রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২০ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
চকরিয়ায় বিশেষ অভিযানে ইউপি সদস্যসহ গ্রেফতার ৯ মানহানিকর সংবাদ প্রচার করায় জেলা ছাত্র দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফাহিমুর রহমানের বিবৃতি পোকার আক্রমণে বিবর্ণ মহেশখালীর প্যারাবন মহেশখালীর ঘটিভাঙ্গা-সোনাদিয়া সড়কের উপর অবৈধ ভাবে তৈরি করা হচ্ছে ব্যক্তিগত কাঠের রাস্তা শেখ হাসিনার পতনের ঘটনায় প্রশাসনিক নিরবতাকে কাজে লাগিয়ে খাস জমি দখল করে প্রতিযোগিতা মূলকভাবে নির্মাণ হচ্ছে অনুমোদনহীন বহুতল ভবন। যেন দেখার কেউ নাই হোটেল বেলাভূমি ও হোটেল ক্লাসিক সহ কটেজ জোনে অভিযান পরিচালনা করায়, কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার সাবেক মুখ্য সচিব নাসের ও সচিব মেজবাহ গ্রেফতার মহেশখালীতে অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার পর্যটন নগরী কক্সবাজারের হোটেল বেলাভূমি ও হোটেল ক্লাসিক এখন পতিতা, মরণ নেশা ইয়াবা ও মাদকের স্বর্গরাজ্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতি পুনর্গঠন

