শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ: অর্থনীতিতে গতি আনবে নতুন রেলপথ

বিশেষ প্রতিবেদক:

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে রেলপথ। অত্যাধুনিক মানের আইকনিক রেলস্টেশন নির্মাণে কর্মযজ্ঞ চলছে রাতদিন। শনিবার বিকেলে কক্সবাজারের রামু উপজেলার চান্দেরপাড়া এলাকায়
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে রেলপথ। অত্যাধুনিক মানের আইকনিক রেলস্টেশন নির্মাণে কর্মযজ্ঞ চলছে রাতদিন। শনিবার বিকেলে কক্সবাজারের রামু উপজেলার চান্দেরপাড়া এলাকায়ছবি: সৌরভ দাশ
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কপথের দূরত্ব প্রায় ১৫০ কিলোমিটার। সড়কপথে বাসে এ দূরত্ব অতিক্রম করতে এখন সময় লাগে গড়ে পাঁচ ঘণ্টা। বিকেলে এ মহাসড়কের পাশে বাজারগুলোর সামনে যানজটে পড়লে ছয় ঘণ্টাও পেরিয়ে যায়। রেললাইন চালু হলে পাঁচ-ছয় ঘণ্টার এ দূরত্ব অর্ধেকের নিচে নেমে আসবে। কমবে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকিও।

বর্তমানে চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে। এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য পর্যটন শহর কক্সবাজার। সেখানে বছরে গড়ে ৬০ লাখ পর্যটকের যাতায়াত রয়েছে। রেললাইন চালু হলে পর্যটনসহ নানা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি আসবে বলে মনে করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হচ্ছে। মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর হচ্ছে। সড়কপথ সংস্কার হচ্ছে। আর সর্বশেষ যুক্ত হচ্ছে রেললাইন। এসব অবকাঠামো উন্নয়ন পর্যটন অর্থনীতিতে সুবাতাস বয়ে আনার পাশাপাশি বহুমাত্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সূচনা করবে।

কক্সবাজার চেম্বারের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, রেললাইন চালু হলে সারা দেশের সঙ্গে কক্সবাজারের যোগাযোগের বহুমুখী পথের সূচনা হবে। এ অঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য যেমন সহজে সারা দেশে নেওয়া যাবে, তেমনি সারা দেশ থেকে পণ্য কক্সবাজারে সাশ্রয়ীভাবে আনা যাবে। এতে উৎপাদকেরা লাভবান হবেন।

এই ব্যবসায়ী নেতার পরামর্শ হলো, রেল চালু হলে পচনশীল পণ্য পরিবহনের জন্য শীতাতপনিয়ন্ত্রিত পণ্য পরিবহনব্যবস্থা চালু করতে হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল ও গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে মূল রেললাইনের সংযোগ রাখতে হবে। তাহলে সুফল বেশি আসবে।

ঘুরছে অর্থনীতির চাকা
নতুন রেললাইনের নির্মাণ শুরুর মাধ্যমে দুভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ছে এ অঞ্চলে। প্রায় ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে আমদানি ছাড়াও দেশীয় নির্মাণ উপকরণ ব্যবহৃত হচ্ছে। রড, সিমেন্ট, বালু ও ইট—এ চার উপকরণই ছিল দেশীয়।

এ প্রকল্পে সিমেন্ট সরবরাহকারী প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশের বড় বড় প্রকল্পের পাশাপাশি কক্সবাজারের রেল ও বিমানবন্দরের মতো প্রকল্পে প্রিমিয়ার সিমেন্ট ব্যবহৃত হচ্ছে। উন্নত প্রযুক্তিতে তৈরি ও মান বজায় রাখার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।

সিমেন্টের মতোই দেশে তৈরি কয়েকটি কোম্পানির রড ব্যবহৃত হচ্ছে এ রেললাইন নির্মাণে। প্রকল্পে রড সরবরাহকারী বিএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, শুধু রেললাইন নয়, দেশের সব বড় বড় প্রকল্পে রড সরবরাহ করছে বিএসআরএম। গুণগত মান, সেবা ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের নিশ্চয়তার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে বলে তিনি জানান।

কর্মসংস্থানের সুযোগ
রেলপথ নির্মাণকাজে যুক্ত হয়েছেন স্থানীয় লোকজনও। এতে সাময়িক কর্মসংস্থান হয়েছে অনেকের। কেউ কেউ এখনই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। নির্মাণাধীন কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের পাশে রহমত উল্লাহ চা–দোকান দিয়েছেন। পাশে আরেকটি চা–দোকান রয়েছে। এটিও হয়েছে সম্প্রতি। রহমত উল্লাহর আশা, স্টেশন চালু হলে ব্যবসা আরও জমবে।

চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা স্টেশনেও বদলে যাওয়ার চিত্র দেখা যায়। টমটমচালক আহমেদ হোসেন জানালেন, স্টেশন হওয়ার আগে এখানে দুটি মুদিদোকান ছিল। এখন দোকানের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৫। স্টেশনে নির্মাণশ্রমিক সাদ্দাম হোসেন বললেন, ‘আগে ১০ দিন কাজ পেতাম। এখন ৩০ দিনই করছি।’ নির্মাণকাজ শেষ হলে কী করবেন? সাদ্দাম হোসেন জানালেন, দোকান দেওয়ার ইচ্ছা আছে। স্টেশন হলে কেনাকাটা বাড়বে।

বহুমাত্রিক উন্নয়নের আশা
কক্সবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, এখন বছরজুড়েই কক্সবাজারে পর্যটকেরা আসেন। তবে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পর্যটকের আগমন বেশি। রেলের মতো নিরাপদ বাহন চালু হলে মৌসুমের বাইরেও পর্যটক বাড়বে। পর্যটক যত বাড়বে, তত বেচাকেনা বাড়বে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের তৈরি পণ্যের বিক্রি বাড়বে। লেনদেনও বাড়বে।

কক্সবাজারে যেতে এখন পর্যটকদের প্রধান ভরসা সড়কপথ। আকাশপথে আসা পর্যটকের সংখ্যা সীমিত। পর্যটন অর্থনীতি চাঙা থাকে মূলত শুষ্ক মৌসুমে। রেলওয়ে হলে সারা বছর পর্যটক পাওয়ার আশা করছেন হোটেল-মোটেলের উদ্যোক্তারা।

পর্যটনের পর কক্সবাজারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কয়েকটি খাত হলো লবণ, কৃষিপণ্য, মৎস্য ও শুঁটকি। এসব পণ্য কম খরচে আনা-নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। কৃষিপণ্য সহজে আনা-নেওয়ার সুবিধা থাকলে কৃষকেরও দাম পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যেও কিছুটা গতি আনতে পারে নতুন রেললাইন।

সার্বিক বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, রেল চালু হলে কক্সবাজারের সঙ্গে সারা দেশের বহুমুখী যোগাযোগের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে। এ জন্য কক্সবাজারকে স্মার্ট সিটিতে পরিণত করতে হবে। এখনকার নোংরা, অপরিচ্ছন্ন অবস্থা দূর করে সুন্দর শহর তৈরিতে মনোযোগ দিতে হবে। সেটা বাস্তবায়িত হলে রেল, বিমানবন্দরসহ যেসব অবকাঠামো হচ্ছে, সেগুলোর সুফল পুরোপুরি পাওয়া যাবে। সুত্র: প্রথম আলো


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *