রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১:০০ পূর্বাহ্ন
রামু প্রতিনিধি::
কক্সবাজারের রামুতে দশম শ্রেণি পড়–য়া এক ছাত্রের বিরুদ্ধে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) করার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। বাবা-মায়ের বিয়ের ২ বছর আগে জন্মতারিখ উল্লেখ করে সদ্য হালনাগাদ করা এ ভোটার পরিচয়পত্র নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
অভিযুক্ত ছাত্র আবদুর রহমান রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের উখিয়ারঘোনা টিলাপাড়া এলাকার নুর কাদের ও মনোয়ারা বেগম প্রকাশ মনিরা খাতুনের ছেলে।
আবদুর রহমান উখিয়ারঘোনা সাইমুম সরওয়ার কমল উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রণির ছাত্র। এ বিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালে সে জেএসসি পাস করে। জেএসসি পরীক্ষার মার্কশীট ও সনদপত্রে তার জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১ মে ২০০৫ ইং। তারা বাবা-মায়ের বিয়েও হয় ২০০২ সালের ১ মার্চ। কিন্তু বিয়ের দু বছর আগের জন্মতারিখ উল্লেখ করে সে গত ২৩ নভেম্বর ২০২১ ইং তারিখে জন্মনিবন্ধন সৃজন করে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ- সদ্য বিদায়ী কাউয়ারখোপ ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও চৌকিদার এর যোগসাজসে সে ভূয়া জন্মতারিখ উল্লেখ করে জন্মনিবন্ধন করতে সক্ষম হয়েছে। জন্মনিবন্ধন পাওয়ার একমাসের মধ্যে সে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) করেছে। এ জাতীয় পরিচয়পত্রে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেছেন ৪র্থ শ্রেণি পাস। অথচ সে দুই বছর পূর্বে জেএসসি পাস করে এবং বতর্মনানে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত রয়েছে। নবম শ্রেনির রেজিস্ট্রেশন কার্ডেও তার জন্ম তারিখ উল্লেখ করা হয় ১ মে ২০০৫ ইং।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রামু উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়- জন্মনিবন্ধনের ভিত্তিতে ওই ছাত্রের এনআইডি সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়া এনআইডি করার সময় তথ্যফরমে ওই ছাত্র শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখিয়েছে ৪র্থ শ্রেণি। এ কারণে তার সার্টিফিকেট দেখার সুযোগ ছিলো না। প্রতারণার মাধ্যম এনআইডি সৃজনের জন্য সে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি গোপন রাখে।
কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন- অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে শিশু শিক্ষার্থী আবদুর রহমানের জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি করা হয়েছে। এটা দূঃখজনক। ইউনিয়ন পরিষদ ও নির্বাচন অফিসের কতিপয় দূর্ণীতিবাজ জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি এ অনিয়মে জড়িত।
তিনি আরো জানান- আবদুর রহমানের বয়স এখনো ১৬ বছর। সে ইতিপূর্বে বাল্যবিয়ের চেষ্টা করে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমার আন্তরিক প্রচেষ্টায় তার বাল্যবিয়ে আটকে যায়। এখন তার পিতাসহ নানা প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে তাকে মিথ্যা জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি পেতে সহযোগিতা করেছে। অথচ আবদুর রহমানে জেএসসি সনদ এবং এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড আমরা দেখেছি। তাতে তার জন্মতারিখ ২০০৫ সালের ১ মে। এমনকি তার এনআইডিতে জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২০০০ সালের ২৬ জানুয়ারি।
ওইসময় তার বাবা-মায়ের বিয়েও হয়নি। বিয়ে হয়েছে ২০০২ সালের ১ মার্চে। এমন অভিনব প্রতারনার মাধ্যম এনআইডি কার্ড করার ঘটনা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের কর্মকান্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অবিলম্বে এ এনআইডি ও জন্মনিবন্ধন বাতিল করে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আবদুর রহমানের পিতা নুর কাদের জানান- তাদের বিয়ে ষ্ট্যাম্পমূলে আরো আগে হয়েছিলো। এমনকি ছেলে প্রথমে মাদ্রাসায় ও পরে বয়স কমিয়ে সাইমুম সরওয়ার কমল উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। বিদ্যালয়ের জেএসসি সনদ ও এসএসসি পরীক্ষার রেজিষ্ট্রেশন কার্ডের জন্মতারিখ সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।
ছেলের পিতার এমন বক্তব্যে বিষয়ে এলাকার জনপ্রতিনিধি সহ একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে- কাবিনের মাধ্যমেই তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। আগে বিয়ে হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এছাড়া আবদুর রহমান কোন মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেনি। প্রতারনার বিষয় ধামাচাপা দিতে তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উখিয়ারঘোনা সাইমুম সরওয়ার কমল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমান জানান- বিদ্যালয়ের জেএসসি সনদপত্র এবং এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ডে আবদুর রহমানের জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২০০৫ সালের ১ মে।
রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা জানিয়েছেন- বসয় কম হওয়া সত্তে¡ও জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি কার্ড করার বিষয়টি নিয়ে তিনিও অবগত আছেন। নির্বাচন অফিসের সাথে এ বিষয়টি নিয়ে আলাপ করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এমনকি এ জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)/জন্মনিবন্ধন বাতিলও করা হবে।