বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২৬ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক:
রাতারাতি কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীতে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট প্যারাবনের আনুমানিক ১৫ হাজার গাছ কেটে সাফ করে ফেলা হয়েছে। ধ্বংস করা ফেলা হয়েছে প্যারাবনে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আবাসস্থল। কাটা গাছের গুড়ালি ঢাকতে এবং নদীর জোয়ার-ভাটার পানি ঠেকাতে ডাম্প ট্রাকে করে মাটি ও বালি এনে প্রকাশ্যে ফেলা হচ্ছে নদীতে। সমানতালে চলছে নদী ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের কর্মকান্ডও। বাঁকখালী নদীর কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাটের বদরমোকাম জামে মসজিদ পয়েন্টে নদী দূষণ ও দখলের এমন কর্মযজ্ঞ চলছে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এমন দখলযজ্ঞ চলতে থাকলেও গত কয়েকদিনে রাতরাতি সেখানে প্যারাবনের অন্তত ১৫ হাজার গাছ কেটে নেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’ এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, ‘স্থানীয়দের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় প্যারাবনের গাছ কেটে নেয়ার ভয়াবহ চিত্র। শুধু গাছ কাটাই নয়, সেখানে প্রকাশ্যে নদী দখল, ভরাট ও দূষণ করা হচ্ছে। গাছ কেটে দেয়া হচ্ছে টিনের ঘেরা। এমনকি সেখানে প্যারাবনের গাছ কেটে নদী ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ কাজ চলছে প্রকাশ্যে।’ মি. রাশেদুল মজিদ অভিযোগ করে বলেন,’মৌখিক ও লিখিতভাবে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অভিযোগ দেয়া হলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়না। ক্ষেত্রবিশেষে উল্টো ভূমি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা দখলদারদের নেপথ্যে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। যার কারণে নদী দখল বন্ধ হচ্ছে না।’ তিনি দ্রুত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর প্রকৃতি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার দাবি জানান।
গতকাল শনিবার বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাটের বদরমোকাম জামে মসজিদ পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, নির্বিচারে প্যারাবন কেটে ডাম্প ট্রাকে করে মাটি এনে ভরাট করা হচ্ছে। একই সাথে নির্মাণ করা হচ্ছে স্থাপনা। অনেক দখলদার সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন। এমনকি দখলদাররা প্যারাবনের পাখি শিকার ও পাখির আবাসস্থল ধ্বংসের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, মহেশখালীর রুকন, আমির আলী, রুমালিয়ারছড়ার নুরুল ইসলাম, কামাল মাঝি, শিবলু, কপিল, সানাউল্লাহ, আলম, ইব্রাহিম, ইউসুফ, মালেক, সাইফুল সহ ১০/১৫ জন দখলদার রাতারাতি প্যারাবনের আনুমানিক ১৫ হাজার গাছ কেটে নিয়েছে। গাছ কেটে সেখানে টিন দিয়ে ঘেরা দেয়া হয়েছে। এখন ভরাট ও স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, কস্তুরাঘাটের বদরমোকাম হয়ে খুরুশকুল সংযোগ সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে মূলত নদী দখল কর্মকান্ড শুরু হয়। নির্মাণাধীন সেতুর উভয়পাশে চলছে প্যারাবন উজাড় করে নদী দখল ও ভরাট। যেখানে এখনও নদীর জোয়ার-ভাটা চলছে সেখানে ভরাট করে গড়ে তোলা হচ্ছে স্থাপনা। নদী ভরাট করতে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বিশাল প্যারাবন কেটে ফেলা হচ্ছে। প্যারাবনে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আবাসস্থল ধ্বংস করা হচ্ছে। এসব প্যারাবন দখল-বেদখল নিয়ে দখলদারদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাতও চলছে। তবে বেশ কয়েকজন দখলদার দাবী করেন, যেসব জায়গা তারা দখল করছেন তার অধিকাংশই ব্যক্তি মালিকানাধীন। এর স্বপক্ষে খতিয়ান ও সর্বশেষ বছরের খাজনা পরিশোধের দাখিলাও তাদের রয়েছে। কিন্তু প্যারাবন কেটে নদীর জোয়ার-ভাটায় ভরাট করে জমির শ্রেণি পরিবর্তনে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কোন অনুমোদন তারা দেখাতে পারেন নি। নুরুল ইসলাম নামের এক দখলদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি। এখানে কয়েকশ একর জমি অন্তত ২/৩ শ লোক কিনে নিয়েছে। তবে তিনি প্যারাবন কাটার সাথে জড়িত নন বলে দাবি করেন।
আমির আলী নামের আরেক দখলদার বলেন,’আমি ১৪ শতক জমি কিনে নিয়েছি। তবে প্যারাবন আমি কাটিনি।’
নির্বিচারে প্যারাবন কাটা, পাখির আবাসস্থল ধ্বংস ও নদী ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক শেখ মোঃ নাজমুল হুদা বলেন,’অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সত্যতা পেয়েছি। দ্রুত এসব উচ্ছেদ করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নু এমং মারমা মং বলেন, এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরকে সাথে নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ বলেন, এ বিষয়ে এডিসি রেভিনিউ কে বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
71/munoyon