1. coxsbazarekattorbd@gmail.com : Cox's Bazar Ekattor : Cox's Bazar Ekattor
  2. coxsekttornews@gmail.com : Balal Uddin : Balal Uddin
বাঁকখালী নদীতীরের তিন শ একর প্যারাবন উজাড় করে চলছে প্লট–বাণিজ্য - Cox's Bazar Ekattor | দৈনিক কক্সবাজার একাত্তর
শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৪০ অপরাহ্ন

বাঁকখালী নদীতীরের তিন শ একর প্যারাবন উজাড় করে চলছে প্লট–বাণিজ্য

  • আপলোড সময় : শনিবার, ২ এপ্রিল, ২০২২
  • ১৩২ জন দেখেছেন

বিশেষ প্রতিবেদকঃ

কক্সবাজার সদর মডেল থানা থেকে প্রায় ৫০০ মিটার উত্তরে বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট এলাকা। নদীর অপর পাশে খুরুশকুল। মাঝখানের বাঁকখালী নদীর ওপর তৈরি হচ্ছে ৫৯৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু। সেতু নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই শুরু হয়েছে নদীতীরের প্যারাবন দখল।

অভিযোগ আছে, প্রথমে প্যারাবনের গাছপালা নিধন করা হচ্ছে। পরে বালু ফেলে জলাভূমি ভরাটের পর প্লট বানিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবে সংযোগ সড়কের পাশে প্রায় ৩০০ একর এলাকার প্যারাবন উজাড় করে তৈরি হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়িসহ নানা স্থাপনা।

গাছপালা উজাড় হওয়ার কারণে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আবাসস্থল ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। জলাভূমি ভরাটের কারণে সংকুচিত হয়ে পড়েছে নদীর গতিপথ। অভিযোগ আছে, এসব বন্ধে তৎপর নয় জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর।

বাঁকখালী সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বরে। এ নির্মাণকাজের অগ্রগতি এখন ৮২ শতাংশ। সেতুর উত্তর-পশ্চিম দিকে কস্তুরাঘাট পর্যন্ত তৈরি হয়েছে চার লেনের ৫০০ মিটারের সংযোগ সড়ক। ২৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সেতুর অবশিষ্ট কাজ আগামী ৩০ ডিসেম্বর শেষ হবে। এসব তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান।

গত বুধবার বিকেলে সরেজমিন দেখা গেছে, কস্তুরাঘাট থেকে সেতুতে যাওয়ার সংযোগ সড়কের উত্তর পাশ–সংলগ্ন প্যারাবনের বিশাল এলাকা কে বা কারা টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে। পাঁচ দিন আগেও এখানে এই বেড়া ছিল না। স্থানীয় কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ২৫ মার্চ রাতে ৩০-৪০ জন লোক এসে টিনের বেড়া দিয়ে প্যারাবনের বিশাল এলাকা ঘিরে ফেলেন। কেউ বাধাও দেননি। ঘিরে রাখা স্থানের বন ধ্বংস করে তৈরি হয়েছে অসংখ্য টিনের ঘর।

উত্তর দিকের কস্তুরাঘাট এলাকার সড়কের দুই পাশের প্যারাবন দখল করেও তৈরি হয়েছে ৪০টির বেশি ঘরবাড়ি। এসব ঘরে পাহারায় রাখা হয়েছে মজুরশ্রেণির কিছু মানুষকে। ঘরবাড়ির পেছনে থাকা প্যারাবনের বিশাল এলাকা টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। এভাবে প্যারাবনের অন্তত ১৫টি স্থান ঘিরে রাখার দৃশ্য চোখে পড়েছে।
একটি ঘরের পাহারাদার লোকমান হাকিম বলেন, তাঁর বাড়ি বগুড়ায়। ঘরটি তিনি ২৬ দিন ধরে পাহারা দিচ্ছেন। তবে ঘরের মালিক কে তিনি তা জানেন না।

ঘরটির পেছনে টিনের বেড়ার মধ্যে থাকা কেওড়াগাছগুলো রাতের আঁধারে কেটে ফেলা হচ্ছে জানিয়ে লোকমান হাকিম বলেন, প্যারাবনের গাছপালা নিধনের পর বালু ফেলে জলাভূমি ভরাট করে প্লট বানিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিটি প্লটের দাম ১০-১৫ লাখ টাকা।

এভাবে ঘর তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন আমির আলী নামে একজন। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্যারাবনের ৩০০ একরের মালিক এখন অন্তত ১৯৫ জন। তাঁদের মধ্যে তিনি (আমির আলী) কিনেছেন ১৪ শতক জমি। প্যারাবন হলেও এসব জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন বলে দাবি করেন আমির আলী। তিনি বলেন, প্যারাবনের গাছ কাটার সঙ্গে তিনি জড়িত নন। কিছু শ্রমিক রাতের বেলায় এসব গাছ কাটছেন।

প্যারাবন উজাড় এবং সরকারি জলাভূমি দখল করে অবৈধ ঘরবাড়ি নির্মাণ বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করছে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। কিন্তু কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’–এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ। তিনি বলেন, গত দুই মাসে সংযোগ সড়কের পাশের প্যারাবনের প্রায় ৩০০ একর এলাকার ৪০ হাজার কেওড়া ও বাইনগাছ কেটে শতাধিক টিনের ঘর তৈরি হয়েছে। গাছপালা উজাড় হওয়ায় ২০৫ প্রজাতির পাখির আবাসস্থল ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। জলাভূমি ভরাটের কারণে নদীর গতিপথ সংকোচিত হয়ে পড়েছে। এসব বন্ধে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর তৎপর না থাকার সুযোগে উজাড় করা প্যারাবনের জমিতে প্লট বানিয়ে দখলদারেরা হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ এবং কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদ সভাপতি দীপক শর্মা বলেন, বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট দিয়ে একসময় চট্টগ্রামের সঙ্গে জাহাজ চলাচল ছিল। পৌরসভার প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল কস্তুরাঘাট। এখান থেকে খুরুশকুল পর্যন্ত নদীর প্রস্থ ছিল দেড় কিলোমিটার। এই দেড় কিলোমিটারজুড়েই পানির প্রবাহ ছিল। দখল, দূষণ এবং ভরাটের কারণে এখন নদীতে পানির প্রবাহ আছে কোথাও ৪০০ মিটার, কোথাও ২০০ মিটার। ৫৯৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সংযোগ সেতুর কাজ শুরুর পর থেকে নদীর বুকে সৃষ্ট প্যারাবন ও জলাভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে।

এক দশক আগে জাপানি একটি সংস্থার সহযোগিতায় পরিবেশ অধিদপ্তর এ প্যারাবন (ম্যানগ্রোভ) গড়ে তুলেছিল। গাছগুলো এখন ২০-৩০ ফুট উঁচু হয়েছে। এসব কেওড়া ও বাইনগাছ ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলকে রক্ষা করত জানিয়ে পরিবেশকর্মীরা বলেন, প্যারাবনের গাছ কেটে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। গাছের গোড়া যেন দেখা না যায়, সে জন্য পাহাড় কাটার মাটি এবং ড্রেজার মেশিনে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে ফেলা হচ্ছে প্যারাবনের বিরান ভূমিতে।

জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বাঁকখালী দখলের সঙ্গে জড়িত ১৫৭ জন। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকায় অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালানো যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজ বলেন, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে। ইতিমধ্যে কয়েক দফা উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু কতিপয় দখলদার প্যারাবনের বিপরীতে কাগজ প্রদর্শন এবং উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আসায় অভিযান পরিচালনায় সমস্যা হচ্ছে।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড় থেকে সৃষ্ট বাঁকখালী নদী রামুর ওপর দিয়ে কক্সবাজার শহরের উত্তর পাশ হয়ে আঁকাবাঁকা পথে মিশেছে বঙ্গোপসাগরের মহেশখালী চ্যানেলে। নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৭ কিলোমিটার। শেষ প্রান্তের নুনিয়াছটা থেকে মাঝেরঘাট পর্যন্ত কক্সবাজার পৌরসভার প্রায় সাত কিলোমিটারজুড়ে চলছে দখল বাণিজ্য।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, দখলদারদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত তিনটি মামলা হয়েছে। চলছে অভিযান। তবুও প্যারাবন দখল বন্ধ করা যাচ্ছে না। নিয়মিত অভিযান চালানোর মতো পর্যাপ্ত লোকবল নেই বলেও এমনটা হচ্ছে।

© প্রথম আলো

শেয়ার করতে পারেন খবরটি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো বিভিন্ন খবর দেখুন

Sidebar Ads

© All rights reserved © 2015 Dainik Cox's Bazar Ekattor
Theme Customized By MonsuR
x