রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৪ পূর্বাহ্ন
কক্সবাজার ৭১ ডেস্ক:
দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে আরও একটি বছর। তবুও কাজের কাজ কিছুই করতে পারেনি বিএনপি। উপরন্তু পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে বিতর্কিত হয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এছাড়া সভা-সমাবেশে তাদের নিজেদের মধ্যে হাতাহাতি ও চেয়ার ছোড়াছুড়ি ঘটনাও ছিল নৈমিত্তিক ব্যাপার। এর মধ্যেও সেই পুরনো টেপরেকর্ড বাজিয়েছে বিএনপি। বলেছে, সামনেই দলের অসুস্থ চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে কঠোর আন্দোলন। কিন্তু বছর সায়াহ্নে এসেও সেই আন্দোলনের বাস্তবিক রূপ দেখতে পায়নি দেশবাসী। শুধু দেখেছে, আন্দোলনের নামে তাদের সেই মেকি হুংকার। বিশিষ্টজনদের ভাষ্য, শুধু মুখে মুখেই খৈ ফোটায় বিএনপি। আর কাজের বেলায় লবডংকা। যা দেশবাসী ইতোপূর্বেও দেখেছে, বছরজুড়েও দেখলো।
নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্যমতে, বছরের শুরুতে করোনার দোহাই দিয়ে মানুষের পাশে না থেকে নিজেদেরকে বন্দি করে রেখেছিলো চার দেয়ালের ভেতরে। বাতিল করেছিল দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম। সে সময় মাঠে দুর্দান্ত প্রতাপে জনমানুষের সেবায় দিনরাত পরিশ্রম করেছে ক্ষমতাসীন সরকারি দল আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। ত্রাণ-চিকিৎসা-আর্থিক সহায়তাসহ যে কোন সাহায্যে সার্বক্ষণিক তারা নিয়োজিত ছিলো মানুষের পাশে। অথচ বিএনপি নেতৃবৃন্দ জনগণকে ত্রাণ সহায়তা তো দেয়ই নি, উল্টো মানুষকে ত্রাণ দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন দাতা থেকে প্রাপ্ত অর্থ নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়।
এখানেই শেষ নয়। দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কয়েক ডজন সমাবেশ করে বিএনপি। তবে সমাবেশের অধিকাংশ মানুষই ছিল ভাড়াটে। যাদেরকে আনা হয় ১০০০/১২০০ টাকার সঙ্গে ১ প্যাকেট বিরিয়ানির চুক্তিতে। ফলশ্রুতিতে এসব অদলীয় লোক প্রায়শই নিজেদের মধ্যে মিছিল-সভাবেশে নিজেদের আগে দাঁড়ানো/বসা ও সেলফি তোলা নিয়ে জড়িয়েছে সংঘর্ষে। বিশেষ করে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব, নয়াপল্টন ও হবিগঞ্জের কথা না বললেই নয়। আর এ সময় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের উপর নির্মমভাবে হামলা চালিয়ে আহত করেছে দেশের আইনশৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত সদস্যদের।
এর বাইরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস দলের নেতা এম ইলিয়াস গুমের পেছনে নিজেদের জড়িত থাকার কথা বলেও দেশের রাজনৈতিক অঙ্গণ তথা দলের ভেতর দারুণ হৈচৈ ফেলে দেন। এ নিয়ে আব্বাসের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠিও দেয় বিএনপি। আরেকটি ঘটনাও না উল্লেখ করলে নয়। বছরের শেষদিকে এসে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ নিয়ে মঞ্জু ও তার এলাকা খুলনার নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হন। পদত্যাগ করেন ৫ শতাধিক দলীয় নেতাকর্মী। সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কমিটি প্রদানের ঘটনা তো ছিলই। সবমিলিয়ে বছরটা বিএনপির কেটেছে সম্পূর্ণ হ-য-ব-র-ল।
এ বিষয়ে কথা বলতে বাংলানিউজ ব্যাংক যোগাযোগ করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি মিলেই বছর কেটেছে। তবে আমরা উতরে উঠবো। অবস্থার পরিবর্তন হবেই। তারেক রহমানের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা সে পথেই হাঁটছি।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, জন সমর্থনহীন বিএনপির উচিত ছিল জন সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে নিজেদের অবস্থান মজবুত করা। কিন্তু তারা তা না করে বরং উল্টো ঘরে বসেই হুংকার দিয়েছেন আন্দোলন-সংগ্রামের। বলেছেন, তারা উপায়তান্ত্রিকভাবেই নেত্রীকে মুক্ত করে দলের পুরনো ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনবেন। কিন্তু তা কেবল কথার কথাই রয়ে গেছে। তাদের সেই পুরনো সংলাপ, ঈদের পরে আন্দোলনের মতো। এ থেকেই বোঝা যায়, অনৈক্য আর দ্বন্দ্বের চরম শিখরে আরোহন করেছে বিএনপি। যেখান থেকে তাদের আর ফেরার পথ নেই।