শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:০৪ পূর্বাহ্ন
৭১ অনলাইন ডেস্ক:
বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ নিয়ে আর কোনো খেলা কেউ খেলতে পারবে না।
শনিবার (২৬ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সমাপনী অনুষ্ঠানে (ভার্চ্যুয়াল) তিনি এ কথা বলেন।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশকে এখন আর কেউ… বাংলাদেশ নিয়ে আর কোনো খেলা কেউ খেলতে পারবে না। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কখনো কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। বাংলাদেশ যে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে ইনশাল্লাহ তা এগিয়ে যাবে। ’
বঙ্গবন্ধুর সময় এবং পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে এবং ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ছাড়া বাকিটা সময় দেশ পিছিয়ে ছিল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে উন্নয়নের যাত্রা যদি আপনারা হিসাব করেন, ৫০ বছরের মধ্যে কিন্তু ২৯ বছর উন্নয়ন হয় নাই। (এটা ছিল) পিছু টানা বা পিছনে যাওয়ার সময়। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে জাতিসংঘ কর্তৃক স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা অর্জন করে দিয়েছিলেন। তারপর আওয়ামী লীগ সরকার আসায় আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আমাদের দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছি। স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ’
‘সব থেকে বড় কথা আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। আজকে শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে আমরা সক্ষমতা অর্জন করেছি। সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিটি ঘর আজকে আমরা আলোকিত করেছি। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ যে আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে, আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম আজকে আমরা ঠিকই সেই আলোর পথে যাত্রা শুরু করে সমগ্র দেশের মানুষের প্রতিটি ঘরকে আলোকিত করার সক্ষমতা অর্জন করেছি। ’
উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৮ থেকে ২০২১ পর্যন্ত আমরা যে পরিকল্পনা দেই, সেটা বাস্তবায়ন করেছি। আমরা স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করেছি। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট আমরা করছি। অবকাঠামো উন্নয়ন আমরা করে যাচ্ছি। মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছি। ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। ’
তিনি বলেন, ‘এই এগিয়ে যাওয়া, এই গতি আমাদের ধরে রাখতে হবে। তাই আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা ২০৪১ সালের বাংলাদেশ কেমন বাংলাদেশ হবে, তার প্রেক্ষিত পরিকল্পনা আমরা প্রণয়ন করে দিয়ে গেছি এবং তা বাস্তবায়নের জন্য পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। ১০০ বছর অর্থাৎ ২১০০ সালে ডেল্টা প্ল্যান তৈরি করে দিয়েছি। তারও কিছু কাজ আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। ’
‘বাংলাদেশকে যেন আর কখনো কেউ অবহেলা করতে না পারে। বাংলাদেশের মানুষ যেন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারে। শিক্ষায়, দীক্ষায়, জ্ঞানে, প্রযুক্তি জ্ঞানে, বিজ্ঞানে সব দিক থেকে যেন আমরা এগিয়ে থাকতে পারি। ’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের যে মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা তার ব্যবস্থা আমরা করেছি। জাতির পিতা আমাদের যে সংবিধান দিয়েছিলেন, সেই সংবিধানে যে নির্দেশনা ছিল, সেটা অক্ষরে অক্ষরে মেনে তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ’
দারিদ্র্য বিমোচন ও অসহায় মানুষের জন্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আজকে আমরা দারিদ্র্যের হার কমাতে সক্ষম হয়েছি। একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না। জাতির পিতা যে লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন, আমরা তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ এই বাংলাদেশে কেউ ভূমিহীন গৃহহীন থাকবে না। সেটা আমরা নিশ্চিত করে যাচ্ছি। সে পথে অনেক দূর আমরা এগিয়ে গেছি। ’
মহান স্বাধীনতা দিবস এবং বছরব্যাপী চলা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সমাপনী উপলক্ষে স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চার দিনব্যাপী ‘জয় বাংলা জয়োৎসব’ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি আয়োজিত ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতেই সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর থিম সঙ্গীত পরিবেশনের পর সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নির্মিত অডিও ভিজ্যুয়াল প্রদর্শন করা হয়।
আলোচনা পর্বে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিসভা কমিটির সদস্য সচিব ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়। গান-কবিতা, মঞ্চ ডিসপ্লের মাধ্যমে বাঙালি জাতির ইতিহাস, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, পাকিস্তানি হানাদারদের শোষন-বঞ্চনার বিরুদ্ধে মুক্তির সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের কিছু খণ্ডচিত্র, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও তার অবদান তুলে ধরা হয়। দেশবরেণ্য কবি, আবৃত্তিশিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা জমকালো এ পরিবেশনায় অংশ নেন।