বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২৮ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক:
মোহাম্মদ নোমান কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে একজন তৃতীয় শ্রেণীর চাকরীজীবি কিন্তু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ এবং নিপুন হাতে দূর্নীতির টাকা ভাগভাটোয়ারা করতে পারার চরম দক্ষতায় তাকে গড়ে তুলেছে জেলা সদর হাসপাতালের কিং হিসাবে। ছাত্রজীবন থেকে শিবির ক্যাডার হিসাবে পরিচিত নোমান এখন পুরু হাসপাতালের বেশির ভাগ কর্মচারীর ভাগ্য নির্ধারক হয়ে বসে আছে। পেকুয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা নোমান এক সময় চরম দারিদ্রতার মাঝে থাকলেও বর্তমানে গ্রাম আলিশান বাড়ি এবং বিপুল পরিমান জমির মালিক বলে জানান স্থানীয়রা।
জেলা সদর হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে চর্তুথ শ্রেণীর কর্মচারী হিসাবে কাজ করতো ঘোনারপাড়ার বাসিন্দা কল্যানী নামের এক মহিলা,সরকারি না হলেও এনজিও থেকে তার বেতন হতো। সর্বশেষ আরআরআরসিতে কর্মরত ছিল কল্যানী কিন্তু কয়েকমাস আগে কল্যানীকে বাদ দিয়ে তার স্থলে চাকরী পায় নোমানের ভাই আবছার। এই কথা জানতে পেরে র্স্টোক করে কল্যাণী অসুস্থ হয়ে ১ মাস পর মারা যায় কল্যাণী। এক ভিডিও বার্তায় হাসপাতালে কর্মরত আরেক কর্মচারী নুর বানু জানান,আমি প্রায় ৭/৮ বছর ধরে হাসপাতালে কাজ করছি, প্রথমে আউটসোর্সিংয়ে কাজ করতাম সেখানে প্রায় ৩ বছর কাজ করে একটাকাও পায়নি, পরে আমাদের এনজিওতে চাকরীর কথা বলে নোমান এবং তার প্রধান সহযোগি আয়ুব আমার কাছ ৫ হাজার টাকা নিয়েছে। এর পরও বেশ কয়েকমাস আমার চাকরী না হওয়ায় একদিন নোমানের কাছে গেলে সে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এক পর্যায়ে মারতে চেয়েছে অথচ আমি তার মায়ের বয়সি মহিলা। নুর বানু জানান,নোমান এবং আয়ুব প্রত্যেক জন থেকে ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে হাসপাতালে এনজিওতে চাকরীতে ঢুকিয়েছে। আমি অনেক প্রমান দিতে পারবো। আবার অনেকের কাছ থেকে মাসিক ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। অনেকে চোখের পানি ফেলে কিন্তু চাকরী হারানোর ভয়ে কেউ মুখ খুলেনা। মূলত টাকা তুলে আয়ুবের মাধ্যমে।
এদিকে সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে আয়ুব একজন বেসরকারী চাকরীজীবী কিন্তু হাসপাতালে থাকা তার আত্বীয় স্বজনের ক্ষমতায় সে এখন সেখানে সরকারি চাকরীজীবীদের বস, পুরু হাসপাতালের সুপারভাইজার হিসাবে দায়িত্বপালনের পাশাপাশি স্টোর কিপারের দায়িত্বপালন করে। একজন বেসরকারী লোক কিভাবে স্টোর কিপারের দায়িত্ব পায় ? এমন প্রশ্নে উত্তর জানা নেই হাসপাতালে কর্মরত অনেক সিনিয়র কর্মচারীদেরও। জানা গেছে আয়ুব স্টোরকিপার হওয়ার সুবাধে এনজিও থেকে দেওয়া অসংখ্য নামীদামী ঔষধ গোপনে বিক্রি করে দেয়,চকরিয়া,বদরখালী,এবং চিরিঙ্গার কয়েকটি ফার্মেসীতে তার বিক্রি করা ঔষধ প্রতিনিয়ত সরবরাহ করে তাদের বিস্বস্ত কর্মচারী লিফটম্যান সরওয়ার। এখানে শেষ নয়,নোমান এখন পুরু হাসপাতালের খাদ্য বিতরণের দায়িত্বে তার কথায় খাদ্য বিতরণের যতসব অনিয়ম দূর্নীতি হয়। আবার বিলপ্রতি তার জন্য বরাদ্ধও থাকে ভাল। প্রায় বছর খানেক আগে জেলা সদর হাসপাতালে রোগিদের খাদ্য সরবরাহ নিয়ে বস্তুনিষ্ট সচিত্র প্রতিবেদন স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে, সেই সংবাদে সাংবাদিককে সহযোগিতা করার দায়ে সিরাজ নামের একজন কর্মচারীকে রাতারাতি উখিয়া হাসপাতালে বদলী করা হয়েছিল। সাংবাদিককে সহযোগিতা করার শাস্তি তিনি এখনো পেয়ে যাচ্ছেন।
এছাড়া সম্প্রতী হাসপাতালে কর্মরত এক নারী কর্মচারীকে শ্লিলতাহানী এবং ধর্ষণ চেস্টারও অভিযোগ রয়েছে নোমান, আয়ুবের বিরুদ্ধে। বিষয়টি ইতি মধ্যে হাসপাতালের সর্বোচ্চ কর্মকর্তারা অবহিত হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কেউ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন কর্মচারী জানান,পুরু হাসপাতালে বিভিন্ন এনজিওতে প্রায় ২০০ জন কর্মচারী কাজ করে,সে সুবাধে সরকারি কর্মচারীরা কোন কাজ করেনা বললেই চলে তারা শুধু হাজিরা দিয়ে সামান্য ঘুরাফেরা করেই কাজ শেষ। তার বিপরীতে প্রায় ২০০ জন কর্মচারীর মূল বস এখন নোমান এবং আয়ুব,তারা যখন যাকে ইচ্ছা চাকরী ছাড়া করে,যাকে ইচ্ছা চাকরী দেয়। কয়েকদিন আগেও সামান্য কারনে মালেকা নামের এক নারী কর্মচারীকে হাসপাতালে না আসতে বলেদিয়েছে আয়ুব। আবার প্রত্যেক কর্মচারী মাস শেষে তাদের টাকা না দিলেও তাও চাকরী থাকেনা। এসব অনিয়মের বিষয়ে হাসপাতালের উর্ধতন কর্মকর্তারা জানে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন,সব জানে,এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দিতে গেছে তার চাকরী আগে গেছে,আর কর্মকর্তারা সরসারি বলে ম্যানেজ করে চাকরী করতে পারলে কর না পারলে চলে যাও।
এ ব্যপারে মোহাম্মদ নোমানের সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা,অযথা আমার বিরুদ্ধ ষড়যন্ত্র করছে।
এ বিষয়ে দূর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত কার্যাক্রম ২ এর কক্সবাজারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মোঃ রিয়াজ উদ্দিন বলেন, কক্সবাজারে জেলা সদর হাসপাতালের অনিয়ম দূর্নীতি নিয়ে আগে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে যা এখনো চলমান। বর্তমানেও নতুন করে অনেক তথ্য আসছে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলে শীঘ্রই সব বিষয়ে একটি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ ব্যপারে জেলা সদর হাসপাতালের তত্ববধায়ক ডাঃ মামুনুর রহমান বলেন, হাসপাতালের কর্মচারীদের কোন অভিযোগ বা অসুবিধা থাকলে সেটা আমাকে জানালে অবশ্যই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।