রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩০ পূর্বাহ্ন
কক্সবাজার ৭১ ডেস্ক:
নুরুল কাদের ওরফে তোফায়েল আহমেদ (৫০)। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের পিয়ন। চাকরিজীবনে যোগদান করেন ঝাড়ুদার হিসাবে। এরপর পদোন্নতি পেয়ে অফিস সহায়কের খাতায় নাম লেখান। সম্প্রতি কক্সবাজার সদর রেজিস্ট্রি অফিস থেকে বদলি হয়ে টেকনাফ সাবরেজিস্ট্রি অফিসে যোগ দিয়েছেন। অফিসের নিুপদে চাকরি করলেও জ্যামিতিক হারে বাড়িয়েছেন সম্পদ। বর্তমানে তার রয়েছে অর্ধশত কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ।
স্থানীয় সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা যায়, তোফায়েলের জন্ম সাতকানিয়া হলেও বর্তমানে কক্সবাজার শহরের ভিটিআই স্কুলের বিপরীত পার্শ্বে ছায়ানীড় নামে একটি ৫ তলা বিলাসবহুল ভবন নির্মাণ করে বসবাস করছেন। যার বর্তমান আনুমানিক মূল্য ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা। ভবনের সামনে কিনেছেন কোটি টাকার জমি। ভিটিআই স্কুলের বিপরীতে মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম সড়কে আরও একটি পাঁচতলা ভবনে পার্টনার মালিকানা রয়েছে তার। তার অংশের আনুমানিক মূল্য ৬ কোটি টাকা।
এছাড়া চট্টগ্রামের রিয়াজ উদ্দিন বাজার এলাকায় রয়েছে একটি সাততলা ভবন। যেখানে তার মেডিকেল কলেজ পড়ুয়া ছেলে ও মেয়ে বসবাস করেন। ভবনটিন আনুমানিক বাজার মূল্য ২০ কোটি টাকা। আর গ্রামের বাড়ি সাতকানিয়ায় নামে-বেনামে কিনেছেন কয়েক কোটি টাকার ভূসম্পত্তি। কক্সবাজার শহরে হোটেল-মোটেল জোনে তার ক্রয় করা জমির মালিকানা সম্প্রতি অন্যদের হস্তান্তর করেছেন। এছাড়া কক্সবাজারে একাধিক ব্যাংকে তার পোষ্য ও স্ত্রী-ছেলের নামে বিপুল অঙ্কের টাকা রয়েছে। তোফায়েলের পিয়ন থেকে এত টাকার মালিক হওয়ার রহস্য অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ভয়াবহ অনিয়ম আর দুর্নীতির চিত্র। কক্সবাজার ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের পিয়ন পদের চাকরিজীবী হলেও দপ্তরের সব ফাইল তার হাত ধরে নড়াচড়া হয়। প্রচার আছে তোফায়েলের বাম হাতের কাজ সম্পন্ন না হলে সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন না তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে ঘুসের টাকা নিয়ে কক্সবাজারে আসার পথে তোফায়েল গ্রেফতার হয়েছিলেন। তিন মাস কারাভোগের পর মুক্তি পেয়ে চাকরিতে যোগ দিয়ে আবার দুর্নীতিতে জড়ান তিনি। নিজেকে শুধরে নেওয়ার পরিবর্তে দুর্নীতির মাত্রা বাড়িয়ে দেন। সূত্র আরও জানায়, একটি ফটোস্ট্যাট দোকানের কর্মচারী ছিলেন তোফায়েল। সেখান থেকে ঝাড়ুদার হিসাবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ঝাড়ুদার হলেও অফিসের অনেক কাজই তাকে দিয়ে করাতেন কর্তাব্যক্তিরা। ফলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্পর্কে জ্ঞাত হন তিনি। পরে পিয়ন পদে পদোন্নতি পেয়ে গড়ে তোলেন সিন্ডিকেট। ভুয়া দলিল তৈরি, অনিয়মের মাধ্যমে জমি রেজিস্ট্রেশন করাতে ভূমিকা রাখেন তোফায়েল। এ সিন্ডিকেটে রয়েছে দলিল লেখক, নকলনবিশ, নকলকারক। রয়েছে তাদের অফিসের সিনিয়র অনেক কর্তাব্যক্তি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তোফায়েল আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ‘আমার সবকিছুই বৈধভাবে হয়েছে। আপনাকে যারা আমার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে তাদের আমি খুঁজে বের করে আমি দেখে নেব।’
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কক্সবাজার কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, পিয়ন তোফায়েল আহমেদের অঢেল সম্পদের বিষয়টি দুদকের নজরে এসেছে। প্রক্রিয়া শেষে তার বিষয়ে অনুসন্ধানে যাবে দুদক।
সুত্র: যুগান্তর