রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১০ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
চকরিয়ায় বিশেষ অভিযানে ইউপি সদস্যসহ গ্রেফতার ৯ মানহানিকর সংবাদ প্রচার করায় জেলা ছাত্র দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফাহিমুর রহমানের বিবৃতি পোকার আক্রমণে বিবর্ণ মহেশখালীর প্যারাবন মহেশখালীর ঘটিভাঙ্গা-সোনাদিয়া সড়কের উপর অবৈধ ভাবে তৈরি করা হচ্ছে ব্যক্তিগত কাঠের রাস্তা শেখ হাসিনার পতনের ঘটনায় প্রশাসনিক নিরবতাকে কাজে লাগিয়ে খাস জমি দখল করে প্রতিযোগিতা মূলকভাবে নির্মাণ হচ্ছে অনুমোদনহীন বহুতল ভবন। যেন দেখার কেউ নাই হোটেল বেলাভূমি ও হোটেল ক্লাসিক সহ কটেজ জোনে অভিযান পরিচালনা করায়, কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার সাবেক মুখ্য সচিব নাসের ও সচিব মেজবাহ গ্রেফতার মহেশখালীতে অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার পর্যটন নগরী কক্সবাজারের হোটেল বেলাভূমি ও হোটেল ক্লাসিক এখন পতিতা, মরণ নেশা ইয়াবা ও মাদকের স্বর্গরাজ্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতি পুনর্গঠন

মাদক ও আরসার আস্তানা হিসেবে পরিচিত ১৩টি অবৈধ পাকাঘর গুড়িয়ে দিল ক্যাম্প ইনচার্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক::
ক্যাম্প-১ ইস্টের বিভিন্ন ব্লকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ মাদক কারবারি ও আরসা সদস্যদের আনাগোনা বেড়েছে। আরসার অর্থায়নে নিরাপদ স্থান হিসেবে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে ১৩ টি সেমি-পাকা বাড়িও । ক্যাম্পে ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই গড়ে তোলা এসব বাড়ির বিভিন্ন কক্ষে বসাবাস করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে ।
জানা যায়, রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মহিবউল্ল্যাকে হত্যাকারী আরসার ওলামা কাউন্সিলের একাধিক নেতারা এই ব্লকের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করছে।আত্মগোপনে থাকার পর সম্প্রতি আরসার সদস্যরা আবার সংগঠিত হয়ে শক্তি সঞ্চার করার উদ্দেশ্যে ক্যাম্প-১ ইস্ট ব্লকের বিভিন্ন স্থানে গোপনীয় মিটিং করে নিজেদের সংগঠিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে এমন তথ্য রয়েছে এপিবিএনসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট। এসব ব্লকে সরকার থেকে দেয়া নির্দিষ্ট সাইজের অস্থায়ী শেল্টারগুলো ভেঙ্গে আরসা সদস্যরাদের অর্থে অবৈধ ভাবে গড়ে তুলেছে ১৩ টি সেমি-পাকা বাড়ি। প্রতিটি বাড়িতে গড়ে ৫ থেকে ৭টি করে কক্ষ তৈরি করেছে রোহিঙ্গা মাদক কারবারিরা। নিয়ম অনুযায়ি রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে পাকা বাড়ি নির্মান না করার বিধান থাকলেও ক্যাম্পে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে স্থায়ী বসবাসের জন্য এসব বাড়ি নির্মান করছেন রোহিঙ্গা হামিদ হোসেনসহ অন্যরা। এরকম এই ডি-৮ সাব-ব্লকে প্রায় অধিকাংশ রোহিঙ্গারা শেল্টার ভেঙ্গে বড়ো করে তৈরি করেছে পাকা বাড়ি। যেইঘরগুলো নিয়ন্ত্রণ করতো রোহিঙ্গা মাদককারবারি ও আরসার সদস্যরা।আর এখান থেকে নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যেত তারা।
