রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২৭ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
মহা নিবন্ধক অধিদপ্তরের প্রশাসনিক শাখার নিয়োগ বদলীতে অনিয়মই মাঠ পর্যায়ের রেজিস্ট্রি অফিস গুলোতে অনিয়ম দুর্নীতি উস্কে দিচ্ছে বলে সচেতন মহলের অভিযোগ। এ শাখার দুর্নীতিবাজদের ম্যানেজ করে অফিস আদেশ উপেক্ষা করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে রেজিস্ট্রি অফিস কেন্দ্রীক দুর্নীতিবাজ চক্র।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, অফিস সহায়ক থেকে তদুর্ধ কর্মচারীদের নিয়োগ বদলীতে মোটা অংকের উৎকোচ নিচ্ছে প্রশাসনিক শাখার দায়িত্বপ্রাপ্তরা। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই অফিস সহায়ক ও সহকারীরা সাব-রেজিস্ট্রারকে দুর্নীতি কর্মকাণ্ডে বাধ্য করছে। শুধু তাই নয়, বদলীর আদেশ অমান্য করেও কোন কোন কর্মচারী বহালতবিয়তে কিংবা পূর্ব কর্মস্থলে ফেরত আসছে নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্ণ না হতেই। সম্প্রতি কক্সবাজার জেলায় নিবন্ধন দপ্তরের নিয়োগ বদলীতে এমন আপত্তি উঠেছে। গত ৩ বছর পূর্বে অফিস সহায়ক মানিক দাশকে টেকনাফে বদলী করা হলেও এবারের বদলীতে তাকে কক্সবাজার সদরের পূর্ব কর্মস্থলে বহাল করা হয়েছে। একই ভাবে সদরের অফিস সহায়ক নুরুল কাদের তোফায়েলকে টেকনাফের পূর্বের কর্মস্থলে বদলী করা হয়েছে।
সচেতন মহল বলছে, নিবন্ধন অধিদপ্তরের প্রশাসনিক শাখার সংশ্লিষ্টদের উৎকোচ দিয়েই ঘুরেফিরে একই স্থানে নিয়োগ ভাগিয়ে নিচ্ছে তারা। অফিস সহায়ক মানিক দাশের বিরুদ্ধে সরকারি স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে জ্ঞাত বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া কক্সবাজার শহরের বৈদ্যরঘোনা সড়কে পাহাড় কেটে কউকের অনুমোদনবিহীন ৩ তলা ঝুকিপূর্ণ ভবন উঠিয়েছেন তিনি। রেজিস্ট্রেশন দপ্তরে যার দায়িত্ব সে পালন না করাদ অভিযোগও পুরনো। ঝাড়ুদার পদের ব্যক্তি মোটর সাইকেল হাকিয়ে আলিশান জীবনাপন করলেও তার পদে আউটসোর্সিংয়ে একজনকে এ দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে কক্সবাজার সদরের সেই নাইট গার্ড বাবলা পাল পদোন্নতি নিয়ে রামু সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে বদলী হয়েছে। একইভাবে চকরিয়ার অফিস সহায়ক নন্দরাম দে’কে গত ৩/৪ মাস পূর্বে এক অফিস আদেশে কক্সবাজার সদরে বদলী করা হলেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগসাজশে চকরিয়ার কর্মস্থলে একযুগ পুর্তির উৎসবের অপেক্ষায় রয়েছেন। একই অফিসে গত জুন মাসে দুদকের অভিযানে ধরা পড়া থেকে রক্ষা পেতে কৌশলে পালানো অফিস সহায়ক শ্যামল বড়ুয়া গত মাস থেকে দিব্যি সেই অফিসে নিয়মিত অফিস করছে। এমনকি এ মামলা থেকে নিজেকে বাঁচাতে রেজিষ্ট্রেশন দপ্তর ও তার সম্প্রদায়ের উর্ধ্বতন কয়েকজন নেতার মাধ্যমে নিয়মিত তদবির করছে এবং জেলার অন্য কোন রেজিষ্ট্রি অফিসে বদলীর চেষ্টায় রয়েছে। সেই শ্যামলও রেজিষ্ট্রি অফিস কেন্দ্রীক দুর্নীতির মাধ্যমে বিত্তবৈভব গড়েছে। কক্সবাজার শহরের মহাজের পাড়ায় তার বাড়িটি ৩ তলা ভবনে নতুন রূপ দিচ্ছে। চকরিয়া রেজিষ্ট্রি অফিসে দুদকের সেই অভিযানে সাব-রেজিষ্টার ও কর্মচারী দুর্জয় পাল ৩ লাখ টাকা সহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার হলেও অফিস সহায়ক শ্যামল বড়ুয়া অফিস ভবনের ৩য় তলার ছাদ থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যান। এদিকে কক্সবাজার সদরের রেজিষ্ট্রি অফিসে দাতাগ্রহিতাদের নানা রকম আইন দেখিয়ে মোটা অংক হাতিয়ে নিচ্ছে প্রধান সহকারী সজিব দাশের নেতৃত্বে একটি চক্র। স্বয়ং সাব-রেজিষ্টারও এ কাজে সহযোগী বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সেবাপ্রাপ্তিরা জানিয়েছেন। ১ একর ৮০ শতক জমির সাধারণ ক্ষমতাপত্র (পাওয়ার অব এটর্নি) নিবন্ধনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দলিল লেখকের কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকা ঘুষ চেয়েছে প্রধান সহকারী সজিব দাশ। এমনকি সজিব দাশের কথায় আশ্চর্য বনে যাওয়া ঐ দলিল লেখক এ ব্যাপারে সাব-রেজিষ্টার জাহাঙ্গীর আলমের শরণাপন্ন হলেও তিনিও সজিব দাশের দাবিকৃত অংকের প্রতি একাট্টা দেখিয়েছেন বলে অভিযোগে জানা যায়। ঐ জমির স্বত্ববানদের মধ্যে একাধিক নাবালক থাকায় রেজিষ্ট্রি অফিসের সংশ্লিষ্টরা নাবালকদের নামে নামজারী সৃজনের তাগাদা দেন ঐ দলিল লেখককে। নচেৎ ১ লাখ টাকা না দিলে ঐ ‘পাওয়ার’ নিবন্ধন না করার হুমকিও দেন প্রধান সহকারী সজিব দাশ। তবে শেষ পর্যন্ত পিএমখালী ইউনিয়নের তোতকখালী মৌজার ঐ জমির পাওয়ার এটর্নি নিবন্ধিত হয়েছে কিনা জানা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে সাব-রেজিষ্টার জাহাঙ্গীর আলমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও অফিস সংশ্লিষ্টদের অবহেলায় তা সম্ভব হয়নি।