শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:২৮ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে যৌন হয়রানির ও অশালীনতার অভিযোগে কর্তব্যরত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে অচলাবস্থা হয়ে পড়েছে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল।
৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কর্মবিরতি চলছে। এ নিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে চিকিৎসা নিতে আসা হাসপাতালের রোগিরা। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে ঘটনা নিরসনে অভিযুক্ত ডাক্তারকে বদলি করা হয়েছে।
কক্সবাজার ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. মীর ম.ম. বিল্লাহ তকী জানান, কক্সবাজার সদর হাসপাতালের গাইনী ও প্রসূতি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানীসহ অশালীন আচরণের অভিযোগ করেছেন ৬ নারী ইনটার্ন চিকিৎসক। সে অভিযোগের ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাদের বেতন ভাতা কেটে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমন একটি পত্র বুধবার ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কাছে পাঠানো হয়। এরই প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ শাখার সদস্যরা। ফলে সকাল থেকে কোন ওয়ার্ডে ইন্টার্নরা তাদের কাজে যোগ দেয়নি। তবে জরুরী বিভাগের কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল।
তত্বাবধায়ক বরাবরে দেয়া অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে- ২০২১ সালের ২৬ নভেম্বর কক্সবাজার সদর হাসপাতালের গাইনী ও প্রসূতি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানীসহ অশালীন আচরণের কারণে অভিযোগ করেন ইন্টার্নরা। কিন্তু সে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে প্রহসনমূলকভাবে তাদের এক্সটেনশন ও বেতন ভাতা তিন মাসের কেটে রাখার আদেশ জারি করে। এর প্রতিবাদে কর্মবিরতি ঘোষণা করে ইন্টার্নরা। যা এখনো চলছে।
কক্সবাজার ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ২৬ নভেম্বরের অভিযোগ আমলে না নিয়ে উল্টো ইন্টার্নদের উপর চাপিয়ে দিয়ে ৬ ইন্টার্নের বিরুদ্ধে আদেশ জারি করে কর্তৃপক্ষ। যা প্রহসনমূলকভাবে করা হয়েছে। অভিযুক্ত চিকিৎসক শুধু নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক নয় রোগীর স্বজনদের সঙ্গেও এমন আচরণ করেন। যা লিখিত আকারে দিয়েও কোন নেয়া হয়নি।
তিনি আরও জানান, ৬ জন ইন্টার্ন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে জারিকৃত আদেশ প্রত্যাহার ও অভিযুক্ত গাইনী ও প্রসূতি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে এ কর্মবিরতি চলমান থাকবে।
জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: মুমিনুর রহমান জানান, ‘ ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বেশকিছুদিন ধরে উচ্ছৃংখল আচরণ করছে। কিছুদিন আগে এক আইনজীবীকে রাস্তায় মারধর করেন ইন্টার্ন ছেলেরা। এনিয়ে কক্সবাজার আইনজীবী সমিতির সভাপতি সহ এক সমঝোতার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, সম্প্রতি হাসপাতালের গাইনী ও প্রসূতি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহফুজুর রহমানকে রাতে রুমের দরজা বন্ধ করে পেটানো হয়। এ নিয়ে ডা. মাহফুজুর রহমান ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গেলে আমি নিষেধ করি এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। পরে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বেতন বন্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত হয়। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে গাইনী ও প্রসূতি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে যৌন হয়রানি ও অশালীন অভিযোগে লিখিত অভিযোগ করেন। বিষয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জানানো হলে ককর্তৃপক্ষ হাসপাতালের গাইনী ও প্রসূতি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহফুজুর রহমানকে সরিয়ে নেন এবং অন্যত্রে বদলি করেন। হাসপাতালের চলমান কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান তত্ত্বাবধায়ক ডা:মুমিনুর রহমান।
এব্যাপারে অভিযুক্ত গাইনী ও প্রসূতি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহফুজুর রহমানের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।