শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:১৪ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

৭১-এর গণহত্যার স্বীকৃতি আদায় করতে পারবে বাংলাদেশ?

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও ১৯৭১ সালের পুরো ৯ মাসে বাংলাদেশে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার এখনো সুযোগ আছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এরজন্য দরকার যথাযথ উদ্যোগ।
সরকার বলছে, এই স্বীকৃতি পেতে নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
২০১৭ সালে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চকে জাতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ২০১৫ সালে জাতিসংঘ ৯ ডিসেম্বরকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা প্রতিরোধ দিবস’ ঘোষণা করায় ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি আদায়ের এখন আর সম্ভব নয় বলে মনে করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তবে তিনি মনে করেন মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে বাংলাদেশে যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে তার স্বীকৃতি আদায় সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক এবং ধারাবাহিক উদ্যোগ।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’-এর মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ওই এক রাতেই ৫০ হাজার বাঙালিকে হত্যা করা হয়। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ বাঙালি শহিদ হন। দুই লাখ নারী নিপীড়ন, যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হন।
কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছরেও সেই গণহত্যার কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া যায়নি। ফলে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা গেলেও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যুদ্ধাপরাধী ১৯৫ জনকে বিচারের আওতায় আনা যায়নি। আর এখনো পাকিস্তান দাবি করে যে, তারা বাংলাদেশে কোনো গণহত্যা চালায়নি। অন্যদিকে যাতে গণহত্যা বন্ধ হয় তার জন্যও এই স্বীকৃতি প্রয়োজন।
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘‘আমাদের এখন বিভিন্ন দেশের সংসদে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পাস করাতে হবে। এরপর জাতিসংঘে এটা নিয়ে এগোতে হবে। আর এজন্য সরকার, প্রবাসী বাংলাদেশি এবং বিভিন্ন সংগঠনকে নিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে। এটা করতে গেলে পাকিস্তান তো আছেই, সেই সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যেসব দেশ বিরোধী অবস্থানে ছিল, তাদের বিরোধিতার মুখোমুখি হবে। সেটা কাটানোর জন্য ব্যাপক কূটনৈতিক উদ্যোগ প্রয়োজন।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা যখন সুইডেনে কথা বলেছি, তখন সেখানকার পার্লামেন্টেরিয়ানরা বলেছেন, আমরা প্রস্তুত আছি আমাদের সংসদে পাস করতে। কিন্তুতোমাদের সরকার কি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে? অ্যাপ্রোচ করেছে?’’
রোহিঙ্গা গণহত্যার স্বীকৃতি দিয়েছে অ্যামেরিকা। জাতিসংঘের কফি আনান কমিশন তো ওটাকে এথনিক ক্লিনজিং বলেছে। কিন্তু তার চেয়ে তো শতভাগ বেশি গণহত্যা হয়েছে বাংলাদেশে। মার্কিন পত্রপত্রিকায়ই তার প্রতিবেদন আছে। তখনকার সিনেটর, কংগ্রেসম্যানদের বক্তব্য আছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এব্যাপারে উদ্যোগ কোথায়? প্রশ্ন করেন শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেন, ‘‘গণহত্যা নিয়ে সবচেয়ে বড় সংগঠন ‘জেনোসাইড ওয়াচ’তো বাংলাদেশে গণহত্যার স্বীকৃতি দিয়েছে। তারা জাতিসংঘকে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ আমরা সেরকম দেখছি না। জাতীয়ভাবে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করতেই আমাদের ২০১৭ সাল পর্যন্ত লেগেছে।’’
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক আফসান চৌধুরী মনে করেন, ‘‘এই গণহত্যার স্বীকৃতি পেতে সরকারের উদ্যোগ এবং প্রস্তুতি জরুরি। আমরা সংখ্যার হিসাব করছি। কিন্তু গণহত্যার শিকার বাঙালিদের তথ্য প্রমাণ কম সংগ্রহ করছি। হয়ত আমরা সারাদেশে গণহত্যার ছবি বা ভিডিও তত পাবো না। কিন্তু তথ্য প্রমাণতো আছে। সেই তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে ডকুমেন্ট তৈরি করা প্রয়োজন। এরপর পর যে পদ্ধতিতে জাতিসংঘে আবেদন করতে হয় সেভাবে করতে হবে। এরকম উদ্যোগ আমি দেখিনি।’’
তার কথা, ‘‘আমি তো বাংলাদেশে গণহত্যা নিয়ে কাজ করছি। আমার কাছে তো গণহত্যার শিকার কয়েক হাজার মানুষের ডকুমেন্টেশন আছে। এটা সারাদেশে এখনো করা সম্ভব। সেটা করা উচিত।’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্ট্যাডিজ-এর পরিচালক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘‘রুয়ান্ডার গণহত্যার ব্যাপারে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। আমরা সেই প্রক্রিয়ায় এগোতে পারি। আবার ৯ ডিসেম্বরকে ২০১৫ সালে যে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে সেটা ওইদিনে কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে নয়। সার্বিকভাবে দেয়া হয়েছে। তাই ওই দিনটাকে ২৫ মার্চ দিয়ে রিপ্লেস করার আবেদনও আমরা করতে পারি। তবে আমাদের মাথায় রাখতে হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো কয়েকটি বড় বড় দেশ আমাদের গণহত্যাকে গণহত্যা বলে মনে করেনা।’’
তার কথা, ‘‘সরকার বলছে তারা নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। সেটা যত জোরদার এবং দ্রুত হয় ততই ভালো।’’
আর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক দাবি করেন, গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে বাংলাদেশ সরকার অনেক কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে চিঠি দিচ্ছি। বিদেশে আমাদের দূতাবাসগুলো কাজ করছে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা সভা সেমিনার করছি।’’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *