দেশের ভোজ্য তেলের বাজারে দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকার সম্প্রতি নতুন দর নির্ধারণ করে দিলেও সব বিক্রেতা তা মানছেন না। বাড়তি দরে কেনার অজুহাত দেখিয়ে কিছু বাজারে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে ভোজ্য তেল।
গতকাল শনিবার রাজধানীর কয়েকটি বাজারে গিয়ে এমন চিত্র পাওয়া যায়। আবার খুচরা বিক্রেতারা অভিযোগ করলেন, নতুন দরের পর সয়াবিনের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে কম্পানিগুলো।
আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির ফলে দেশে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম পৌঁছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। রোজার আগে বাজার স্থিতিশীল করতে ২০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করার পর গত ২০ মার্চ লিটারপ্রতি সাত-আট টাকা দাম কমানোর ঘোষণা দেয় সরকার।
গতকাল কারওয়ান বাজারে দেখা যায়, বোতলের গায়ে আগের দাম লেখা থাকলেও নতুন দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। পাঁচ লিটার বোতলের গায়ে লেখা দর ছিল ৭৯৫ টাকা, এটা এখন ৭৭৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ডিলাররা দাবি করছেন, তাঁরা এখন লোকসান দিয়ে তেল বিক্রি করছেন। সরকার দাম কমিয়ে দিয়েছে তাই তাঁদের লোকসান হচ্ছে।
সরকার আগের নির্ধারিত দর থেকে খুচরা পর্যায়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আট টাকা কমিয়ে ১৬০ টাকা নির্ধারণ করে। এ ছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার তেলের দাম ৩৫ টাকা কমিয়ে ৭৬০ টাকা করা হয়েছে। খোলা সয়াবিন তেলের দাম সাত টাকা কমিয়ে ১৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এদিকে গতকাল রাজধানীর নিউ মার্কেটের বিসমিল্লাহ স্টোরের মো. শফিক মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার নতুন দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। মিল পর্যায় থেকে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় বাজারে এর ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া দু-একটি প্রতিষ্ঠান পাঁচ লিটার বোতল সরবরাহ করলেও এক-দুই লিটারের বোতল বাজারে নেই বললেই চলে। তিনি বলেন, ‘এক লিটার বোতল ১৬০ টাকায় কেনা ১৬৫ টাকায় বিক্রি করছি। ’ পাঁচ লিটার নতুন বোতল ৭৬০ টাকায় বিক্রি করছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। এর আগে এর দাম ছিল ৭৭৫ টাকা। কম্পানির লোকজন তাঁদের জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত নতুন তেল পেতে আরো এক সপ্তাহের মতো সময় লাগবে।
কারওয়ান বাজারের মিজান স্টোরের মো. মিজান বলেন, ‘বর্তমানে দু-একটি কম্পানির তেল পাওয়া গেলেও নতুন দরের তেল এখনো আসেনি। তবে কয়েকটি কম্পানি দিচ্ছে। আশা করছি, আগামী পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে নতুন দরের তেল পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাবে। ’
শান্তিনগর বাজারের মতলব স্টোরের শাহিন মিয়া বলেন, ‘ভোক্তারা নতুন দরের তেল চায়, ফলে তারা মনে করছে বিক্রেতারা বেশি দামে বিক্রি করছেন। প্রকৃত অর্থে আমাদের কাছে নতুন কোনো মাল আসছে না। ফলে নতুন দরে বিক্রি করতে পারছি না। ’
এদিকে রাজধানীর মৌলভীবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি আবুল হাশেম বলেন, তাঁরা সরকারের বেঁধে দেওয়া নতুন দামে কেনা তেল বিক্রি করছেন লোকসান দিয়ে।
ভোজ্য তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, নতুন দরেই তাঁর প্রতিষ্ঠান ভোজ্য তেল বিক্রি করছে। প্রতিদিন ২৫০ ট্রাক বা প্রায় ১৪ টন তেল সরবরাহ করেন তাঁরা। তিনি অভিযোগ না করে ট্রাক নিয়ে সরাসরি তাঁর প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও মিল মালিকদের তথ্য অনুসারে প্রতি মাসে গড়ে দেড় লাখ টন ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে দেশে। রমজান মাসে এই চাহিদা বেড়ে দ্বিগুণ হয়। আসন্ন রমজান ঘিরে পর্যাপ্ত ভোজ্য তেল রয়েছে বলে দাবি করছেন তাঁরা।
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গায় পাঁচ লিটার বোতলের সয়াবিন তেলের দাম কিছুটা কমেছে। অন্যগুলো আগের মতোই আছে।
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, একাধিক বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেল ১৫৮ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, সয়াবিন তেলের দাম কমানো হলেও এর প্রভাব পড়েনি নীলফামারীর খুচরা বাজারে। বিভিন্ন বাজারে বোতলজাত তেল সরবরাহ কম থাকায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যদিও জেলা শহরের বড়বাজারের ব্যবসায়ী তাপস ভৌমিক বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে নতুন দরে তেল বিক্রি করছি। ’
সিলেট অফিস জানায়, সরকার সয়াবিন তেলের লিটারে আট টাকা কমালেও তার প্রভাব সেভাবে পড়েনি সিলেটে। সিলেটের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, একেক জায়গায় তেলের একেক দাম।
Leave a Reply