রাজধানীর শাহজাহানপুরে অজ্ঞাতপরিচয় অস্ত্রধারীদের গুলিতে আওয়ামী লীগ নেতাসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ তার গাড়িচালক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসাধীন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে ১১টি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট।
নিহতদের একজন জাহিদুল ইসলাম টিপু মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। অপরজন কলেজ ছাত্রী সুমাইয়া আফরিন প্রীতি। ২৪ বছর বয়সের এই কলেজছাত্রী রিকশায় করে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হন। গুলিতে আহত প্রাইভেটকার চালকের নাম মুন্না।
নিহত টিপুর স্বজন মেরাজউদ্দিন মেরাজ বলেন, ‘আমার ভাইসহ চারজন একটি গাড়িতে শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় পৌঁছামাত্র দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি গুলি করে। এসময় গাড়ির ভেতরে থাকা চালকসহ দুইজন গুলিবিদ্ধ হন। একজন রিকশারোহীও গুলিবিদ্ধ হন।’
রাজধানীতে গুলিতে আ.লীগ নেতা ও কলেজছাত্রী নিহত
বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ১০টা ২২ মিনিটে টিপু একটি সাদা রংয়ের নোয়াহ মাইক্রোবাসে করে শাহজাহানপুর আমতলা মসজিদের সামনে থেকে খিঁলগাও ফ্লাইওভারের দিকে যাচ্ছিলেন। গাড়িটি সাউথইস্ট ব্যাংকের সামনে জ্যামে আটকা পড়ে।
ওদিকে বিপরীত দিকের রাস্তায় দুই যুবক মোটরসাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করছিল। টিপুর গাড়িটি জ্যামে আটকা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে হেলমেটধারী দুই যুবকের একজন এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে টিপুর গাড়ির দিকে ছুটে আসে। এরপর গাড়ি লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এতে গাড়ির ভেতরেই গুলিবিদ্ধ হন টিপু। এ সময় চালকের হাতে গুলি লাগলে তিনি গাড়ির গতি বাড়িয়ে ঘটনাস্থল থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
ওদিকে শুরুর দিকে ছোড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে আহত হন গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা কলেজছাত্রী প্রীতি। ঘটনার পরপরই আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকরা তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, গাড়িতে টিপুসহ মোট চারজন ছিলেন। গাড়িচালক মুন্নার পাশের সিটে বসা ছিলেন টিপু। আর পেছনের সিটে ছিলেন মিরাজ ও কালাম নামে দুই ব্যক্তি। তবে তারা দু’জন অক্ষত আছেন।
স্থানীয়রা গুলিবিদ্ধদের উদ্ধার করে ঢামেকে আনলে চিকিৎসক রাত ১১টার দিকে টিপু ও প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী ইনচার্জ (এএসআই) আব্দুল খান বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শাহজাহানপুর থেকে তিনজনকে ঢামেকে আনার পর আওয়ামী লীগ নেতা এবং এক নারীকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওই নেতার গাড়িচালক মুন্নাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনার পর তার চিকিৎসা চলছে।’
রাজধানীতে গুলিতে আ.লীগ নেতা ও কলেজছাত্রী নিহত
স্বজনরা জানান, নিহত জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি।
২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর গুলশানে শপার্স ওয়ার্ল্ড নামে একটি বিপণি বিতানের সামনে খুন হন যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কী। আলোচিত এ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন তৎকালীন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু।
মিল্কী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন টিপু। জামিনে বের হয়ে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে খুব বেশি সক্রিয় ছিলেন না। স্ত্রী ডলি কাউন্সিলর হলে তার মাধ্যমেই নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। এক সময়ের দাপুটে নেতা টিপুকে হত্যার জন্য পরিকল্পিতভাবেই হামলা করা হয় গাড়িতে। তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে অন্তত ১০-১২ রাউন্ড গুলি করা হয়।
কারা এবং কেন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সে ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেননি স্বজনরা। পুরনো রাজনৈতিক বিরোধেই এ ঘটনা বলে মনে করছেন তারা।
পুরান ঢাকার একটি কলেজের স্নাতক শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া আফরিন প্রীতি দুর্ঘটনাবশত হত্যার শিকার হয়েছেন বলে মনে করছে পুলিশ। টিপুর হত্যা নিশ্চিত করতে এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়া হলে তাতেই রিকশাযাত্রী প্রীতি গুলিবিদ্ধ হন। গভীর রাত পর্যন্ত তার বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।
Related
Leave a Reply