শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:২৪ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

হঠাৎ কোটিপতি মৌলভী জিয়া; চলেন ১৫ দেহরক্ষী নিয়ে !

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গেল কয়েক বছর আগেও কক্সবাজার শহরতলীর বাসটার্মিনালস্থ ‘কক্সবাজার ইসলামিয়া মহিলা আদর্শ কামিল মাদ্রাসায়’ মোহাদ্দেস হিসেবে চাকুরি করতেন মৌলভী জিয়াউল হক। পরিবারে নিজস্ব জায়গা জমি বলতেও কিছু ছিলোনা। বাবা আমিনুর রহমান প্রকাশ গুন্নু ডিঙ্গি নৌকায় মাছ ধরে জীবন ধারণ করতেন। অথচ বছর ব্যবধানে মৌলভী জিয়াউল শত কোটি টাকার মালিক। এ যেন আলা উদ্দিনের আশ্চর্য প্রদীপের পরশে বদলে যাওয়া এক জীবনের গল্প। এখন নিজের নিরাপত্তার জন্য রেখেছেন ১৫ দেহরক্ষী। রয়েছে মিডিয়া ম্যানেজ অফিসার ও ব্যক্তিগত সহকারী। নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে অপরিচিত কারো সাথে মোবাইল ফোনে কথাও বলেন না তিনি। কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন হলে গন্তব্যস্থলে নিজের কর্মী দিয়ে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেন জিয়া। তার চলাফেরায় যেন রহস্যে ঘেরা।

বিষয়টি স্বীকার করেছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচিত এহসানুল হক নামে এক যুবক। তিনি বলেন, হুজুরের নিরাপত্তার কথা বিবেচেনা করে আগে আমি কথা বলি। পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকুলে থাকলে হুজুর কথা বলেন গন্তব্যস্থলে গমন করেন।

মৌলভী জিয়াউল হক মহেশখালী হোয়ানক ইউনিয়নের ধলঘাইট্টা পাড়া এলাকার বাসিন্দা আমিনুর রহমান প্রকাশ গুন্নুর ছেলে।বর্তমানে মহেশখালী ও কক্সবাজার শহরের খুরুশকুল সড়কে ‘মা’হাদ আন নিবরাস’ নামে দুটি মাদ্রাসা পরিচালনা করছেন।

মৌলভী জিয়ার ঘনিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন জিয়া কক্সবাজার শহরতলীর বাসটার্মিনাল এলাকায় ‘কক্সবাজার ইসলামিয়া মহিলা আদর্শ কামিল মাদ্রাসায়’ মোহাদ্দেস হিসেবে চাকুরি করেন। সেখানে চাকুরিরত অবস্থায় বিভিন্ন সময় বিদেশে যাওয়া সুযোগ হয় মেধাবী শিক্ষক জিয়ার। বিদেশে তার সাথে অনেক বিত্তবান লোকের সম্পর্ক তৈরি হয়। এ সম্পর্ককে পুঁজি করে বিদেশী অনুদান নিয়ে বর্তমানে দুটি মাদ্রাসা পরিচালনা করছেন। হয়তো অনুদানের টাকা আত্মসাৎ করে হঠাৎ তিনি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে বিপুল পরিমান অর্থবিত্তের মালিক হওয়ায় তার ঘনিষ্টজনরাও হতভবম্ব।

ছবি-বিদেশীর সাথে মৌলভী জিয়া।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মৌলভী জিয়াউল হক কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল কিস্তির দোকান এলাকায় বোন জামাইসহ একসাথে জমি ক্রয় করে ঘর নির্মাণ করছেন। কক্সবাজার কমার্স কলেজের পিছনে ক্রয় করেছেন ৪০ শতক জমি। যেখানে নিজের নামে ২০ শতক ও মাদ্রাসার নামে রয়েছে ২০ শতক। ফ্রি-তে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার সুযোগ দেয়ার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা বেতন নেন। যেখানে ৫’শতাধিক ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে প্রতিমাসে প্রায় ৪০ লাখ টাকা আদায় করেন তিনি। এছাড়া রামু দক্ষিণ মিঠাছড়ির ৮ নং ওয়ার্ড লারপাড়া এলাকায় স্ত্রী, ভাই ও নিজের নামে ১২ লাখ টাকা করে ৪৮০ শতক জমি ক্রয় করেন মৌলভী জিয়া। হিসেবে মতে ১২ কানি জমির মূল্য পড়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা। এছাড়াও বিশাল এ জমির বাউন্ডারি ও যাতায়তের জন্য জমি ক্রয় করতে ব্যয় করেছেন আরো প্রায় অর্ধকোটি টাকা। যেখানে অবকাশ যাপন করতে নির্মাণ করেছেন বাগান বাড়ি। ব্যবসা বানিজ্য না থাকলেও এত বিপুল পরিমাণ অর্থের উৎস কি তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নিজের পাশাপাশি তার আরো দুইভাইকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন জিয়া। অথচ বছর দুইএক আগেও মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন তিনি।

কলাতলি আদর্শ গ্রাম মসজিদের সাবেক সভাপতি ও হোয়ানক ধলঘাইট্ট পাড়া মসজিদের সাবেক ইমাম মৌলভী আলতাফ বলেন, আমি যখন তাদের গ্রামের বাড়ি হোয়ানকের ধলগাইট্টাপাড়ায় চাকুরী করতাম তখন থেকে আমি জিয়াউল হককে চিনতাম। সে মেধাবী ছাত্র ছিলেন। কক্সবাজার ইসলামিয়া আদর্শ মহিলা কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষক থাকা অবস্থায় বিভিন্ন সময় বিদেশ যেতেন। বিদেশে তার সাথে অনেকের সম্পর্ক তৈরি হয়। বিদেশী অনুদান নিয়ে বর্তমানে দুটি মাদ্রাসা পরিচালনা করেন জিয়া। বর্তমান সরকারের শুরুতে মনে হয় বিদেশী অনুদান বন্ধ রয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৭/৮ হাজার টাকা নিয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা করছেন।

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্প্রতি সময়ে তিনি নিজের নামে কিছু জমি ক্রয় করেছেন সেটি শুনেছি। বিদেশ থেকে যেসব সহযোগিতা আসতো সে টাকা নিজের একাউন্টে নাকি প্রতিষ্টানের নামে সেটি আমি জানি না। তবে, নিজের কাছে জিয়াউল হকের ফোন নাম্বার নাই দাবি করে তিনি বলেন, নিজের প্রয়োজন হলে জিয়া আমার সাথে যোগাযোগ করে।

ছবি-রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি এলাকায় মৌলভী জিয়াউল হকের বাউন্ডারি ওয়ালে ঘেরা জমি।

 

মৌলভী জিয়া সম্পর্কে জানতে জন্মস্থান হোয়ানক ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড় মেম্বার আনসার বলেন, মৌলভী জিয়া আমার আত্মীয় হয়। পারিবারিকভাবে তেমন জায়গা জমি ছিলো না তাদের। বাবা জেলে ছিলেন। যে পরিমাণ জমি অধিগ্রহণের কথা বলা হয়েছে তাতে হয়তো জিয়ার ভাগে লাখ দেড় এক টাকা পড়েছে। কিন্তু সে তো এখন কয়েক শত কোটি টাকার মালিক।

তিনি বলেন, গেল কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি অর্থবিত্তের মালিক হন। আমাদের এলাকায়ও জমি ক্রয় করেছেন জিয়া। এছাড়াও কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে জমি ক্রয়ের কথা আমরা শুনতে পেয়েছি। কিভাবে এত টাকার মালিক হলো তা আমি বলতে পারবো না।

এ বিষয়ে মৌলভী জিয়াউল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

মোবাইল সংযোগ কেটে দেয়ার আধাঘন্টা পরে সংবাদ প্রকাশ না করতে তদবির করেন এহসানুল হক নামে এক ব্যক্তি। তিনি কক্সবাজার শহরের তাজশেবা হোটেলে অবস্থিত একটি প্রিন্টিং প্রেসে কাজ করেন।

তিনি প্রতিবেদককে বলেন, সংবাদ প্রকাশ করে কি হবে। হুজুর তো সবকিছু ঠিকঠাক করে কাজ করছেন। হুজুর কোথাও গেলে আমরা আগে গন্তব্যস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি তদারকি করি। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে হুজুর সেখানে যান। হুজুরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঘাটতি হলে যান না।

তার তদবির শেষ হতে না হতে সংবাদ প্রকাশ না করতে ঈদগাঁও এলাকার যুবদল নেতা রুবেল নামে আরেক ব্যক্তি সুপারিশ নিয়ে আসেন।

মৌলভী জিয়াউল হকের বরাত দিযে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, হুজুর সবকিছু ঠিক করে ফেলেছে। যেখানে যা দেয়ার তা দিয়েছে। তিনি মন্ত্রীদের সাথে বৈঠক করেন। তার কোন সমস্যা হবে না। সুতরাং নিউজ করে কি হবে। পরে প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।

এদিকে মাঠপর্যায়ের কর্মরত গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা বলেন, রহস্যজনক কারণে কক্সবাজারে যে ক’জন ব্যক্তির উপর নজরাদি রেখেছে সেখানে মৌলভী জিয়া একজন।

জিয়ার বিষয় অবগত করে জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: রফিকুল বলেন, তার সম্পর্কে আগে কখনো তথ্য ছিলনা। এখন খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্র: আলোকিত কক্সবাজার


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *