মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫, ০৫:১৯ অপরাহ্ন

সিএনজি চালক থেকে ৫ বছরে কোটিপতি!

বিশেষ প্রতিবেদক:

নাম শাহা জাহান খান (২৮)। বাবা জহির আহাম্মদ ছিলেন পানের দোকানদার। জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়ে কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে এসে ঝিলংজার পশ্চিম লারপাড়া এলাকায় আশ্রয় নেন জরাজীর্ণ একটি ভাড়া বাসায়। অর্থিক অনটনে পড়া লেখায় মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোতে পারেন নি। জীবন যুদ্ধে নেমে কাজ নেন একটি প্যারেজে। দু’বছর যেতে না যেতেই হয়ে উঠেন সিএনজি চালক। এরপর থেকে সিএনজি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা শাহা জাহানের উত্থানের কাহিনী সিনেমার গল্পকেও হার মানায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১২ সাল পর্যন্ত সিএনজি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসলেও ১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তুলেন এক মাদক পাচারকারী সিন্ডিকেট। এরপর থেকে তাদের পেছনে ফিরে থাকাতে হয়নি। ছয়জনের এই সিন্ডিকেটে অন্যতম ছিলেন সিএনজি চালক শাহা জাহান। প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করতেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ও অত্মস্বীকৃত ইয়াবা সম্রাট শাহ জাহান আনসারীর ছোট ভাই আবু সুফিয়ান আনসারী। সিন্ডিকেটটিতে ছিলো সাবেক পুলিশ সদস্য, আইনজীবি, স্থানীয় গ্রাম ডাক্তার ও বিকাশ দোকানদারসহ আরো অনেকে। এদের মধ্যে আবু ছৈয়দ, ফারুক এবং হাজী পাড়ার সোহাগ মাদকের চিহ্নত গডফাদার বলে জানা গেছে।

টানা ৪ বছর একযোগে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে হয়ে যান বিপুল বিত্তভৈববের মালিক। ২০১৭ সালের শুরুর দিকে নারী কেলেঙ্কারি এবং সিন্ডিকেটটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলে ভেঙ্গে যায় ব্যবসায়ীক বন্ধন। এর পর থেকে প্রত্যকেই পৃথক পৃথকভাবে ইয়াবা সম্রাজ্য গঠন করে। কিছুদিন ব্যবসা চালিয়ে যেতে না যেতেই দেশব্যাপি মাদক বিরোধী অভিযান শুরু হলে গা ঢাকা দিয়ে শাহা জাহান পালিয়ে যান দুবাইতে। সেখান থেকে হুন্ডির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করেন মাদক ব্যবসা। পাচার করেন কোটি কোটি টাকা। পরে ২০২০ সালে জেলা পুলিশের নতুন সেটআপ আসলে ৮ মাস পর রাজার হালতে ফিরে আসেন তিনি। সেই থেকে আজ পর্যন্ত নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন ইয়াবা পাচার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে থেকে যান ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সময়ের রিক্তহস্ত শাহা জাহান পশ্চিম লার পাড়া এলাকায় ক্রয় করেছেন ৮ শতক জমি। সেখানে গড়ে তুলেছেন বহুত ভবন। এছাড়াও পশ্চিম লারপাড়া এলাকার দোলামিয়া মার্কেটে একটি স্যানিটারি শো-রুম, একটি ইলেকট্রনিক্স দোকান, ৪ টি সিএনজি ও ২ টি মিনিট্রাক রয়েছে। এই গাড়িগুলো মূলত মাদক পাচারের কাজে ব্যবহৃত হয় বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

স্থানীয়রা জানান, শাহা জাহান একজন চিহ্নত মাদক ব্যবসায়ী। বর্তমানে সে দোকান ও গাড়িগুলো দেখভাল কারার আড়ালে পুরনো ইয়াবা সিন্ডিকেটটি সক্রিয় করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের অভিযোগ, আগে গোপনে বিক্রি হলেও দুই বছর ধরে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হচ্ছে লারপাড়ার এলাকার বিভিন্ন স্পটে।

জানা গেছে, লারপাড়া এলাকাটি বাস টার্মিনাল সংলগ্ন হওয়ায় অনেকটা ভৌগোলিক সুবিধার কারণেই মাদকের ক্রেতা-বিক্রেতাদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। মাদক ব্যবসায় নিত্য নতুন জড়িয়ে পড়ছে শাহা জাহানদের মতো নিন্মবিত্ত পরিবারের অনেকে। বাসের চালক ও কর্মচারীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে শাহা জাহানরা কোটি কোটি টাকার মাদকের চালান অনায়াসে পাচার করে আসছে দেশের বিভিন্ন গ্রান্তে। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বেশ কয়েকজন আটক হলেও কমছে না মাদকের ভয়াবহতা।

এদিকে শাহ জাহানসহ তার সিন্ডিকেটের অপরাপর প্রত্যেক সদস্যের বিরুদ্ধে মাদকের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে একাধিক মামলা থাকলেও প্রতিবেদকের কাছে নিজেকে নির্দোষ দাবী করেন শাহা জাহান। অর্জিত সম্পদের ব্যাপারে জানতে চাইলে গাড়ি থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন। বিদেশ পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, পালিয়ে নয় অফার পেয়ে বিদেশ গিয়েছিলাম।

এবিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কক্সবাজার শাখার উপ-পরিচালক রুহুল আমিন বলেন, ওই এলাকাটিতে চিহ্নত মাদক ব্যবসায়ীদের আনাগোনা রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। গত কয়েকদিন আগেও অভিযান চালিয়ে পিস্তল-ইয়াবাসহ দু’জনকে গ্রেফতার করেছি। সু-নির্দিষ্ট কারো নাম উল্লেখ না করে তিনি আরোও বলেন, মাদকের সাথে জড়িত প্রতিটি সিন্ডিকেটকে নজরে রাখা হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *