বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৩৭ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

প্রদীপ-লিয়াকতের মৃত্যুদন্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় খুনের সম্পৃক্ততা প্রমাণ পাওয়ায় বিতর্কিত ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীর মৃত্যুদন্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। মামলায় ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতকে সহযোগিতার অপরাধে ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ দেয়া হয়। যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। মামলার অভিযোগ থেকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্যসহ সাতজনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।

সোমবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে ৩০০ পৃষ্ঠার রায় পাঠকালে প্রধান অভিযুক্ত দুজনের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুুদন্ড এবং বাকি ৬জনকে যাবজ্জীবন ও বাকি ৭জনকে খালাস ঘোষণা করেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল।

এরআগে দুপুর ২টা ১৬ মিনিটে এজলাসে এসে আদালতের কার্যক্রম শুরুর পর মামলা সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক আলোচনা করেন বিচারক। এরপর শুরু করেন অপরাধের পর্যবেক্ষণ বয়ান। সাক্ষ্য-প্রমাণে কার কী অপরাধ দাঁড়িয়েছে সেসব তুলে ধরার পর হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অপরাধ অনুসারে সাজা ঘোষণাকালে প্রধান দুই অভিযুক্তকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। এমনটি জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম।

এর আগে বেলা ২টার দিকে আদালতে হাজির করা হয় মামলায় অভিযুক্ত বিতর্কিত ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকতসহ ১৫ আসামিকে। রায়কে কেন্দ্র করে আদালতের চারপাশে নিছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। আদালতের সরকারি কৌঁসুলি, বাদী পক্ষের আইনজীবী ও আসামি পক্ষের আইনজীবীসহ বাদী ও বিবাদীদের স্বজন এবং সংশ্লিষ্টরা এজলাসে উপস্থিত ছিলেন।

আদালত সূত্রে জানিয়েছে, বিচারকের রায় ঘোষণার পর এজলাস কক্ষে কেঁদে ওঠেন ১৫ আসামির সবাই। কেউ মৃত্যুদন্ডের রায় শুনে কাঁদেন। কেউ যাবজ্জীবনের জন্য বাকি সাতজন খালাস পাওয়ার আনন্দে কেঁদে ওঠেন।

আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা রায়ে আংশিক সন্তুষ্ট। প্রত্যাশা অনুসারে বিচার পায়নি। যারা খালাস পেয়েছেন তারাও যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্তদের মতোই সমান অপরাধী হিসেবে গণ্য। পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পেলে চিন্তা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সিনহা হত্যা মামলার বাদির আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফাও রায়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে উল্লেখ করেন। তার মতে, প্রত্যাশা অনুসারে বিচার পাওয়া যায়নি। খালাস পাওয়া আসামীদেরও সাজা কাম্য রয়েছে তার।

মামলার বাদী ও নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস প্রতিক্রিয়ায় বলেন, মামলার দুই প্রধান আসামির ফাঁসির রায়ের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। কিন্তু সাতজনের খালাস নিয়ে রয়েছে কিছুটা অসন্তোষ। যে সাতজনকে খালাস দেয়া হলো, আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, তাদেরও কিছুটা দায়বদ্ধতা ছিল। সেক্ষেত্রে হয়ত তাদের কিছু সাজা হতে পারত বলে আমার মনে হয়। তবে, রায়ে নয়-রায় কার্যকর হলে তবেই সন্তুষ্টি মিলবে বলে উল্লেখ করেন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস।

অতিরিক্ত পিপি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন জিয়া বলেন, কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত সৃষ্টির ৩৮ বছরের ইতিহাসে এ প্রথম এত দ্রুত কোন হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। এ মামলায় ৮৩ সাক্ষির মাঝে ৬৫ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *