রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ০১:৩০ পূর্বাহ্ন
ছবি-বাম থেকে মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী, নুরুল আবছার, শাহিনুল হক মার্শাল এবং জগদিস বড়ুয়া।
কক্সবাজার জেলা পরিষদের নির্বাচন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী ছাড়াও সাবেক পৌরসভার মেয়র নুরুল আবছার এবং জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি একেএম মোজাম্মেল হকের ছেলে শাহিনুল হক মার্শল এবং মঙ্গল পার্টির চেয়ারম্যান জগদিস বড়ুয়া পার্থ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন। যদিও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী এবং দলের মনোনয়ন বঞ্চিত বিদ্রোহী প্রার্থী মার্শালের মধ্যে। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা।
তাদের মতে, সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ’র ব্যর্থতাগুলো প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা প্রচারণায় বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন। ফলে এক প্রকার বেকায়দায় আছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী। তবে ভোট গ্রহণ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন হেভিওয়েট এ দুই প্রার্থী।
আর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এস.এম. শাহাদাত হোসেন বলছেন, নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে থাকবে পর্যাপ্ত পুলিশ, র্যাব এবং ম্যাজিস্ট্রেটসহ। কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই নির্বাচন শেষ করতে চাই কমিশন।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কাল ১৭ অক্টোবর বহুল প্রত্যাশিত কক্সবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনে কক্সবাজার সদর উপজেলার ভোট গ্রহণ করা হবে কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে, ঈদগাও উপজেলার ভোট গ্রহণ করা হবে ঈদগাও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে, কুতুবদিয়া উপজেলার ভোট গ্রহণ করা হবে কুতুবদিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। এছাড়া বাকি ৫ উপজেলার ভোটর গ্রহণ করা হবে স্ব স্ব উপজেলা পরিষদ হল রুমে।
চেয়ারম্যান এবং সদস্য মিলে মোট ৪৭ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তৎমধ্যে চেয়ারম্যান পদে চারজন, নয়টি সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদে ৩৩ জন এবং তিনটি সংরক্ষিত নারী আসনে ১১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৯টি উপজেলার ৭১ ইউনিয়ন ও ৪টি পৌরসভায় ৯৯৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে এবারে শুরু থেকে আলোচনায় ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা একে এম মোজাম্মেল হকের ছেলে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগ কক্সবাজার জেলা শাখার সাবেক সহ-সভাপতি শাহিনুল হক মার্শাল। তিনি প্রার্থী হওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী। তিনি দুইবার সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্প্রতি জেলা পরিষদের প্রশাসক ছিলেন। এরআগে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও ছিলেন। অতীত কর্মকান্ডের কারণে খোদ দলীয় নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েছেন তিনি।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়ে সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি বলেছেন, ‘আপনাকে যারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন আপনি তাদেরকে চিনেন না। আগে তাদের চিনতে শিখুন। গেল ১৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার জাহাঙ্গীর কবির নানক দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে একটি অভিজাত হোটেলে বৈঠক করেন।
অপরদিকে, প্রচারণা দুই প্রার্থী টাকা দিয়ে ভোট কেনা আমার্জিত ভাষা ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন। একই সাথে অস্ত্রের ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী।
তিনি প্রার্থী মার্শালসহ তার চার ভাইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘অবৈধভাবে অস্ত্র নিয়ে প্রচারণা ও শপথ করিয়ে ভোটারদের মাঝে টাকা বিতরণ করছে মার্শাল। তাদের ৪ ভাইয়ের নোংরামির বিষয়গুলো আমি লিখিতভাবে দলীয় সভানেত্রীকে জানিয়েছি।
তবে নিশ্চিত পরাজয় জেনেই উন্মাদের মতো আচরণ করেছেন মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী। এমনটাই দাবি করেছেন প্রতিদ্ব›িদ্ব প্রার্থী শাহীনুল হক মার্শাল।
তিনি বলেন, ‘আচরণবিধি আমি নই, আওয়ামী লীগ প্রার্থীই লঙ্ঘন করছেন। তার প্রচারণায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন সংসদ সদস্যরা।
তিনি বলেন, আমি যেহেতু সরকারকে আয়কর দিই, তাই সরকার আমাকে বন্দুকের লাইসেন্স দিয়েছে। ৯ উপজেলায় গিয়ে যেহেতু প্রচারণা চালাতে হচ্ছে তাই এটা আমার নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করছি। তিনি উল্টো অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী তাকে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করছেন।
ভোটে টাকার ছড়াছড়ির বিষয়টি স্বীকার করে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এস.এম. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমি ইতিমধ্যে কিছু অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্তদের মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। নির্দিষ্ট করে তথ্য দিয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।