রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
চকরিয়ায় বিশেষ অভিযানে ইউপি সদস্যসহ গ্রেফতার ৯ মানহানিকর সংবাদ প্রচার করায় জেলা ছাত্র দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফাহিমুর রহমানের বিবৃতি পোকার আক্রমণে বিবর্ণ মহেশখালীর প্যারাবন মহেশখালীর ঘটিভাঙ্গা-সোনাদিয়া সড়কের উপর অবৈধ ভাবে তৈরি করা হচ্ছে ব্যক্তিগত কাঠের রাস্তা শেখ হাসিনার পতনের ঘটনায় প্রশাসনিক নিরবতাকে কাজে লাগিয়ে খাস জমি দখল করে প্রতিযোগিতা মূলকভাবে নির্মাণ হচ্ছে অনুমোদনহীন বহুতল ভবন। যেন দেখার কেউ নাই হোটেল বেলাভূমি ও হোটেল ক্লাসিক সহ কটেজ জোনে অভিযান পরিচালনা করায়, কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার সাবেক মুখ্য সচিব নাসের ও সচিব মেজবাহ গ্রেফতার মহেশখালীতে অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার পর্যটন নগরী কক্সবাজারের হোটেল বেলাভূমি ও হোটেল ক্লাসিক এখন পতিতা, মরণ নেশা ইয়াবা ও মাদকের স্বর্গরাজ্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতি পুনর্গঠন

অফিসের পিয়ন থেকে কোটিপতি তোফায়েল সাব-রেজিস্টার অফিস যেন সোনার ডিম পাড়া হাঁস

বিশেষ প্রতিবেদক:
চাকুরী জীবনে যোগদান করেন ঝাড়ুদার হিসেবে। এরপর পদোন্নতি পেয়ে অফিস সহায়কের খাতায় নাম লিখান কক্সবাজার সদর রেজিস্ট্রি অফিস থেকে সদ্য বদলি হয়ে টেকনাফ সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে যোগ দেয়া পিয়ন নুরুল কাদের । তিনি সবার কাছে পিরিচিত তোফায়েল হিসেবে। ঝাড়ুদার থেকে পিয়ন পদোন্নতির মতো বদলে নিয়েছেন নিজের ভাগ্যও। অফিসের নিম্নপদে চাকুরি করে জ্যামিতিক হারে বাড়িয়েছেন নিজের সম্পদ। রয়েছে স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি। পিয়নের চাকুরি যেন সোনার ডিম পাড়া হাঁস ! যার স্পর্শে বিশ কোটি টাকারও বেশি সম্পদের মালিক তোফায়েল।
সাতকানিয়ায় জন্ম নেয়া তোফায়েল নিজেকে কক্সবাজার শহরের রুমালিযারছড়া এলাকার বাসিন্দা বলে দাবি করেন।
পিয়ন থেকে বিশ কোটিরও বেশি টাকার মালিক হওয়ার রহস্য অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে তার অনিয়ম আর দুর্নীতির চিত্র। কক্সবাজার ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের পিয়ন পদের চাকুরিজীবী হলেও দপ্তরের সব ফাইল তার হাত ধরে নড়াচড়া হয়। বাম হাতের কাজ সম্পন্ন না হলে সেবা প্রার্থীদের সাথে কথা বলেন না তিনি। এমন কি মন্দ ভাষায় কথা বলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের প্রশ্রয়ে তিনি এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেন যে, কক্সবাজার সদর আর টেকনাফ সাব রেজিস্ট্রার অফিস ছাড়া অন্য কোথাও চাকুরিতে যোগ দিতেন না তিনি। এই দুই অফিস ছিল তার প্রছন্দের।
২০০৮ সালে ৫ লাখ ঘুষের টাকা নিয়ে টেকনাফ থেকে ফেরার পথে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিলেন তৎকালিন অফিস পিয়ন তোফায়েল।
প্রায় তিন মাস কারাভোগ করেন তিনি। কারামুক্ত হয়ে চাকুরিতে যোগ দিয়ে আবারো বেপরোয়াভাবে দুর্নীতিতে জড়ান নিজেকে। নিজেকে শুধরে নেয়ার পরিবর্তে দুর্নীতির মাত্রা বাড়িয়ে দেন।
তথ্য মতে, বেঁচে থাকার তাগিদে শহরের জিয়া কমপ্লেক্সস্থ একটি ফটোস্ট্যাট দোকানের কর্মচারী ছিলেন তোফায়েল। সেখান থেকে ঝাড়ুদার হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন তিনি। ঝাড়ুদার হলেও অফিসের অনেক কাজই তাকে দিয়ে করাতেন কর্তা ব্যক্তিরা। ফলে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্পর্কে জ্ঞাত হন। পরে পিয়ন পদে পদোন্নতি পেয়ে গড়ে তুলেন সিন্ডিকেট। ভূঁয়া দলিল রেজিষ্ট্রেশন, অনিয়মের মাধ্যমে জমি রেজিষ্ট্রেশন করাতে ভূমিকা রাখেন তোফায়েল সিন্ডিকেটে। বিনিময়ে অনৈতিক সুবিধা নিতেন তিনি। তার দলে রয়েছে দলিল লেখক সমিতির কথিত নেতা, নকলনবিশ, নকলকারক। রয়েছে সাবরেজিস্টি অফিসের সিনিয়র অনেক কর্তাব্যক্তিও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কক্সবাজার সাব রেজিষ্ট্রার অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, রেজিষ্ট্রেশন অফিসে সিনিয়র কর্তা বাবুদের কাছে তোফায়েল ছিলেন সোনার ডিম পাড়া হাঁস। ফলে তার অপরাধগুলো ওপেন সিক্রেট হলেও কার্যতঃ কোন পদক্ষেপ নেয়া হতো না।
তারা জানিয়েছেন, তোফায়েল টেকনাফ আর কক্সবাজার সাব রেজিস্ট্রি অফিসে চাকুরি করেন। কোন কারণে বদলি হলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তা ঠেকিয়ে রাখতেন। রেজিস্ট্রেশন দপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের দূর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তা তোফায়েলকে কর্মস্থলে স্বপদে বহাল রাখতে ভূমিকা রেখেছেন। বিনিময়ে এসব কর্তাদের কক্সবাজার ভ্রমনের ব্যয় বহন করতেন তোফায়েল।
তোফায়েলকে ম্যানেজ করা না গেলে কাগজের ‘ক’ও মিলেনা সেবা প্রার্থীদের। এমন কি প্রতিপক্ষের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে সেবা প্রার্থীকে হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা তোফায়েলকে ঘুষ তোফায়েল নামে চিনেন।
চট্রগ্রামের সাতকানিয়ার বাসিন্দা এমএলএসএস তোফায়েল কক্সবাজার শহরের ভিটিআই স্কুলের বিপরীত পার্শ্বে “ছায়ানীড়” নামে একটি ৫ তলা বিলাস বহুল ভবন নির্মাণ করে বসবাস করছেন। ভবনের সামনে রয়েছে কোটি টাকার খালি জমি। ভিটিআই স্কুলের বিপরীত মুক্তিযোদ্ধা নরুল ইসলাম সড়কে আরো একটি পাঁচ তলা ভবনের পার্টনার মালিকানা রয়েছে তার। চট্টগ্রামের রিয়াজ উদ্দিন বাজার এলাকায় রয়েছে তার সাততলা ভবন। যেখানে তার মেডিকেল কলেজ পড়ুয়া ছেলে ও মেয়ে বসবাস করেন। এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এছাড়াও তার গ্রামের বাড়ী সাতকানিয়ায় নামে বেনামে ও নিকট আত্মীয়স্বজনের নামে ভূ-সম্পত্তি রয়েছে। কক্সবাজার শহরে হোটেল মোটেল জোনে তার একাধিক জমি থাকলেও সম্প্রতি এসব জমিই তিনি বিক্রি করেছেন বলেও জানা যায়।
শহরের জিয়া কমপ্লেক্সে যে দোকানে চাকুরী করতেন সেই দোকানটিও বায়না সূত্রে তিনি ক্রয় পরবর্তী সেটিও বিক্রি করেছেন বলে জানা যায়। বর্তমানে উক্ত দোকানে ‘পরশমনি’ নামে একটি টি শপ রয়েছে।
এমএলএসএস পদে চাকুরী করে কোটি টাকার সম্পত্তি দেখে বিস্মিত এলাকাবাসি। কি পরিমান দূর্নীতি হয়েছে তা সম্পদ বিবরণ দেখলে বুঝা যায়।
বহুতল একাধিক ভবন, জমি,ব্যাংক একাউন্ট ও দোকানপাটের মালিক হলেও আইনের আওতায় আসেনি একবারও।
একটি ভবন থাকার কথা স্বীকার করলেও চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার শহরের জমি ও ভবনের কথা কথা অস্বীকার করে তোফায়েল বলেন, আমার ভবনের টেক্স দেয়া হয়েছে।
একজন এমএলএসএস পদে থেকে বিপুল অর্থ কিভাবে পেলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি দুর্নীতি করলে সরকার ব্যবস্থা নিবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *