বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৮ পূর্বাহ্ন
কক্সবাজার ৭১ ডেস্ক:
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মূল্য সমস্যা এখন পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ বলে জানিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই রক্তক্ষরণ বন্ধের চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে নেয়া জরুরী। শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নিহত ডাঃ শামসুল আলম খান মিলনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার এ্যাডভাইস কেউ কাউকে দিতে পারে না। ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার অনেক অসুখ। তবে পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ তাঁর জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। পরিপাকতন্ত্রের ঠিক কোন্ জায়গায় তার রক্তপাত হচ্ছে এটা বের করার জন্য আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ ডাক্তাররা কিছুদিন ধরে বিভিন্ন রকম কাজ করছেন। এ চিকিৎসার যে পদ্ধতি আছে, সেই পদ্ধতিতে তারা করেছেন। কিন্তু একটা জায়গায় এসে তারা এগুতে পারছেন না। কারণ, সেই ধরনের কোন টেকনোলজি বাংলাদেশে নেই যে টেকনোলজি দিয়ে তারা সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে পারেন। যে কারণে ডাক্তাররা বার বার বলছেনÑ তাঁকে একটা এ্যাডভান্স সেন্টারে নেয়া দরকার যেখানে এই যন্ত্রপাতি এবং টেকনোলজিগুলো আছে সেখানে গেলে তাঁর রোগের সঠিক জায়গাটা তারা ধরতে পারবেন।
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সব কিছু ভুলে যায়। ওয়ান-ইলেভেনের সময় যখন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হলেন তখন এই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তাঁর মুক্তির জন্যে বিবৃতি দিয়েছিলেন। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করা এমন একজন নেত্রীকে আজ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। কেন দিচ্ছেন? সবাই আমরা বুঝি, সবাই জানে। সামনে বড় একটা কাঁটা সরে গেলে তাদের ক্ষমতায় থাকার জন্য বেশি সুবিধা হবে।
খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, যারা সরকারী দলের রাজনীতি করছেন তাদের ন্যূনতম রাজনৈতিক শিষ্টাচার নেই। তাদের মানবিক বোধ নেই। তাদের এত বেশি দাম্ভিকতা যে তারা যেকেন ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ করে খালেদা জিয়া সম্পর্কে কটূক্তি করতে একটুও দ্বিধা করেন না। তারা একবারও মনে করেন না যে, খালেদা জিয়া হচ্ছেন সেই নারী যিনি ১৯৭১ সালে শিশুপুত্রকে হাতে ধরে নিয়ে পালিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন এবং সেখানে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে ক্যান্টনমেন্টের কারাগারে ছিলেন। অর্থাৎ দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। পরে গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করেন।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আসুন গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ডাঃ মিলনের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
ফখরুল বলেন, দেশে এখন বিরাজনীতিকরণের চক্রান্ত শুরু হয়েছে। তারই পরিণতি হিসেবে খালেদা জিয়া মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। গণতন্ত্র আর খালেদা জিয়াকে আলাদা করা যাবে না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি, তার চিকিৎসা ও বেঁচে থাকা এই জাতির কাছে অত্যন্ত জরুরী। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে বিদেশে চিকিৎসা নিতে পাঠানোর জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
আওয়ামী লীগের নেতাদের দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে গয়েশ্বর রায় বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার এ্যাডভাইস কেউ কাউকে দিতে পারে না। এ বিষয়ে তারা আইনের কথা কেন বলে? আইনমন্ত্রী কি জানেন না-একটা মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়া যায় না। আর রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবে কিনা সেটা খালেদা জিয়ার একান্ত ব্যাপার। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া আপোসহীন, তিনি লড়তে জানেন, মরতে জানেন, তিনি ভাঙ্গতে পারেন না। তিনি কখনও আপোস করেননি, মাথা নত করেননি। আর মাথা নত করার জন্য খালেদা জিয়ার জন্ম হয়নি।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সময়ের ছাত্রনেতা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, দলের নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নাজিম উদ্দিন আলম, জহির উদ্দিন স্বপন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, কামরুজ্জামান রতন, শিরিন সুলতানা প্রমুখ।
অবিলম্বে খালেদাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠান- হাফিজ ॥ সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, অবিলম্বে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠান। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নাগরিক ফোরাম’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
৭১/এমইউএন