রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ০১:১৮ পূর্বাহ্ন

১১৬ জন ধর্মীয় বক্তার আর্থিক লেনদেন অনুসন্ধানে পিছু হটল দুদক

৭১ অনলাইন ডেস্ক:
১১৬ জন আলেম ও ধর্মীয় বক্তার সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে ‘গণ কমিশন’ ২ হাজার ২১৫ পাতার যে শ্বেতপত্র কমিশনে জমা দিয়েছে, সেটি পরীক্ষার জন্য একটি অভ্যন্তরীণ কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটির উপস্থাপিত সারসংক্ষেপ পর্যালোচনার পর ব্যবস্থা নেবে কমিশন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয় প্রাঙ্গণে কমিশনের সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
‘১১৬ জন ধর্মীয় বক্তার আর্থিক লেনদেনের অনুসন্ধানে নামল দুদক’ শিরোনামে গতকাল প্রথম আলোর অনলাইন ও আজ ছাপা কাগজে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়, ১১৬ জন ধর্মীয় বক্তার সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে গণ কমিশনের করা অভিযোগ আমলে নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়েছে। অন্য দুই কর্মকর্তা হলেন দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহীম ও মো. আহসানুল কবীর। তিন কর্মকর্তাকে এ-সংক্রান্ত দাপ্তরিক চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
২১ জুন তিন কর্মকর্তাকে দেওয়া দুদকের ওই দাপ্তরিক চিঠিতে বলা হয়, ‘…তিন সদস্যবিশিষ্ট টিমের মাধ্যমে বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত শাখা হতে অনুসন্ধানের সদয় অনুমোদন ও অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) বরাবর প্রেরণের জন্য কমিশন কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।’
প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে দুপুরেই জরুরি ব্রিফিং করেন কমিশনের সচিব মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, কমিশনে আসা অভিযোগ পরীক্ষান্তে দুনীতির কোনো উপাদান বা তথ্য পাওয়া গেলে এবং তা কমিশন আইনের তফসিলভুক্ত হলেই পরবর্তী অনুসন্ধানের অনুমোদনের জন্য কমিশনে উপস্থাপন করা হয়। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির শ্বেতপত্রটি ২ হাজার ২১৫ পাতার হওয়ায় তা পরীক্ষার জন্য একটি অভ্যন্তরীণ কমিটি করা হয়েছে।
কমিটিকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি বা কমিশন থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। ধর্মীয় বক্তা বা আলেমদের আর্থিক লেনদেন অনুসন্ধান-সংক্রান্ত কোনো কার্যক্রম এ কমিটি শুরু করবে না।
কমিশনের সচিব বলেন, ১১৬ জন আলেমের আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে কমিশন থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে মর্মে কতিপয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ বিভ্রান্তি দূর করতে সবার অবগতির জন্য প্রকৃত বিষয়টি তুলে ধরা হলো।
এ-সংক্রান্ত কমিশনের অফিস আদেশের চিঠির উল্লেখ করে সাংবাদিকেরা সচিবকে প্রশ্ন করেন, অনুসন্ধানের আদেশ হয়েছে ই-নথিতে, যা এখনো কমিশনের সার্ভারে আছে। এটি অস্বীকার করবেন কীভাবে? জবাবে সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘ই-নথি তো কমিশনের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা তো আপনাদের জানার কথা না। কীভাবে সেটা বাইরে গেল, আমরা খুঁজে দেখব।’
এরপর আর কোনো প্রশ্ন না নিয়ে ব্রিফিং শেষ করেন কমিশনের সচিব।
সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিদের উদ্যোগে ‘মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গঠিত গণ কমিশন’-এর অভিযোগ আমলে নিয়ে ১১৬ জন ধর্মীয় বক্তার আর্থিক লেনদেন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
দুদক সূত্র জানায়, সাধারণত দুর্নীতির কোনো অভিযোগ জমা হওয়ার পর কমিশনের দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেলে যায়। এই সেলের প্রধান হচ্ছেন মহাপরিচালক এ কে এম সোহেল, দ্বিতীয় প্রধান হচ্ছেন পরিচালক উত্তম কুমার মণ্ডল। দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেলে বিভিন্ন পর্যায়ের ছয়জন কর্মকর্তা ও ২০ জন স্টাফ রয়েছেন, যাঁরা অভিযোগ তালিকাভুক্ত করতে যাচাই-বাছাই কমিটিকে (যাবাক) সহযোগিতা করেন। মূলত যাচাই-বাছাই কমিটিতে কোনো অভিযোগ মান উত্তীর্ণ হওয়ার পরই তা অনুসন্ধানের অনুমোদনের জন্য কমিশনে পাঠানো হয়। তিন সদস্যের যাচাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক মহাপরিচালক এ কে এম সোহেল, সদস্যসচিব পরিচালক উত্তম কুমার মণ্ডল ও সদস্য উপপরিচালক ইমরুল কায়েস।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১১৬ জন ধর্মীয় বক্তার আর্থিক লেনদেন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত যাচাই-বাছাই কমিটিতে হয়নি। এটি দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেল থেকে অনুসন্ধানের জন্য তিন সদস্যের দল গঠন করে একজন মহাপরিচালককে (বিশেষ তদন্ত) বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়। পুরো প্রক্রিয়া হয় কমিশনের ই-নথিতে। কিন্তু বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ের কানে গেলে কমিশন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে। সাধারণত বেলা দুইটার পর কমিশন সংবাদ ব্রিফিং করে থাকে। কিন্তু আজ দুপুরেই জরুরি ভিত্তিতে ব্রিফিং করা হয়।
এ ঘটনার বিষয়ে কমিশনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা কথা বলতে রাজি হননি। তবে কমিশনের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক প্রথম আলোকে বলেন, বিকেলে কমিশনের মিটিং আছে। তাই তাড়াতাড়ি ব্রিফিংয়ের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। তা ছাড়া বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা আছে। কারণ, কমিশন ১১৬ জন ধর্মীয় বক্তার আর্থিক লেনদেন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে প্রচার হচ্ছে, এটা ঠিক নয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *