রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩৬ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক:
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার প্রতিবাদে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ডাকা বিশেষ জরুরি বৈঠকে রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
এ বিষয়ে তিন দিনের আলোচনা-বিতর্কের পর স্থানীয় সময় বুধবার জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য দেশের মধ্যে ভোটাভুটিতে ১৪১টি দেশের ভোটে প্রস্তাবটি পাস হয়। এতে শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার অভিযোগে তিরস্কার করে মস্কোর প্রতি তাৎক্ষণিক সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
রুশ হামলা বন্ধ করে সেনা প্রত্যাহার এবং এ ঘটনায় নিন্দা প্রস্তাবের জন্য সোমবার জাতিসংঘের বিশেষ জরুরি বৈঠক শুরু হয়। তিন দিন ধরে ওই বৈঠকে বিতর্কে অংশ নেন সদস্য দেশগুলোর কূটনীতিকরা। গতকাল সেনা প্রত্যাহার ও নিন্দা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হয়। পাঁচটি দেশ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। এই পাঁচটি দেশ হচ্ছে রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, বেলারুশ, ইরিত্রিয়া ও সিরিয়া। ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে বাংলাদেশ, চীনসহ ৩৫ দেশ। বিরত থাকা অন্য ৩৩টি দেশ হচ্ছে আলজেরিয়া, অ্যাংগোলা, আর্মেনিয়া, বলিভিয়া, বুরুন্ডি, সেন্ট্রাল আফ্রিকা রিপাবলিক, কঙ্গো, কিউবা, এল সালভাদর, ইকুয়েটোরিয়াল গানিয়া, ভারত, ইরান, ইরাক, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, মাদাগাস্কার, মালি, মঙ্গোলিয়া, মোজাম্বিক, নামিবিয়া, নিকারাগুয়া, পাকিস্তান, সেনেগাল, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ সুদান, শ্রীলঙ্কা, সুদান, তাজিকিস্তান, উগান্ডা, তাঞ্জানিয়া, ভিয়েতনাম ও জিম্বাবুয়ে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, তুরস্কসহ বাকি ১৪১টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। এ প্রস্তাবে কঠোরভাবে ইউক্রেনে আগ্রাসন এবং রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে দক্ষ বাহিনীকে প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিনের সর্বোচ্চ সতর্ক করার সিদ্ধান্তের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
এর আগে মঙ্গলবার পরিষদের বিতর্কে বাংলাদেশসহ বহু দেশের প্রতিনিধি অংশ নেন। এতে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের উপপ্রধান মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন সংলাপের মাধ্যমে সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর জোর দেন। পাশাপাশি ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় অখণ্ডতার নীতির প্রতিও সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। তার বক্তব্যে কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে আহ্বানের পাশাপাশি সংঘাতকবলিত অঞ্চল থেকে সরে যেতে আগ্রহীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানান।
সোম, মঙ্গল ও বুধবার জরুরি বৈঠকে শতাধিক দেশের কূটনীতিক বক্তব্য দিয়েছেন। এ সময় বেশিরভাগ দেশের প্রতিনিধি সরাসরি রুশ হামলার জন্য মস্কোর সমালোচনা করেছেন। শুধু পশ্চিমা দেশগুলো নয়; তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশ ওই হামলার নিন্দা জানিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন নিউইয়র্কে অবস্থান করলেও জাতিসংঘের ওই বিতর্কে অংশ নেননি। তবে স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সব রকম যুদ্ধের বিরুদ্ধে। জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগে এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হোক- বাংলাদেশ সেটাই চায়।’
সাধারণ পরিষদের বিতর্কে অংশ নিয়ে ভারতীয় প্রতিনিধি টিএস ত্রিমূর্তি অবিলম্বে সংঘর্ষ বন্ধের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কূটনৈতিক উপায় ছাড়া এ সংকটের অন্য কোনো সমাধান নেই। এ সময় তিনি সব পক্ষকে আন্তর্জাতিক আইন, জাতীয় সংহতি ও সার্বভৌমত্বের নীতি মেনে চলার আহ্বান জানান। এর আগে ইউক্রেন প্রশ্নে নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে নিন্দা প্রস্তাবে রাশিয়ার ভেটোর কারণে তা বাতিল হলে বিষয়টি আলোচনার জন্য সাধারণ পরিষদে স্থানান্তর হয়। সোমবার বৈঠকের শুরুতে দ্রুত রুশ সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, যথেষ্ট হয়েছে; ইউক্রেনে হামলা এখনই বন্ধ করতে হবে। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
এদিকে জেনেভায় হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এতে তিনি মানবাধিকার রক্ষার পক্ষে জোরালো অবস্থান তুলে ধরেন। এ বৈঠকে ইউক্রেনে হামলার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করে কাউন্সিল থেকে বের করার দাবি তোলেন ইউরোপীয় কূটনীতিকরা। ওই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থার ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে বর্ণনা করেন তারা।