শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন
মো: আশেক উল্লাহ ফারুকী, টেকনাফ:
মহান বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এবার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন ৭৯ সাঁতারু। তাদের সঙ্গে অংশ নিয়েছে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী লারিসা রোজেন (১০)। সোমবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা পৌনে ১১টায় কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া সমুদ্র সৈকত থেকে সাঁতার শুরু করেছেন তারা। লারিসার সঙ্গে সাঁতারে অংশ নিয়েছেন তার বাবা সৈয়দ আক্তারুজ্জামান ও বড় ভাই সৈয়দ আরবিন আয়ান। দুই সন্তানের সঙ্গে অংশ নিয়ে বাংলা চ্যানেলে সাঁতারে অংশ। তবে মাঝপথে তারা ব্যর্থ হলে উদ্ধারকারীরা তাদের তুলে নেয়।
১৬ তম বাংলা চ্যানেল সাঁতারের আয়োজন করেছে ষড়জ অ্যাডভেঞ্চার ও এক্সট্রিম বাংলা। এবারের ৭৯ জন সাঁতারু-এর মধ্য একজন ফ্রান্সের নাগরিক ও এক নারী রয়েছেন। সাঁতরে ১৬ দশমিক ১ কিলোমিটার সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে পাড়ি জমান তারা। এ সময় দ্বীপের বাসিন্দারা তাদেরকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান।
আয়োজক ও দ্বীপের বাসিন্দারা জানান, বেলা পৌনে ১১টায় সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে বাংলা চ্যানেলে সাঁতার শুরু করেন ৭৯ সাঁতারু। এর আগে সবাই দেশের পতাকা দেখিয়ে উল্লাস করেন। বিকেল ২ টা ৩০ মিনিটে (৪ ঘন্টা ৯ মি.) বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে দ্বীপে প্রথম পৌঁছেন সাইফুল ইসলাম রাসেল। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এটা পাড়ি দিয়ে তিনি ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছেন। সবচেয়ে কম সময়ে বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার গৌরবও অর্জন করেন। এর আগে গত বছর সাইফুল ইসলাম রাসেল ৩ ঘন্টা ২১ মিনিটে পাড়ি দিয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। এবারে ৩ ঘন্টা ১৬ মিনিটে পাড়ি দিয়ে তৃতীয় হয়েছেন সালা উদ্দিন। এরপর সূর্য ডুবির সঙ্গে সঙ্গেই ধাপে ধাপে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ৭৪ জন সাঁতরু দ্বীপে পৌঁছান। বাকিরাও বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে দ্বীপে পৌছানোর কথা রয়েছে। তবে মাঝপথে সাঁতারে ব্যর্থ হয়ে বেশ কয়েকজন সাঁতরুদের উদ্ধারকারীরা তুলে নেয়।
এবার ১৮ বার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়া রেকর্ড গড়বেন ষড়জ অ্যাডভেঞ্চারের নির্বাহী কর্মকর্তা লিপটন সরকার। তিনি সাঁতার শুরুর আগে বলেছেন, চ্যানেল সাঁতারের আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে আয়োজন করা হয়েছে। সাঁতারুরা ফ্রি হ্যান্ড সুইমিং করবেন। নিরাপত্তার জন্য প্রত্যেক সাঁতারুর সঙ্গে একটি করে উদ্ধারকারী ছিল।
লিপটন সরকার জানান, এবার সর্বোচ্চ ৮০ জন সাঁতারু অংশ নেন। গত বছর ৪৩ জন সাঁতারু অংশ নিয়েছিল। আমরা বাংলা চ্যানেল সাঁতারকে আন্তর্জাতিক করতে পেরেছি। গতবারের চেয়ে এবার প্রায় দ্বিগুণ সাঁতারুর অংশগ্রহণ বলে দিচ্ছে, বাংলাদেশে দূরপাল্লার সাঁতার জনপ্রিয় হচ্ছে।’
দ্বীপে পৌঁছে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সালা উদ্দিন বলেন, ‘মহান বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এবার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে, মনে হচ্ছে আমি ‘বিশ্ব জয়’ করেছি। আমার টার্গেট ছিল যে কোনো মূল্যে বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে জয়ের স্বাদ নিব। আল্লাহ আমার সেই আশা পূরণ করেছেন। আমি সূর্য ডুবির অনেক আগে দ্বীপে পৌছেছি। এছাড়া অনেক সহকর্মী সূর্য ডুবির সঙ্গে সঙ্গেই পৌছেন। আগামীতে আরও বড় বড় অ্যাডভেঞ্চারে অংশ নিতে চাই। এজন্য সরকার ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের সহযোগিতা কামনা করছি।’
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, ‘সাইফুল ইসলাম রাসেল নামে একজন বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে প্রথম দ্বীপে পৌঁছেছেন। এরপর বিকেলে দিকে আস্তে আস্তে ্আরো বেশ কয়েকজন সাঁতরু পৌঁছেন।’
১৬তম বাংলা চ্যানেল সাঁতারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডের ব্র্যান্ড ফরচুন। রেসকিউ পার্টনার হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড। অংশীদার হিসেবে আরও আছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড, ইউনাইটেড সিকিউরিটিজ, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেড, ষড়জ, ভিসা থিং ও স্টুডিও ঢাকা।