বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪৯ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

সরকারি খাস জমিতে পাহাড় কেটে বাড়ি করছে রোহিঙ্গারা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজার শহরের রোহিঙ্গা উদ্দ্যোশিত এলাকা পাহাড়তলীতে সরকারি খাস জমিতে পাহাড় কেটে আলিশান বাড়ি করছে রোহিঙ্গারা। দীর্ঘদিন কক্সবাজার শহরে বসাবাস করা এসব রোহিঙ্গারা প্রকাশ্য ছাদ দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করলেও কোন কর্তৃপক্ষ তাদের বাধা দেয় না। অপর দিকে কোন স্থানীয় মানুষ টিন সেট বাড়ি করলেও সেখানে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পৌরসভা, পরিবেশ অধিদপ্তর এমনকি ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষও গিয়ে বাধা দেয় বলে জানান স্থানীয়রা। তবে সরকারি খাস জমি দখল করে এভাবে রোহিঙ্গাদের বাড়ি নির্মাণ করা বন্ধ করা না গেলে ভবিষ্যতের জন্য অসনি সংকেত হবে বলে জানান সচেতন মহল।
সরজমিনে শহরের পাহাড়তলী সত্তরঘোনা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে বর্তমানে প্রকাশ্য সরকারি খাস জমিতে পাহাড় কেটে বাড়ি করছে রোহিঙ্গা আনোয়ারা,নুরুল ইসলাম,আবদুর রহমান,সব্বির আহামদ, সহ অনেকে এ সময় পাহাড় কাটা অবস্থায় কয়েজ জনের কাছে জানতে চাইলে তারা অপকটে স্বীকার করেন,সবাই কাটছে তাই আমরা কাটছি, আমাদের আগে শত শত লোক এখানে বাড়িঘর করেছে। এখন আমরা জমি কিনে বাড়ি করছি। যদিও এগুলো সরকারি খাস জমি তারপরও কিছু আমাদের আত্বীয় স্বজন থেকে বাকিগুলো কিছু প্রভাবশালীদের কাছ থেকে কিনতে হয়েছে। আর রোহিঙ্গা কিনা জানতে চাইলে সরাসরি বলেন,আমাদের পূর্ব পুরুষ মায়ানমারের ছিল তবে আমরা এখন এখানকার স্থানীয়।
পাহাড়তলী এলাকার শামসুল আলম সহ অনেকে বলেন, এলাকার কিছু স্পটে পাহাড় কেটে একতলা,দ্বিতল এমনকি তিন তলা বাড়িও করছে রোহিঙ্গারা। অথচ সবই সরকারি খাস জমি। কয়েক বছর আগে আসা এসব রোহিঙ্গা প্রথমে কাচা বাড়ি করে থাকে পরে আস্তে আস্তে পাহাড় কেটে জমি বড় করে ইয়াবা ব্যবসা সহ নানান অবৈধ ব্যবসা করে স্থায়ী হয়ে যায় এর পরে গড়ে তুলে আলিশান বাড়ি। পরে নিয়ে আসে তাদের আরো আত্বীয় স্বজন এভাবে ক্রমেই বাড়ছে রোহিঙ্গার সংখ্যা। সরজমিনে গিয়ে পাহাড়তলীর অলি আহামদের ঘোনায় গিয়ে দেখা গেছে,রোহিঙ্গা নুরুল ইসলাম পেশায় রাজমিস্ত্রি কিন্তু বাড়ি করেছেন কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকা খরচ করে। প্রতিটি রুমেই টাইলস করা এমনকি বাথরুম সহ। তাও পাহাড় কেটে সরকারি খাস জমিতে। তার পাশে মালয়েশিয়া প্রবাসী নুর মোহাম্মদ,তার স্ত্রী সহ পরিবারের সবাই রোহিঙ্গা পাহাড় কেটে বাড়ি করছে আলিশান ভাবে,এর আগে আরেক রোহিঙ্গা জকরিয়া পাহাড় কেটে বাড়ি করেছে ছাদ দিয়ে এক ফ্লাট ভাড়া দিয়েছে অন্য ফ্লাটে নিজে থাকে পেশায় তিনি আবার রাজ মিস্তি। তার নীচে রোহিঙ্গা বাবুল পেশায় মাছ ব্যবসায়ি আলিশান বাড়ি করেছেন ৫ বেড রুমের যার দাম বর্তমানে ৩০ লাখ টাকার কম নয়। কিন্তু সেই রোহিঙ্গা বাবুল এখনো বড় বাজারে খুচরা মাছের ব্যবসা করে। তাহলে প্রশ্ন জাগে তাদের আয়ের উৎস কি ? এলাকার মানুষের দাবী বর্তমানে বেশির ভাগ রোহিঙ্গার একমাত্র আয় ইয়াবা ব্যবসা। বর্তমানে তাদের বাড়িতে মিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্প তারা ক্যাম্প থেকে আসার সময় ইয়াবা নিয়ে আসে এখানে খুচরা বা পাইকারী বিক্রি করে টাকা নিয়ে চলে যায়। তার পাশেই হোসেন আহামদ,নজির হোসেন,শামসু,শুক্কুর সহ অনেক রোহিঙ্গা এখন সরকারি জমি দখল করে বাড়ি করেছে।
বিকালে জিয়া নগর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে বেবী আকতার নামের এক মহিলার বাড়ির পাশেই বিশাল পাহাড় কাটা,জানতে চাইলে তিনি বলেন,এখন কাটছি না আগে কেটে ছিলাম। সাথে লাগোয়া বাড়ি রোহিঙ্গা ফরিদের সেই পাহাড় কেটে ঘর তৈরি করেছে,পাহাড় কাটার বিষয়ে তার স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন আমরা পাহাড় কাটছি না,এখানে জসিম,হামিদ সহ অনেকে পাহাড় কাটছে তাদের কেউ ধরে না। তার পাশেই অলি আহামদের ঘোনায় গিয়ে দেখা গেছে,সেখানে অনেকটা উৎসব মুখর ভাবে চলছে পাহাড় কাটা। এছাড়া হালিমা পাড়ায় রোহিঙ্গা এনায়েত,তার ভাই আবু ছিদ্দিক,শাহনুর নগরে ইয়াবা নিয়ে গ্রেফতার হওয়া মহিলা রোহিঙ্গা তাহেরা (তার স্বামী মালয়েশিয়া প্রবাসী ) বৈদ্য অলিওল্লাহ,সিরাজ,নুর মোহাম্মদ,ফিরোজ,শাহআলম। রুবেল,শাহআলম সহ অনেক রোহিঙ্গা এখন সরকারি খাস জমিতে বাড়ি করে প্রতিষ্টিত হয়ে গেছে। এদিকে শহরের ফাতের ঘোনা,মৌলবী পাড়া,সত্তারঘোনা,বাদশাঘোনাতে অন্তত কয়েক হাজার রোহিঙ্গা ছাদ দিয়ে কয়েক তলা বাড়ি করে স্থায়ী হয়ে গেছে এছাড়া বর্তমানেও বাড়ি করছে। এদিকে স্থানীয় জামাল হোসেন বলেন,আমি নিজে যখন দ্বিতলা বাড়ি করছিলাম তখন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ,পৌরসভা,পরিবেশ অধিদপ্তর এমনকি ফায়ার সার্ভিসের লোকজনও এসেছিল বাধা দিতে। অথচ আমারটা খতিয়ান ভুক্ত জমি কিন্তু এখন হাজার হাজার রোহিঙ্গা খাস জমিতে পাহাড় কেটে বাড়ি করছে সবাই নিরব। পাহাড়তলী কেজি স্কুলের প্রতিষ্টাতা নুর মোহাম্মদ বলেন,এখানে আমাদের পরিবার সহ কয়েকটি পরিবার ছাড়া আর কেউ ছিলনা। এখন আমাদের কেউ চিনেনা। কারন রোহিঙ্গাদের কাছে টাকা আছে সবাই তাদের গোলাম হয়ে গেছে। স্থানীয়রা তাদের বাড়ি করতে সহায়তা করছে। তবে এখন আবার কিছু কিছু জায়গায় রোহিঙ্গাদের অনুমতি ছাড়া স্থানীয়রা জমি কিনতে পারছেনা বাড়িও করতে পারছেনা বলে শুনছি। আমার মতে প্রশাসন চাইলে সব কিছু সম্ভব,কোন রোহিঙ্গা যাতে সরকারি খাস জমিতে পাকা বাড়ি করতে না পারে সে জন্য কঠোর নজরদারী সহ আইন করতে হবে। এ ব্যপারে কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র হেলাল উদ্দিন কবির বলেন,রোহিঙ্গারা পাহাড় কাটছে আমরা নিজেরা খবর দিলেও পরিবেশ অধিদপ্তর বা প্রশাসন কেউ এগিয়ে আসেনা। তখন আমরা কি করতে পারি ? তাই চোখ বুঝে দেখছি কি আর করবো। এ ব্যপারে নবাগত কক্সবাজার সদর সহকারী কমিশনার ভুমি মো: জিল্লুর রহমান বলেন, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে শীঘ্রই পাহাড়কাটা সহ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। এ ব্যপারে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ বলেন,শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে একটি সমন্নিত উদ্দ্যোগ নিতে হবে। সে জন্য আমি কিছু কাজ আছে। খুব দ্রুত সবাইকে নিয়ে একটি ব্যবস্থা করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *