নুরুল আমিন হেলালী:
কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় অনুমোদনহীন পরিবেশ বিধ্বংসী অর্ধডজন ইটভাটার কারণে হুমকির মুখে রয়েছে পরিবেশ,বনজ সম্পদ ও জনস্বাস্থ্য। ফসলী জমি থেকে টপসয়েল কেটে নেয়া, কয়লার আড়ালে অবাধে বনের কাঠ পোড়ানো, ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন, লাইসেন্সবিহীন ডাম্পার দিয়ে ইট পরিবহন ও অন্যান্য পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের মহোৎসবে মেতেছে এখানকার ইট ভাটা মালিকরা। এতে করে অবশিষ্ট সামাজিক বনায়ন ও রিজার্ভ বনের মূল্যবান বনজ সম্পদ সাবাড় হচ্ছে।
এতে পরোক্ষ ইন্ধন দিচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু বনকর্মকর্তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইসলামাবাদ ইউনিয়নে ৩ টি, জালালাবাদ ইউনিয়নে ২ টি, ঈদগাঁও ইউনিয়নে ৩ টি ও উপজেলার পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন চৌফলদন্ডীতে ১ টি ইট ভাটায় এসব পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে।
বিশেষ করে জালালাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব ফরাজী পাড়ায় লোকালয়ের মাঝখানে ও ফসলী জমিতে স্থাপিত “টিকে ব্রিক ফিল্ড” এ ইট তৈরীর জন্য আবাদী জমি থেকে রাতদিন টপ সয়েল কেটে নেয়া হচ্ছে। এছাড়া রেজাউল করিম ও হুমায়ুন করিম মালিকানাধীন ২টি ও বিমান মৌলভীর ১টি এবং ইসলামাবাদের জনবসতি এলাকার ১টিতে হরদম ফসলী জমির টপ সয়েল কেটে পর্বতাকারের বিশাল স্তুপ করে রাখা হয়েছে। এসব মাটি দিয়ে রাতদিন ইট তৈরী ও পোড়ানো হচ্ছে। এতে ব্যবহৃত হচ্ছে অবৈধ ডাম্পার ও বনের কাঠ।
অনুমোদনহীন এসব ইট ভাটায় স্থানীয় ও দুরবর্তী বিভিন্ন বন থেকে কাঠ চোরেরা কাঠ কেটে ইট ভাটায় সরবরাহ করছে। কাঠ চোর সিন্ডিকেট থেকে কাঠ সরবরাহ নিয়ে ভাটা মালিকরা বিভিন্ন গোপন স্থানে এসব কাঠ মজুদ করেছে। গভীর রাতে দ্রুতগামী ডাম্পারযোগে এসব কাঠ ভাটায় সরবরাহ করছে মালিকরা।
বনের কাঠ পোড়ানোর পাশাপাশি ইট প্রস্তুত ও ভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন উপেক্ষা করে কৃষি জমি ও লোকালয় ও আবাসিক এলাকা ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে এসব ইটভাটা। ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো নিষিদ্ধ থাকলে তা মানছে না ভাটা মালিকরা। বন ধ্বংস করার কারণে ঈদগাঁও উপজেলার প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। প্রশাসনের উদাসীনতা এর জন্য দায়ী। পরিবেশ রক্ষা আইনের কঠোর প্রয়োগ করা হলে ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো বন্ধ হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানায়, ইটভাটা মালিকরা পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মোটা অংকের মাসোহারা দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। এদিকে রামু, চকরিয়া ও টেকনাফসহ জেলার বিভিন্ন স্থানের ইটভাটায় কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করলেও ঈদগাঁওর ইটভাটাগুলো ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন রহস্যময় কারণে।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপরিচালক শেখ মোঃ নাজমুল হুদা ফোন রিসিভ না করায় এ ব্যাপারে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
সহকারী পরিচালক হারুনুর রশীদ পাঠানকে ফোন করলে তিনি গাড়ীতে থাকায় শব্দ দূষণের কারণে ওনার বক্তব্য স্পষ্ট ভাবে নেয়া সম্ভব হয়নি।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মাহবুবুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে জানান,এসব ইটভাটার ছাড়পত্র নেই। অবৈধভাবে চলা এসব ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায় বলেন,অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং সদর সহকারী কমিশনার ভুমি এ বিষয়ে অধিক অবগত।