রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ পূর্বাহ্ন
মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হবে ২০২৫ সালের মধ্যভাগে। সেই বন্দর থেকে দিনে গড়ে ৪ হাজার পণ্যবাহি গাড়ি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাবে। বিদ্যমান দেড়-দুই লেনের সেই মহাসড়ক বিপুল গাড়ির চাপ সামাল দিতে পারবে না। আর ২০২৫ সালের আগে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করার কাজ শেষ হচ্ছে না।
এই অবস্থায় গভীর সমুদ্রবন্দরের পণ্যবাহি গাড়ি এবং কক্সবাজারমুখী পর্যটকের বিপুল গাড়ির চাপ সামাল দিতে এই মহাসড়কের ৪টি বাইপাস এবং একটি ওভারপাস নির্মাণের সিদ্ধান্ত রয়েছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে, এসব স্থানের যানজট এড়িয়ে নির্বিঘ্নে পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করা। সেই কাজটিও ২০২৫ সালের আগে নির্মিত হচ্ছে না। এই বাইপাসগুলো হলো চকরিয়া, লোহাগাড়া, দোহাজারি ও পটিয়া। আর ওভারপাস বা ফ্লাইওভার হচ্ছে সাতকানিয়ার কেরানিহাটে। সেই বাইপাসগুলো নির্মাণের আগেই এই মহাসড়কে গুরুত্বপূর্ণ চারটি সেতুর নির্মাণকাজ পুরোদমে চলছে।
জানা গেছে, জাপানি প্রতিষ্ঠান ‘নিপ্পন কোয়েই’ সেই বাইপাস-ওভারপাসের মাঠ পর্যায়ে জরিপ কাজ শেষ করেছে ইতোমধ্যে। সেই স্টাডি রিপোর্ট সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে ফেব্রুয়ারিতে জমা দেবে। এরপর ডিপিপি তৈরি হবে, সরকারের সাথে ঋণ নিয়ে বোঝাপড়ার পর কনসালটেন্ট নিয়োগ হবে। সেই প্রতিষ্ঠান বিস্তারিত নকশা ও প্রকল্প ব্যয়সহ দরপত্র তৈরি করে দেবে। যে গতিতে এগোচ্ছে, তাতে ২০২৩ সালে কাজ শুরু হবে এবং শেষ হতে সময় লাগবে ২০২৭ সাল। ফলে ২০২৫ সালের আগে বাইপাস তৈরি করে নিরবচ্ছিন্ন পণ্য পরিবহনের যে উদ্যোগ সেটির সুফল মিলবে না।
জানতে চাইলে বাইপাসের প্রকল্প পরিচালক শ্যামল কুমার ভট্টাচার্য্য কালের কণ্ঠকে বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে স্টাডি রিপোর্ট জমা দেবে জাপানের নিপ্পন কোয়েই। সেখানে প্রকল্পের বিস্তারিত অনেক কিছু থাকবে। সেই স্টাডি রিপোর্টের পর আভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (ইআরডি) আলোচনা করে একমত হলেই ঋণ নিয়ে জাপানের সাথে সরকার কথা বলবে।
সড়ক ও জনপথ দপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শ্যামল কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, যে গতিতে কাজ এগোচ্ছে তাতে ২০২২ সালেরই ডিপিপি চূড়ান্ত করে কনসালটেন্ট নিয়োগ দেয়া যাবে। সেই কনসালটেন্ট সব ডকুমেন্ট তৈরি করে সরকারকে জমা দেবে। এরপর মূল্যায়ন করে দরপত্র ডেকে ঠিকাদার নির্বাচন করে নির্মাণকাজ শুরু করতে ২০২৩ সাল নাগাদ লাগতে পারে। ২০২৪ সালে কাজ শুরু হলে ২০২৭ সালের আগেই নির্মাণ শেষ হবে।
জানা গেছে, ১৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি পটিয়া থেকে দোহাজারি পর্যন্ত দেড় লেনের। এরপর দোহাজারি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দুই লেনের সড়ক। পটিয়া অংশে অনেকগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক আছে এবং সড়ক আঁকাবাঁকা। কক্সবাজারমুখী পর্যটক এবং রোহিঙ্গা চাপ এই সড়ক এখনই চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
এখন কক্সবাজার ঘিরে ব্যাপক মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। ফলে তখন পরিবহনের চাপ আরো বেড়ে যাবে। সেই বাড়তি চাপ সামাল দিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি ছয়লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয় সরকার। সেটি নিয়ে স্টাডি করছে জাপানি আরেকটি প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে সেই রিপোর্ট জমা পড়েছে। সরকারের পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে আগ্রহী জাপানের মারুবেনি কর্পোরেশন। কিন্তু কবে নাগাদ সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে ২০২৫ সালে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের আগেই ছয় লেন প্রকল্প শুরু হবে না।
অধ্যাপক মোস্তফা জামান খারেচ বলছেন, মেগা প্রকল্পের সুফল পেতে হলে প্রথমেই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজটি প্রধানমন্ত্রীর ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ২০২৫ সালের আগেই এর নির্মাণ শেষ করতে হবে। অন্যথায় আমাদের ভোগান্তি বাড়বে, সুফল পাওয়া দীর্ঘায়িত হবে।
এই অবস্থায় মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করছে জাপানের জাইকা। সেই বন্দর নির্মাণ শুরুর আগে জরিপ চালাতে গিয়ে জাইকা দেখেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন আছে; যেগুলোতে সবসময় যানজট লেগেই থাকে। এজন্য বন্দর নির্মাণের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সেই স্টেশনগুলো যানজট এড়ানোর জন্য এই বাইপাস-ওভারপাস নির্মাণ করার প্রস্তাব দেয়। এরপর সরকার সেই উদ্যোগে সাড়া দেয়।
৪টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাইপাস করা হলেও কেরানিহাটে বাইপাস না হয়ে ওভারপাস বা ওফ্লাইভার কেন? জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলছেন, কেরানিহাটে সড়কের দু’পাশে আমাদের প্রচুর অধিগ্রহণকৃত জমি আছে। আর প্রধানমন্ত্রীর একটি নির্দেশনা আছে, কৃষি জমি বাঁচিয়ে সড়ক নির্মাণকে অগ্রাধিকার দেয়া। সেই নির্দেশনা এখানে কাজে লাগানো হচ্ছে।
সূত্র-কালেরকণ্ঠ