রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫০ পূর্বাহ্ন
ঈদগাঁও প্রতিনিধি:
ঈদগাঁও উপজেলার সাড়ে পাঁচ হাজার একর ফসলী জমিতে পানি সরবরাহ বন্ধ রেখেছে রাবার ড্যাম কমিটি। ইট ভাটা মালিকদেরকে ফসলি জমি থেকে টপ সয়েল কাটার সুযোগ দিতে রাবার ড্যাম প্রকল্প থেকে পানি সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। এর পেছনে মোটা অংকের লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে।
পানির অভাবে আসন্ন বুরো মৌসূমে বীজতলা তৈরী করতে পারছেনা চাষীরা। ফলে উপরোক্ত সব জমিতে জমিতে কৃষি উৎপাদন পিছিয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ, ঈদগাঁও নদীতে স্হাপিত দুইটি রাবারড্যাম থেকে শুস্ক মৌসূমে বৃহত্তর ঈদগাঁওর সাত ইউনিয়নের ফসলী জমিতে পানি সরবরাহ করা হয়। এতদএলাকার প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার একর ধানক্ষেত ও সবজিক্ষেতে এ পানি দিয়ে চাষ করা হয়।
একমাসেরও বেশী সময় আগে বিগত অগ্রাহায়ন মাসে আমন ধান কেটে নেয়ার পর থেকে এখানকার শষ্যভান্ডার খ্যাত বিশাল বিলগুলো খালি পড়ে আছে। জালালাবাদের ধৎকা বিল, পোকখালীর তেইক্কা বিল, চৌফলদন্ডী বিল, ইসলামাবাদ বিল ও আরো অন্যান্য বিলের উর্বর ফসলী জমিতে আসন্ন বুরো মৌসূমের জন্য এখনো পানি সরবরাহ করা হয়নি। এর ফলে চরম বিপাকে পড়েছে বৃহত্তর ঈদগাঁও’র ৭ ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৫ হাজার একর ফসলি জমি, কৃষক ও কৃষিখাত। আসন্ন বুরোধান মৌসুমের জন্য বীজতলা তৈরীর সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও পানির অভাবে বীজতলা তৈরি করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
রামুর ঈদগড় থেকে ঈদগাঁও উপজেলার পোকখালী পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটারব্যাপী ঈদগাঁও নদীর চরে চাষকৃত শত শত একর সবজিক্ষেতও এখন সেচের পানি সংকটে পড়েছে।
ঈদগাঁও, জালালাবাদ, পোকখালী, ইসলামাবাদ ও সদরের ভারুয়াখালী, চৌফলদন্ডী ও ইসলামপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন বিলে বিগত আমনধান মৌসুমের ধান কাটার পর আপাতত খালি হওয়া ধানক্ষেত থেকে টপসয়েল কাটার সুযোগ করে দেয়ার জন্য ইটভাঁটা মালিকদের সাথে রাবার ড্যাম কর্তৃপক্ষ, স্কিম ম্যানেজার ও সংশ্লিষ্টদের গোপন আতাঁতের অভিযোগ তুলেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাষীরা।
সরেজমিন দেখা যায়, বিভিন্ন বিলের ফসলী জমি থেকে রাতদিন মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। শতাধিক ডাম্পার ট্রাক ও ডজন খানেক এক্সেভেটর দ্বারা এসব মাটি কাটা হচ্ছে। এমনকি রাতেও শক্তিশালী সার্চলাইট জালিয়ে মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছে এরা।
স্হানীয় সন্ত্রাসী, চোর ডাকাত ও এলাকার মাস্তানদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সিন্ডিকেট মাটি কাটা ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না বলে জানা গেছে।
কৃষকরা জানান, ধানক্ষেতে পানি প্রবাহের জন্য রাবার ড্যাম ফুলানো হলেও এখনো সেচনালা কাটার কাজ সম্পন্ন করেনি স্কীম কর্তৃপক্ষ। রহস্যজনক কারনে রাবার ড্যাম থেকেও পানি ছাড়া হচ্ছে না।
আর এ সুযোগে বৃহত্তর ঈদগাঁও’র বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত ৭টি ব্রিকফিল্ডে এখন ফসলীজমি থেকে রাত দিন টপসয়েল কেটে নিচ্ছে ইট ভাটা মালিকরা। গতকাল সরেজমিন দেখা যায় বিভিন্ন পয়েন্টে ডজনখানেক শক্তিশালী এক্সেভেটর দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে।ফসলী জমিতে পানি উঠলে এই মাটিকাটা সম্ভব হবেনা। তাই পানি সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। তাই বিভিন্ন কলাকৌশল ও মোটা অঙ্কের টাকায় চারদিক ম্যানেজ করে রাবার ড্যামের পানি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। আর এতে চরম বিপদে পড়েছে ৭/৮ ইউনিয়নের সাড়ে পাঁচ হাজার একরের কৃষিখাত। এখনই বুরো চাষ শুরু করা না গেলে পরবর্তীতে চৈত্র-বৈশাখ মাসে সেচ সংকট হতে পারে। এতে আগামীতে ঈদগাঁও উপজেলায় ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি দেখা দেওয়ার আশংকা রয়েছে। এ ব্যপারে রাবার ড্যাম ব্যবস্থপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ মিন্টু বলেন,স্কিম ম্যানেজাররা শাখা নালা খুলতে না পারায় কৃষি জমিতে পানি যেতে দেরী হচ্ছে। এটা ছাড়া অন্য কোন বিষয় নেই।