রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৪:৪৩ পূর্বাহ্ন
রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ বেলা ২টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের সাড়ে তিন ঘণ্টা আগেই শুরু হয়ে গেছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠে এই সমাবেশ শুরু হয়।
বুধবার রাত থেকেই দলটির নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থল সংলগ্ন রাজশাহী কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে অবস্থান নেওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ের ৩ ঘণ্টা আগেই সমাবেশ শুরু করা হয়। গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় নেতাকর্মীদের গন্তব্যে ফেরার সুবিধার্থে দিনের আলোয় সমাবেশ শেষ করার ভাবনা থেকেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি বিএনপি নেতাকর্মীদের।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) রাতেই রাজশাহী পৌঁছেছেন ও সমাবেশস্থল পরিদর্শনসহ নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন তিনি। সমাবেশের সভাপতিত্ব করছেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা।
এদিকে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের বক্তৃতার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে সমাবেশের কার্যক্রম। স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন।
বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, অন্যান্য বিভাগীয় সমাবেশের মতো রাজশাহীর সমাবেশকে ঘিরেও দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে তাদের। চলমান বাস মালিকদের ডাকা পরিবহন ধর্মঘটের কারণে বুধবার থেকেই রাজশাহীতে আসতে শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা। আসার পথে নানা রকম বাধা ও হয়রানির দাবিও তাদের।
অনেকে নিরূপায় হয়ে অনেক লম্বা পথ হেঁটে আসতে বাধ্য হয়েছেন। দলবেঁধে নেতাকর্মীরা হেঁটে কিংবা মোটরসাইকেল নিয়েও এসেছেন। এছাড়া ট্রেন, অটোরিকশাসহ অন্যান্য ছোট যানবহনই ভরসা ছিল সমাবেশে অংশ নেওয়া রাজশাহী বিভাগের আট জেলার বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের।
সর্বোপরি বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা নিয়ে সমাবেশে এসেছেন নেতাকর্মীরা। ফলে শনিবার রাতেই রাজশাহীর সমাবেশ মাঠ সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠসহ আশপাশের এলাকা লোকজনে ভরপুর হয়ে যায়। শনিবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই মিছিলের ঢল নামে ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠে। বেলা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেন বাড়তে থাকে সমাবেশস্থলের লোকসংখ্যা।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা বলেন, এই সরকার তো আসলে গণতন্ত্রকে ভয় পায়। তারা গণতন্ত্রকে হরণ করেছে। এতকিছুর পরও রাজশাহীতে একটা সমাবেশ হচ্ছে। সব জায়গায় তারা দেখেছে যে অনেক বাধা দেওয়া সত্ত্বেও অনেক সাকসেসফুল সমাবেশ হয়েছে, অনেক লোক উপস্থিত হয়েছে। রাজশাহীতেও একই অবস্থা।
‘যার ফলে সমাবেশটা যেন বাধাগ্রস্ত হয়, লোকজন না আসে, সেই চেষ্টা তারা করছে। এটা সম্পূর্ণ অন্যায়, আমাদের চলার অধিকার আছে সেটাকে হরণ করে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। তবে পুলিশি বাধা এবং হয়রানি উপেক্ষা করেই লাখ লাখ নেতাকর্মী রাজশাহী শহরে প্রবেশ করেছেন। এরই মধ্যে অনেকেই রাজশাহী ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠের পাশে ঈদগাহ মাঠে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।’ বাধা দিয়ে হয়রানি করে বিএনপি নেতাকর্মীদের সমাগম ঠেকানো যাবে না বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছাড়াও নগরী ও জেলার প্রবেশ পথে চেকপোস্ট পরিচালনা করতে দেখা গেছে তাদের। পাশাপাশি জনজীবনে নিরাপত্তার স্বার্থে টহল টিমের কার্যক্রমও চলমান আছে বলে দাবি পুলিশের।
এ বিষয়ে শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখায়ের আলম বলেন, ‘বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আমাদের যে নিয়মিত চেকপোস্ট সেগুলোকে জোরদার করা হয়েছে। আমাদের প্রত্যেক থানা এরিয়ায় চেকপোস্ট রয়েছে, নিয়মিতই চেকপোস্ট কার্যক্রম চলে। সম্প্রতি সংখ্যাটা আরও বাড়ানো হয়েছে। সমাবেশকে ঘিরে কোথাও যেন বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয় সেজন্য তারা কাজ করছে। এছাড়াও যেন কোনো নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড না হয় সেজন্য জনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে টহল টিম তাদের কাজ অব্যাহত রেখেছে।’
চেকপোস্টের নামে হয়রানি করা হচ্ছে বিএনপির এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘তাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। চেকপোস্টে গাড়ির কাগজপত্র চেকিং তো নিয়মিত কাজ। সেটাই সঠিকভাবে করছি।’
সমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা রাত্রিযাপনের যাবতীয় প্রস্তুতিসহ এনেছেন খাবার তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণও। আলু, চাল-ডাল, সবজি ও ডিমসহ অনেক খাদ্যদ্রব্যই এনেছেন তারা। এমনকি গ্যাসের সিলিন্ডার কিংবা চুলাও এনেছেন আগতরা। খাবার সংকটের কথা চিন্তা করে কেউ কেউ বাড়ি থেকে কলা, রুটি, চিড়া-মুড়ি নিয়ে এসেছেন সমাবেশস্থলে।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) থেকে ১০ দফা দাবি আদায়ে বিভাগীয় পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু করেছে রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায়। এই ধর্মঘটের কারণে বুধবার থেকেই বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা নগরীর আবাসিক হোটেল, কমিউনিটি সেন্টার, নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়ির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ সমাবেশস্থলে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। গান-বাজনা আর স্লোগানে তারা মুখরিত করে রেখেছেন পুরো এলাকা।