মাতারবাড়ি ভূমি অফিসে ঘুষ ছাড়া সরকারি সেবা পাওয়া যায় না

দিনে খবর নাই, রাতে তালা বন্ধ করে চলে অফিস

কক্সবাজার ৭১ ডেস্ক;
মাতারবাড়ি গধঃধৎনধৎর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গেলে বেশ চোখে পড়ার মত ‘ঘুষকে না বলুন’ এমন স্টিকার। এই স্টিকারে অফিস সজ্জিত হলেও বাস্তবটা তার উল্টো। মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা ইউনিয়নের সরকারি প্রকল্পে অধিগ্রহণকৃত জমির খাজনা খধহফ ফবাবষড়ঢ়সবহঃ ঃধী (ভূমি উন্নয়ন কর) পরিশোধ করতে এ অফিসে গেলে দিতে হয় রশিদে উল্লেখিত টাকার বাহিরেও অতিরিক্ত ঘুষের টাকা দিতে হয়। এমনটি অভিযোগ উঠেছে মাতারবাড়ি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারি ভূমি অফিসার গিয়াস উদ্দীনের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে -অতিরিক্ত টাকা নিয়ে বনিবনা না হলে আবার ইচ্চাকৃতভাবে মানুষকে হেনস্তা করে এবং নানা অযুহাত দিয়ে মানুষকে হয়রানি করা হয়। এভাবে জমির খাজনা দিতে গিয়ে হয়রাণীর শিকার ব্যক্তিরা নানা ধরনের অভিযোগ তুলেন খাজনা দিতে আসা ভূক্তভোগি জমির মালিকরা। তাদের অভিযোগ সেবার নামে মানুষকে জিম্মি করে একের পর এক দুর্নীতি করে যাচ্ছে এ কর্মকর্তা। অদৃশ্য বলয়ের ওহারংরনষব ঝুহফরপধঃব কারণে প্রকাশ্যে দুর্নীতি করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন তিনি।
একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, মাতারবাড়ি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে খাজনা জবহঃ ঃধী দিতে গিয়ে রসিদের দ্বিগুণ টাকা গুনতে হচ্ছে। টাকা গড়হবু না দিলে হয়রানির সীমা থাকেনা। দুদু মিয়া(৫৫)। ধলঘাটা থেকে এসেছিলেন খাজনা দিতে। অনেক অপেক্ষার পর খাজনা না দিয়েই চলে যেতে হয় তাকে। দুদু মিয়া জানান, আমার জমি আসল জমি না বলে আমাকে বোকা বানিয়ে খাজনা বাবদ ৫০হাজার টাকা চায়। আমার সাথে এতো টাকা না থাকায় আমি ২৫হাজার দিব বলে ১৩ হাজার টাকা গড়হবু জমা দিই, বাকীগুলো আগামীকাল দিব বলি। সেই সময় আমার পাশে থাকা বিসিক কর্মকর্তা জাফর আলম এতো টাকা কেন নিচ্ছেন প্রতিবাদ করলে, আমরা সবাইকে হেনস্ত করে অফিস থেকে বের করে দেয়। পরে রশিদ কাটব না বলে ১৩হাজার টাকাও ফেরত দেয়।
বিসিক কর্মকর্তা জাফর আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার পরিবারের জমির খাজনা দিতে আসলে ভূমি অফিসে এসে চোখ কপালে উঠল। একটা মানুষ কতটা দূর্নীতিবাজ হয়, তা মাতারবাড়ি ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দীনকে দেখলে বুঝা যাবে। তিনি যার কাছ থেকে যেভাবে পারে ৩০টাকার রশিদ কেটে ৩হাজার টাকা নিচ্ছেন। আবার কারও কাছ থেকে ৬০০ টাকার কেটে ১০হাজার টাকা নিচ্ছেন। এক কথায়, তার কাছে টাকাই সব। মানুষ কিছুই না।
আবদুল আজিজ নামে ধলঘাটার এক ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, খাজনা দিতে আসলে ৩১৩২ টাকার বিপরীতে তার থেকে ১০,০০০ টাকা দাবি করে। নিরুপায় হয়ে ৫০০০ টাকা দিয়ে অবশেষে খাজনা রসিদ আদায় করতে হয়।
ধলঘাটার আরেক ভুক্তভোগী আব্দু শুক্কুর জানান, ভূমি অফিসে দুর্নীতি হয় শুনেছি কিন্তু এমন দুর্নীতি কখনো দেখিনি। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে খাজনার জন্য গেলে ২২,০০০ টাকা দাবি করেন। দাবির টাকা দিয়ে খাজনা রসিদ নিলে রসিদে ৪২০০ টাকা উল্লেখ করা হয়। টাকা বেশি নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে উল্টো ক্ষেপে যান ভূমি সহকারী কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দীন।
মাতারবাড়ি তাসবিদুল কোরআন দারুচ্ছুন্নাহ মাদরাসা ও এতিমখানার মোহতামিম আহসান উল্লাহ বলেন, ৩ দিন হয়রানির পর ৪র্থ দিন রাতে দেখা করতে বলেন। তিনি রাতে গেলে মোট খাজনা ২৭,০০০ টাকা আসবে বলে জানান ভূমি সহকারি কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন। মোট ৭,০০০ টাকা আসছে বলে গিয়াস উদ্দিন ৭,০০০ টাকা আদায় করেন। পরে বাহিরে এসে দেখে খাজনা রসিদে মোট ৬৪৩ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিনের বেলায় সবধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও সারারাত মানুষের দীর্ঘ সারি। মধ্যরাতেও বাহিরে তালা দিয়ে ভেতরে চলছে খাজনা আদায়ের কার্যক্রম। ঘন্টা খানেক পর পর কেউ একজন এসে দরজা খুলে, নাম ধরে ডোকে ২-৩ জনকে ভেতরে নিয়ে যান। কেন এমনটা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্যার যাদের নাম বলছে তাদেরকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
অলি উল্লাহ নামে এক প্রতিবন্ধীকে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলে, দাঁড়িয়ে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করতে গেলে তিনি বলে ওঠেন ভাই পৃথিবীতে মানুষ নেই। ধলঘাটা থেকে সকালে এসেছি, রাত বারোটা হয়ে গেলেও খাজনা দেওয়া সম্ভব হয়নি। দাগ ভাঙ্গানোর নাম বলে একজনকে ১০০০ টাকা দিয়েছি। তাকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রাতে বাসায় ফিরতে পারি কিনা জানিনা। এমন হয়রানি আমার জীবদ্দশায় দেখিনি। তিনি হয়রানি বন্ধের জন্য উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এদিকে মাতারবাড়ির সাবেক চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই কর্মকর্তাকে বলেন, নতুন আসলেন মাতারবাড়িতে আপনার আগমনে খুশী হতে পারলাম না। তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে অনেকের টাকা ফেরৎ দিতে বলেন।
এ বিষয়ে জানতে মাতারবাড়ি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনকে বার বার ফোন করা হলেও তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে পরে কথা বলবে বলে বার বার ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ আমিন আল পারভেজ বলেন, দুর্নীতির বিষয়ে প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে তিনি চাকরি থেকে বরখাস্তও হতে পারেন।

সূত্র: মাহবুব রোকন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *