শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:১৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

অবশেষে প্যারাবন কেটে বসতি নির্মাণ বন্ধে আইনি নোটিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদী তীরের জলাভূমি দখল করে প্যারাবনের গাছ কেটে কাঁচাপাকাবাড়িসহ টিনের বেড়া দেওয়া হচ্ছে। এ প্যারাবন কেটে বসতবাড়ি ও অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধে দুই সচিবসহ ১২ সরকারি কর্মকর্তাকে আইনি নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস)।

রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকালে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে তাঁদের ঠিকানায় এই নোটিশ পাঠানো হয়। কক্সবাজার কন্ঠকে এ তথ্য জানিয়েছেন ইয়েসের প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল মামুন। নোটিশে স্বাক্ষর আছে বেলার আইনজীবী এস হাসানুল বান্নার।

ইয়েসের প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল মামুন জানান, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রধান বন সংরক্ষক, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও কক্সবাজার সদর থানার ওসিকে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়, বনভূমি ধ্বংস, গাছ কেটে জলাধার দখল ও ভরাট কার্যক্রম দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মÐিত পর্যটন নগরী কক্সবাজার মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। নির্বিচারে পাহাড় কর্তন, নদী ভরাট, প্যারাবন ধ্বংস এই জেলায় দৈনন্দিন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বাদ পড়ছে না পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা, প্রাকৃতিক বন ও জলাভূমিগুলো।

সম্প্রতি, কক্সবাজার পৌরসভার বাঁকখালী নদীসংলগ্ন এলাকায় এক রাতে ৮ একরের প্যারাবন দখল করে ৩০ হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ভোররাত চারটা থেকে শুরু করে দিনে ও রাতে প্যারাবনের গাছ কাটা হচ্ছে। বাঁকখালী নদী এলাকায় প্রায় ৬০০ হেক্টর প্যারাবন বেড়িয়েছে, যা ২০৫ প্রজাতির পাখির আবাসস্থল। কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার জঙ্গল, বনভূমি, সমুদ্র সৈকত, খাড়ি, বালিয়াড়ি, ম্যানগ্রোভ ও উপকূলীয় এলাকায় পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে।

এসব এলাকায় প্রাকৃতিক গাছপালা কর্তন বা আহরণ, সব ধরনের বন্য প্রাণী হত্যা ও শিকার, প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল ধ্বংস করা পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী দÐনীয় অপরাধ বলে আইনি নোটিশে উল্লেখ করা হয়।

এর আগে ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বেলার করা একটি মামলায় বাঁকখালী নদী ঘিরে সব স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ নিয়ে কক্সবাজার কন্ঠ এ একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

উল্লেখ্য, কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর তীরে সৃষ্ট প্যারাবনের আনুমানিক ৫০ হাজার গাছ কেটে দখল করা হয়েছে কয়েক শ একরের জলাভূমি। গাছপালা উজাড় হওয়ায় ধ্বংস হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আবাসস্থল ও জীববৈচিত্র্য। গেল ৩ মাস ধরে বাঁকখালী নদীর প্যারাবন দফায় দফায় নিধনযজ্ঞ চালিয়ে আসছে স্থানীয় বেশ কিছু ক্ষমতাধর ব্যক্তি।

তাদের মধ্যে রয়েছে আইনজীবি, রাজনীতিবিদ, কতিপয় যুবনেতা, জনপ্রতিনিধি ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী গ্রæপ। তাদের নেতৃত্বে বাঁকখালী নদীর প্রায় ৫০ হাজার বাইন ও কেওড়া প্রজাতির গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলেছে। পাশাপাশি প্যারাবন ভরাট করে নির্মাণ করা হচ্ছে বাড়িঘর।

ভরাট করা প্যারাবন মোটা অংকের দামে বিক্রি করে তারা হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। উক্ত ঘটনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর হতে ৩টি মামলা দায়ের করা হলেও আটক নেই কেউ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *