মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১০:০৪ অপরাহ্ন

কক্সবাজারে ইয়াবায় ভাগ্য বদল দোকানের কর্মচারী জহিরের

নিজস্ব প্রতিবেদক:
মাত্র ছয় বছর আগেও কক্সবাজার লালদীঘির পাড়স্থ বিলকিস মার্কেটের একটি মোবাইল দোকানের কর্মচারী ছিল জহির। এরপর শ্যামলী পরিবহনে কর্মচারী হিসেবে চাকরি নেন। পরিবহনে চাকরির পর খুলে যায় জহিরের ভাগ্য। বাড়তে থাকে সম্পদের পরিমাণও। এখন তার আলিশান জীবন যাপন দেখে অবাক বিলকিস মার্কেটের তার অনেক কর্মচারী সহপাঠি। অল্প সময়ে কিনেছেন বহু জমি। কলাতলী এলাকায় দু’টি পরিবহন কাউন্টারও তার নিয়ন্ত্রণে। তার মাদক সিন্ডিকেটে কিনেছে পরিবহনও। নিত্য নতুন নামি-দামি বাইকের হুঙ্কারও ছাড়ে কক্সবাজার চেইন্দা এলাকার বাসিন্দা জহির।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- ছয় বছর আগে কক্সবাজার বিলকিস মার্কেটের নিচ তলার একটি মোবাইল দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করে জহির। প্রায় এক বছর কাছাকাছি দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। এরপর যোগ দেন শ্যামলী পরিবহনের কর্মচারী হিসেবে। শ্যামলী পরিবহনে যোগদানের কয়েক মাসের মাথায় ইয়াবাসহ আটক হন জহির। কক্সবাজার থেকে ইয়াবা নিয়ে যাওয়ার পথে চট্টগ্রামে আটক হয়েছিল জহির। এই ঘটনায় দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন তিনি। ইয়াবা মামলায় জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বের হয়ে ফের জড়িয়ে পড়ে ইয়াবা কারবারে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে- জহিরের বহন করা ইয়াবা গুলো ছিল আবছার নামে একব্যক্তির। আবছারের হয়ে কক্সবাজার থেকে ইয়াবা গুলো বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দিত জহির ও তার সহযোগিরা। আবছার টেকনাফের হ্নীলার বাসিন্দা হলেও দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া বাসা নিয়ে অবস্থান করছে কক্সবাজার শহরের রুমালিয়ারছড়ার কবরস্থান গলি এলাকায়। আবছার সিন্ডিকেটের হাত ধরেই কর্মচারী থেকে কোটিপতি জহির।
জহিরের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন জানান, মূলত ইয়াবার ছোঁয়া পেয়ে বিলকিস মার্কেট থেকে চলে এসে শ্যামলী পরিবহনে কর্মচারীর চাকরি নেন জহির। এরপর পরিবহনে করে তার ইয়াবা পৌঁছানো শুরু হয়। মাঝপথে ইয়াবাসহ আটক হয়ে কারাগারে যান জহির। কারাগারে গেলেও তার ইয়াবা কারবার বন্ধ হয়নি। বরং কারাগার থেকে বের হয়ে তার ইয়াবা ব্যবসা বেড়েছে বহুগুন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- পরিবহন সেক্টরে জহিরের রয়েছে বড় ইয়াবা সিন্ডিকেট। যে সিন্ডিকেটের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে কলাতলীর মোড় পর্যন্ত অসংখ্যা পরিবহন কাউন্টার রয়েছে। ইয়াবা পাচার করতে সিন্ডিকেটের সদস্যরা নিয়েছে কাউন্টারও। এমনকি তারা পরিবহনও কিনেছে বলে জানা গেছে। কলাতলী এলাকার বেশ কয়েকটি চিহ্নিত ইয়াবা কারবারি রয়েছে জহিরের সিন্ডিকেটে। যারা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছিল। এমনকি প্রশাসনের খাতায়ও তারা মাদক কারবারি হিসেবে চিহ্নিত।
অভিযোগের বিষয়ে জহির বলেন- আমি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত নয়। তবে আমার বিরুদ্ধে একটি মাদক মামলা রয়েছে। যেখানে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। তাছাড়া আমার নিজস্ব কোন কাউন্টার নেই। আমি কাউন্টারে চাকরি করি।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো: হাসানুজ্জামান বলেন, মাদক কারবারিদের তালিকা করা হচ্ছে। এখন নতুন নামও তালিকায় সংযুক্ত করা হচ্ছে। তালিকাভুক্ত অনেকেই কারাগারে আছে। আবার অনেকেই জামিনে বেরিয়ে পুনরায় ইয়াবা কারবারে জড়িয়ে পড়েছে। তাদেরও কাউকে কাউকে ফের গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা বড় কারবারি তারা এলাকায় থাকে না। প্রতিদিনই নতুন নতুন মাদক কারবারি তৈরি হচ্ছে, ধরাও পড়ছে। শুধু বিক্রেতা নয়, মাদক কারবারে অর্থ লগ্নিকারী, পৃষ্ঠপোষক, সংরক্ষক, বহনকারী, খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলমান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *