স্মরণ কালের ভয়াবহতম প্রকৃতি হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে শহরের প্রাণকেন্দ্রে। প্রতিটি সু-উচ্চ বিশাল গাছ কম করে হলেও প্রতিটির মূল্য ১০ হাজার টাকা করে হলেও ৫০ কোটি টাকার গাছ কেটে নিয়ে গেছে ভূমিদস্যূ চক্রটি।
এই ভূমিদস্যূ চক্রের হাতে ইতোমধ্যে সমগ্র জেলার পাহাড় ও বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হাজারো মামলা দায়ের করা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা তাদের ছত্রছাঁয়ায় থাকা ভূমিদস্যূদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু প্রতিটি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের সুকৌশলে ব্যবহার করে ঠিকই ধ্বংস করে সবকিছু লুটেপুটে খেয়েছে তারা। তাই ভূমিদস্যূদের হাত থেকে মাতৃভূমিকে রক্ষা করা জরুরী।
প্রয়োজনে সরকারের সকল দপ্তরের সমন্বয়ে যৌথ অভিযানের মাধ্যমে তাদের উচ্ছেদ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব। তাহলে ফিরে পাবে জীবন ও প্রকৃতি।
এ বিষয়ে সেভ দ্যা ন্যাচার অফ বাংলাদেশের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসাইন রিয়াদ সংবাদকে জানান, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিরবতা মৌন সম্মতির লক্ষণ। প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রভাবশালীদের ইশারাতে এসব দখলদারিত্ব চলছে। ফলে সকলে চুপ করে আছে। অন্যথায় যাদের নাম উটে আসছে কারো বুকের পাঠা নেই প্যারাবনের এক ইঞ্চি জমি কেউ দখল করে প্যারাবন ধ্বংস করে। তাই পর্দার অন্তরালে থাকা প্রকৃত ভূমিদস্যূদের চিহ্নিত করতে না পারলে এদের প্রতিরোধ করা অসম্ভব।
এদিকে, সম্প্রতি প্যারাবন নিধন ও নদী দখলকারিদের বিরুদ্ধে রেকর্ডকৃত মামলা নিয়ে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের বাণিজ্যের সমালোচনা ঝড় উঠেছে। তবে এক কর্মকর্তা জানান, যারা মামলা থেকে বাদ পড়েছে তাদের চার্জশিটে আনা হবে। উপরোক্ত বিষয় নিয়ে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাজমুল হুদাকে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, গেল কয়েক দিন ধরে প্যারাবনের বিশাল ভূমি টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখে সেখানে ভরাটের কার্যক্রম চালানো হলেও বাঁধা দেওয়ার কেউ নেই। বাঁকখালী নদীর দখলদারদের উচ্ছেদ, দখল বন্ধ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে।

শেয়ার করতে পারেন খবরটি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো বিভিন্ন খবর দেখুন

Sidebar Ads

© All rights reserved © 2015 Dainik Cox's Bazar Ekattor
Theme Customized By MonsuR
x