বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৫৫ অপরাহ্ন
কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া:
উখিয়ার শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে ৮তম দফায় ভাসানচরের উদ্দেশে যাত্রা করেছেন রোহিঙ্গারা।
শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে উখিয়া ডিগ্রি কলেজের মাঠ থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে চট্টগ্রামের পথে ৯টি বাস রওনা দিয়েছে।দুপুরে ৯ টি বসে করে ৩৮৯ জন রোহিঙ্গা উখিয়া ত্যাগ করে।পরে বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে আরও ১৭০ রোহিঙ্গা ৫ টি বাসে করে ২১৮ পরিবার ভাসানচরের উদ্যােশে উখিয়ার ডিগ্রি কলেজ ট্রানজিট ক্যাম্প ত্যাগ করেন চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ও সরকারের মধ্যে ভাসানচরে শরণার্থী ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) হওয়ার পর দ্বিতীয় বারের মতো সেখানে রোহিঙ্গাদের নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে যাওয়ার উদ্দেশে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তার মাধ্যমে রোহিঙ্গারা সপরিবারে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে আসতে থাকেন। তারা শুক্রবার দুপুরে বাসে করে ভাসানচর যেতে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেন। তারা রাতে চট্টগ্রামের বিএন শাহীন কলেজের ট্রানিজট ক্যাম্পে পৌঁছাবেন। সেখান থেকে পরেরদিন নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় ভাসানচরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে ৮ম দফায় রোহিঙ্গাদের একটি দল উখিয়া থেকে ভাসানচরের উদ্দেশে চট্টগ্রামে রওনা দিয়েছে উল্লেখ করে অতিরিক্ত ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসু দ্দৌজা নয়ন জানান, ৮ তম দফায় প্রথম দলের রোহিঙ্গাদের একটি অংশ উখিয়া থেকে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দেন।
রোহিঙ্গা নেতারা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার কারণে আতঙ্কিত উখিয়ার কুতুপালং মেগা ক্যাম্পের লম্বাশিয়া, বালুখালীসহ বিভিন্ন শিবিরের অনেকে ভাসানচরে যেতে রাজি হয়েছেন, যারা আগে সেখানে যেতে চাননি।
১৪ এপিবিএনের এসপি মোঃ নাইমুল হক জানান, শুক্রবার দুপুরে সাড়ে ১২ টার দিকে ৯টি বাসে করে ৩৮৯জন রোহিঙ্গা চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ৫ বাসে করে আরো ১৭০ জন রোহিঙ্গা উখিয়া ডিগ্রি কলেজ ট্রানজিট ক্যাম্প ত্যাগ করেন।
এদিকে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ৭ দফায় ১৮ হাজার ৮শত ৭৯ জন রোহিঙ্গাকে সরকার ভাসানচরে পাঠায়। এ ছাড়া গত বছর মে মাসে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করা ৩০৬ রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে সেখানে নিয়ে রাখা হয়।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।
উল্লেখ , ২০১৭ সালের ২৫ অগাষ্টের পর মিয়ানমারের সেনাদের অভিযান থেকে প্রাণে বাঁচতে দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা উখিয়া টেকনাফ শরণার্থী শিবিরগুলোতে বসবাস করছেন। এদের বেশিরভাগই ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নৃশংস অভিযানের সময়ে পালিয়ে এসেছিলেন। শরণার্থীদের চাপ কমাতে দুই বছর আগে অন্তত ১ লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।