অন্যদিকে,গত ২ মার্চ ওই ক্যাম্পে “ক্যাম্প ইনচার্জ” হিসেবে যোগদান করেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তাফিজুর রহমান । এরপর ৩ মার্চ ক্যাম্পের বিভিন্ন ব্লক ঘুরে দেখেন তিনি।সরজমিনে যাওয়ার পর ক্যাম্প ১ ইস্টে ১৩ টি পাকা স্থাপনা তাঁর নজরে আসে।তখন তিনি সাধারণ রোহিঙ্গাদের সাথে অবৈধভাবে গড়ে তোলা স্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলে আশপাশে বসবাসরত সাধারন রোহিঙ্গা ভয়ে কথা বলতে রাজি হননি। পরবর্তিতে এসব পাকা ঘর থেকে আরসার কার্মক্রমের অভিযোগ আসলে তিনি সিআইসি অফিসের পক্ষ থেকে মাইকিং করে তাদেরকে অবৈধ শেল্টার ভেঙ্গে নিয়মানুযায়ী সরকার থেকে প্রদত্ত সাইজে ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্য ৭দিন অর্থাৎ ১০ মার্চ পর্যন্ত সময় দেন। নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে এসব ঘর না ভাঙ্গলে সরকারের পক্ষ থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানানো হয় । এরপরও এসব অবৈধ ঘর সরিয়ে না নেওয়ায় তাদেরকে ২য় বার আরও ৭দিন অর্থাৎ ১৮ মার্চ পর্যন্ত সময় দেওয়া হলেও তারা অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেয়নি।
এরধারাবাহিকতায় ২৩ মার্চ সকালে ক্যাম্প-১ ইস্টে উচ্ছেদ অভিযান চালায় ক্যাম্প ইনচার্জ। অভিযানে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ১৩টি সেমি-পাকা বাড়ির মোট ১০৫টি কক্ষ গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।এসব ঘরে নামকাস্থে যারা স্থায়ী বসবাস করতো তাদের সবাইকে সেখান থেকে অস্থায়ী প্রকৃতির শেল্টারে নেয়া হয়েছে। উচ্ছেদ কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেন ক্যাম্প ১ ইস্টের সিআইসি ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তাফিজুর রহমান। উচ্ছেদকালে উপস্থিত ছিলেন, ১৪ এপিবিএন এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান, লম্বাশিয়া এপিবিএন পুলিশ ক্যাম্পের ইন্সপেক্টর জালাল আহমেদসহ প্রায় ৪০ জন এপিবিএন সদস্য এবং ক্যাম্প ১ইস্টের সকল মাঝি ও ভলান্টিয়ারগণ। উচ্ছেদ কার্যক্রমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সার্বিক সহযোগিতা করেন লম্বাশিয়া পুলিশ ক্যাম্প।
উচ্ছেদ কালে দেখা যায় রোহিঙ্গা হামিদ হোসেনের পরিবারে সদস্য সংখ্যা এফসিএন কার্ড অনুযায়ী ৪ জন, কিন্তু তার নির্মানাধিন পাকা শেল্টারে কক্ষের সংখ্যা ৭টি। ঘর বড়ো বা পাকা করার অনুমতি ক্যাম্প-ইনচার্জ থেকে নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সে অনুমতি নেয়নি বলে জানায়। এতাড়া ঘর নির্মাণে টাকা কোথায় পেল এ প্রশ্নের জবাবে সে কিছুই জানায়নি।
অন্যদিকে,উচ্ছেদের পর সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে সন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নারী রোহিঙ্গা বলেন, আমরা ভয়ে এদের নাম মুখে আনতে পারি না। এদের ইয়াবা ব্যবসা বা আরসার সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে আমরা পুলিশকে বা সিআইসি অফিসে জানাতে গেলে আমাদের জীবনের ঝুঁকিতে থাকে। এরাই ক্যাম্পের মধ্যে বিভিন্ন অপরাধ করে ক্যাম্পগুলোকে অপরাধের রাজ্যে পরিণত করছে। ব্লকের মধ্যে এরাই বিভিন্ন ধরনের মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করতো বলে জানান রোহিঙ্গা নারীরা।
উচ্ছেদের বিষয়টি নিশ্চিত করে ক্যাম্প-১ ইস্টের ইনচার্জ ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এটা আমাদের নিয়মিত ক্যাম্প শৃঙ্খলা রক্ষা করার কার্যক্রম।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *